জাতীয় নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রের আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থার (ইউআইডিএআই) সঙ্গে মিলে ‘ভোট চুরি’ করছে বলে অভিযোগ তুলল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই প্রেক্ষিতে আধার কর্তৃপক্ষের দেওয়া জবাবকে হাতিয়ার করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে। তাঁর প্রশ্ন, আধার কর্তৃপক্ষের কাছে যখন রাজ্য-ভিত্তিক তথ্য নেই, তখন পশ্চিমবঙ্গে কত সংখ্যক আধার ‘নিষ্ক্রিয়’, তা কী ভাবে জানা গেল। যদিও আধার কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্যের থেকেই তথ্য মিলেছে। আর বিজেপি সূত্রে বক্তব্য, ২০২৪-এর পরে আধার সংক্রান্ত নানা নিয়ম বদলেছে। পাশাপাশি, ‘মৃত ভোটারদের’ উপরে তৃণমূল কেন এত ভরসা করছে, সে প্রশ্নও তুলেছে তারা।
সাকেতের রাজ্যসভায় করা একটি প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে আধার কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, রাজ্য, বছর এবং কারণ-ভিত্তিক ‘নিষ্ক্রিয়’ আধারের তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে ৩০-৩২ লক্ষ আধার ‘নিষ্ক্রিয়’ বা মৃত্যুজনিত কারণে ‘নিষ্ক্রিয়’, তা আধার কর্তৃপক্ষ কী ভাবে জানলেন, বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন তুলেছেন সাকেত। প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার আবহে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে ৩৩-৩৪ লক্ষ মৃত ব্যক্তির আধার নম্বর কমিশনকে আধার কর্তৃপক্ষ দিয়েছিলেন বলে কয়েকটি সূত্রের দাবি।
যদিও কমিশন সূত্রে বক্তব্য, আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে মৃত্যুর তথ্য পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কোনও সংখ্যা বা তথ্য নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি। তা ছাড়া কমিশন সূত্রের মতে, আধার নিয়ন্ত্রক বা যে কোনও সংস্থার থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুর তথ্য পাওয়া মাত্রই ভোটার তালিকায় নাম বাদ যাবে, এমনটা নয়। মৃত্যুর তথ্য পেলে তা পুনর্যাচাই করা হবে। কোনও ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলও সে তথ্য দিলে তা যাচাই করা হবে আগে। তা ছাড়া আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী নাম বাদ তো দিতে বলেনি!
সাকেতের প্রশ্ন প্রসঙ্গে আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থাও পাল্টা জানিয়েছে, এই বছরের জুলাইয়ে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর তাদের ৩৩.৪ লক্ষ মৃত ব্যক্তির তথ্য আধার নম্বর-সহ জানিয়েছিল। পাশাপাশি, গত অগস্টে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ দফতর প্রায় ১৫ লক্ষ মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের দেওয়া মৃত্যু-তথ্যের ভিত্তিতে এবং যাচাইয়ের পরে ৩২.৮ লক্ষ আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। রাজ্যের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই সংখ্যা মিলেছে।
এ দিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বুথ লেভল এজেন্টরা (বিএলএ) প্রতি দিন ৫০টি গণনা-পত্র জমা দিতে পারবেন বলে কমিশন যে নির্দেশ দিয়েছে, তার বিরোধিতায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে (সিইও) চিঠি লিখে সরব হয়েছে সিপিএম। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “এর ফলে এসআইআর-প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা বিপন্ন হচ্ছে। বিএলএ-রা ফর্ম জমা দিতে পারলে, বিএলও-দের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে যাচাই করার বাধ্যতামূলক দায়িত্বের যুক্তি থাকে না। এই সিদ্ধান্ত এমন ফাঁক তৈরি করছে, যা শাসক দল অপব্যবহার করতে পারে।” রাজ্য জুড়ে মৃত, নিখোঁজ, স্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিতদের জন্য বরাদ্দ গণনা-পত্র শাসক দল অপব্যবহার করছে বলেও সিপিএমের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, কিছু এলাকায় ইআরও-রা নিজেরাই গণনা-পত্র ‘আপলোড’ করার ক্ষমতা চাইছেন, যা মেনে নিলে এসআইআর-প্রক্রিয়া প্রহসনে পরিণত হতে পারে। ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ এসআইআর-এর বিরুদ্ধে এ দিন দক্ষিণ কলকাতায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)