Advertisement
E-Paper

অন্তর্দ্বন্দ্বে রাশ টানতে রদবদল শুরু সংগঠনে

নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরে এ বার দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে রাশ টানাই যে তাঁর প্রধান লক্ষ্য, ফের তা বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন মন্ত্রিসভা গড়ার আগেই সাংগঠনিক রদবদলও শুরু করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। আর তা থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব বাড়ার ইঙ্গিত মিলল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৪:০১

নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরে এ বার দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বে রাশ টানাই যে তাঁর প্রধান লক্ষ্য, ফের তা বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন মন্ত্রিসভা গড়ার আগেই সাংগঠনিক রদবদলও শুরু করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। আর তা থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব বাড়ার ইঙ্গিত মিলল।

একা লড়ে ২১১টি আসন জেতার পরেও তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, অন্তর্দ্বন্দ্বে কিছু আসন হাতছাড়া হয়েছে। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুসন্ধান কমিটি তৈরি করেছেন মমতা। সুব্রত বক্সী, মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখকে ওই কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

দলের শাখা সংগঠনগুলির পাশাপাশি জেলার দায়িত্বে থাকা নেতা-নেত্রী এবং সাংসদদের নিয়ে কালীঘাটে বুধবার বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। তৃণমূল সূত্রের খবর, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর বা দার্জিলিঙে দলের ফল আশানুরূপ না হওয়ার পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে বলে বৈঠকে নিজেই মন্তব্য করেছেন মমতা। হেরে যাওয়া কেন্দ্রগুলির অধিকাংশ প্রার্থীই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই মমতা জানিয়েছেন, ওই আসনগুলিতে কোথায় কারা কী ভাবে দলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তা তাঁর অজানা নয়! তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েই মমতা অনুসন্ধান কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

গত পাঁচ বছর তৃণমূলকে বারবার ভুগিয়েছে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কাঁটা। তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, দুর্নীতি, অপশাসনের অভিযোগ এবং বিরোধী জোটের মোকাবিলা করে এ বার বিধানসভা ভোটে বিরাট সাফল্য পাওয়ার পরে দলের অন্দরের সমস্যা নানা জায়গায় নতুন চেহারা নেওয়ার আশঙ্কা প্রভূত। সেই জন্যই এ বার গোড়া থেকে অন্তর্দ্বন্দ্বের ভূত মমতা ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন বলে ওই সূত্রের বক্তব্য। তাঁর নবগঠিত কমিটির রিপোর্ট আসার আগেই অবশ্য এ দিনের বৈঠকে মমতা নদিয়ার জেলা সভাধিপতি বাণীকুমার রায় এবং রানাঘাট-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তাপস ঘোষকে অপসারণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। নদিয়ার নতুন জেলা সভাধিপতি করেছেন জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ দীপক বসুকে। একই ভাবে ভোটে দলীয় প্রার্থীকে হারানোর পিছনে ‘মদতে’র অভিযোগে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাধিপতি ললিতা টিগ্গাকেও পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা।

শুধু যে স্থানীয় স্তরে সংগঠনে রদবদল হয়েছে, তা নয়। নদিয়ায় দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর জায়গায় এ বার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুলকে। মুকুলের পরামর্শ নিয়েই অভিষেককে নদিয়ায় সংগঠন দেখভাল করতে বলা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। সরকারে প্রথম ইনিংসে দলের অন্দরে মুকুলের সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্ক যে খুব মসৃণ ছিল না, তা জেনেই এ বার তাকে স্বাভাবিক করতে সক্রিয় হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মালদহে একটিও আসন না পাওয়ায় ওই জেলার নেতৃত্বেও বড় রদবদল আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। মালদহের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সঙ্গে এখন থেকে দলনেত্রী নিজেই ওই জেলার ব্যাপারে খোঁজখবর রাখবেন বলে বৈঠকে জানিয়েছেন।

পাহাড়ে ফল আশানুরূপ না হওয়ায় সেখানে সংগঠনের কাজে আরও গুরুত্ব দিতে জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসকে পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। ভোটের সময় বর্ধমানে দলে তাঁর বিরোধী শিবিরের প্রার্থীদের হারাতে ‘সক্রিয়তা’র অভিযোগ উঠেছিল বর্ধমানের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের বিরুদ্ধে। সে ঘটনায় ‘ক্ষুণ্ণ’ মমতা স্বপনবাবুকে সতর্ক করে বলেছেন, কেউ শুধু নিজে জিততে আর অন্যকে হারাতে চেষ্টা করবে, তা তিনি বরদাস্ত করবেন না!

সার্বিক ভাবে তৃণমূলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার বার্তা দিতে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকেও ফের নিজেদের ‘অন্তর্কলহ’ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। উত্তর ২৪ পরগনায় সন্তোজনক ফল হলেও এই দু’জনের ‘সংঘাত’ তৃণমূলকে বারবার বিড়ম্বনায় ফেলেছে। সিন্ডিকেট নিয়ে দু’জনের দ্বন্দ্বের মীমাংসা হয়নি। ঘটনাচক্রে, এ দিনই সিন্ডিকেট ঘিরে নিউটাউনে গুলি চলার অভিযোগ উঠেছে। মমতা এ দিনের বৈঠকে স্পষ্ট বলেছেন, কলকাতায় মেয়র যদি সবাইকে নিয়ে চলতে পারেন, সব্যসাচীরাই বা পারবেন না কেন! কাকলি-সব্যসাচীর ঝগড়া আর তিনি সহ্য করবেন না বলে সতর্ক করেছেন।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন...

ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রকে যুব সংগঠনে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জয়া দত্তকে। তৃণমূলের অন্দরে অশোকের পরিচিতি পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসাবেই। শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় রাশ টানতেই অশোককে পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে দলের একাংশের ধারণা। নরেশ বাউড়ির বদলে বীরভূমের নয়া যুব সভাপতি করা হয়েছে নানুরে পরাজিত গদাধর হাজরাকে। নারদ-কাণ্ডে ভাইচুং ভুটিয়ার মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক বেড়েছিল। নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া প্রকাশ্যে তাঁকেও কোনও মন্তব্য না করতে পরামর্শ দিয়েছেন মমতা।

নেতাদের নিয়ে আরও এক প্রস্ত আলোচনা করতে এ দিন তৃণমূল ভবনে যান মমতা। সেখানে ছিলেন সুদীপ, শোভন, সুব্রত বক্সী, মুকুল ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১৮ জুন নেতাজি ইন্ডোরে কর্মশালা করার কথা মমতার।

tmc internal conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy