Advertisement
E-Paper

ভাঙড়ে সভা করেও উদ্বেগে থাকল শাসক

গুলিচালনার ঘটনা এবং দুই স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যুর এক মাস পরে ভাঙড়ে রাজনৈতিক সমাবেশ করল তৃণমূল। কিন্তু পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী গ্রামগুলি থেকে শাসক দলের ডাকে সাড়া দিতে এলেন না তেমন কেউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৪
ভাঙড়ের সভায় শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: সামসুল হুদা।

ভাঙড়ের সভায় শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: সামসুল হুদা।

গুলিচালনার ঘটনা এবং দুই স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যুর এক মাস পরে ভাঙড়ে রাজনৈতিক সমাবেশ করল তৃণমূল। কিন্তু পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী গ্রামগুলি থেকে শাসক দলের ডাকে সাড়া দিতে এলেন না তেমন কেউ। আন্দোলনের এলাকা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শ্যামনগর স্কুল মাঠে বৃহস্পতিবারের সমাবেশে তেমন ভিড়ও হল না। ফলে, ভাঙড়ে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে সভা করলেও শাসক দলের নেতৃত্ব টের পেলেন, তাঁদের জন্য সেখানে মাটি এখনও তৈরি নয়।

পরিকল্পিত ভাবেই এই সভার দায়িত্বে রাখা হয়নি ভাঙড়ের বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা ও প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে। মন্ত্রী রেজ্জাক এ দিন ছিলেন বিধানসভায়। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যার পাঁঠা, সে ল্যাজে কাটবে না মু়ড়োয়, তার ব্যাপার!’’ আর আরাবুলের বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখলের অভিযোগ আছে ভাঙড়ে। দলের সভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী এ দিন বলেছেন, ‘‘কোনও নেতা যদি দল-বিরোধী কার্কলাপ করেন, তা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তৃণমূলের একাংশের মতে, ভাঙড়ের ক্ষতে প্রলেপ দিতে আরাবুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিই ইঙ্গিত করেছেন সুব্রতবাবু।

শ্যামনগরের সভায় জনসমাগমের তদারকিতে সকাল থেকেই ঘাঁটি গেড়ে পড়েছিলেন ভাঙড়-১ ব্লকের নেতা তৃণমূল কাইজার আহমেদ। সভায় লোক আনতে তিনি চেষ্টায় খামতি রাখেননি। তবে আন্দোলনের গ্রাম মাছিভাঙা, খামারআইট, ডবডবি, বকডবা, নতুনহাট থেকে অল্পসংখ্যক লোক মিছিল ছাড়া মোটরভ্যানে চেপে নিজেরাই সভায় এসেছিলেন বলে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের বক্তব্য। যে কারণে তাঁদের একাংশ হতাশও। মিছিলে আগতদের জন্য বিরিয়ানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল বলে আবার দাবি করেছেন সংগঠকদের একাংশ। তবে কাইজারের বক্তব্য,‘‘সমর্থকেরা নিজেরাই বিরিয়ানি নিয়ে এসে সভাস্থলে খেয়েছেন। দলের তরফ থেকে কিছুই দেওয়া হয়নি।’’

সমাবেশে বক্সী, মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমেরা দাবি করেছেন, ২০১৩ সালে পাওয়ার গ্রিডের জন্য গ্রামবাসীদের সম্মতি নিয়েই জমি নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি কিছু ‘বহিরাগত’ ভাঙড়ে গ্রামবাসীদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুলবাবু বলেন, ‘‘সম্মতি নিয়েই পাওয়ার গ্রিডের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এখন মানুষ যা চাইবে, তা-ই হবে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শোভনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে উন্নয়ন করছেন। ভাঙড়ের মানুষ না চাইলে পাওয়ার গ্রিড হবে না বলে তিনিও বলেছেন। তাই সব কিছু ভাঙড়বাসীর উপরেই নির্ভর করছে।’’ ফিরহাদ ভাঙড়ের মানুষকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘কৃষিজমিতে আবাসন তৈরি করতে দেওয়া হবে না।’’

শাসক দল সূত্রের খবর, তৃণমূল ভবনে ভাঙড়ের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছিল কয়েক দিন আগে। ভাঙড়ে রাজনৈতিক জমি ফেরাতে আন্দোলনের এলাকায় সভা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সাফ জানিয়ে দেন স্থানীয় নেতাদের। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘সম্প্রতি ভাঙড়-২ এলাকায় বিরোধী ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশে ভিড় উপচে পড়েছে। সেই তুলনায় আমরা ওই এলাকা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি বলে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব বুঝেই ভাঙড়-২ ব্লকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ ফের শুরু করতে নেমেছে তৃণমূল। কিন্তু তার সূচনায় উদ্বেগের কাঁটা পুরোপুরি উপড়ে ফেলা গেল না এ দিন।

Bhangar TMC Rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy