Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কলেজ থেকে সরিয়ে ‘শাস্তি’ আরাবুলকে

সরকার শপথ নেওয়ার পরই আরাবুল ইসলামের ডানা ছাঁটা শুরু হয়ে গেল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে পাকাপাকি ভাবে সরিয়ে দেওয়া হবে আরাবুলকে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘ওই কলেজ থেকে তাজা নেতার বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৮:৩৫
Share: Save:

সরকার শপথ নেওয়ার পরই আরাবুল ইসলামের ডানা ছাঁটা শুরু হয়ে গেল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে পাকাপাকি ভাবে সরিয়ে দেওয়া হবে আরাবুলকে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘ওই কলেজ থেকে তাজা নেতার বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’

গত পাঁচ বছর আরাবুলকে নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে এক শিক্ষিকাকে জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় রাজ্য-রাজনীতিতে তোলপাড় পড়ে যায়। তার পরেও এত দিন ওই পদে বহাল ছিলেন আরাবুল। দলের একাংশের বক্তব্য, ওই সময় মাথার উপর দু’এক জন শীর্ষ নেতার হাত থাকায় আরাবুলকে কেউ ছুঁতে পারেনি। শুধু ওই কলেজ নয়, আদতে ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হয়েও গোটা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। এ জন্য কয়েক বার অস্বস্তিতেও পড়তে হয়েছে শাসক দলকে।

সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ আরাবুলেরই এখন রীতিমতো অস্তিত্ব-সঙ্কট। দলের কাছে অভিযোগ ছিল, বিধানসভা ভোটে ভাঙড় কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে হারাতে আদাজল খেয়ে নেমেছিলেন তিনি। ভোটের দিন আরাবুল বাড়ি থেকে বিশেষ বার হননি। আরাবুলের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার পরেই এ বার ‘শাস্তি’ পেতে চলেছেন আরাবুল।

ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন ১৩ জন। এতে থাকার কথা চার জন শিক্ষক, দু’জন শিক্ষাকর্মী, কলেজের অধ্যক্ষ ও এক জন ছাত্র প্রতিনিধি, সরকার মনোনীত দু’জন সদস্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত দু’জন সদস্য এবং পদাধিকার বলে ভাঙড়-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন আরাবুল। ভাঙড় কলেজ সূত্রের খবর, ২০০৬ সালে বিধায়ক হওয়ার পর থেকে কার্যত গায়ের জোরে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হন আরাবুল। ২০১১ সালে বিধায়ক পদ খোয়ালেও কলেজ-সভাপতির পদ তিনি আঁকড়ে রাখেন।

কলেজের এক সূত্র জানান, ভাঙড় কলেজ এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত। সেই হিসেবে এক নম্বরের নির্বাচিত সভাপতিরই কলেজ পরিচালন সমিতিতে থাকা উচিত। কিন্তু ছিলেন ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল। তা-ও আবার সমিতির সভাপতি পদে।

ভাঙড় কলেজ সূত্রের খবর, পরিচালন সমিতির মেয়াদ জানুযারি মাসে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন থাকায় তিন দফায় তার মেয়াদ সম্প্রসারণ করা হয়। ভোট মিটতেই এখন নতুন পরিচালন সমিতি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বার নিয়ম মেনে ভাঙড়-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনসূয়া নস্করের নাম পরিচালন সমিতিতে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের দুই মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে ভাঙড়-১ এলাকা থেকে জেলা পরিষদের সদস্য কাইজার আহমেদ এবং ভাঙড়-২ এলাকার তৃণমূল নেতা মইদুল ইসলামের নাম শিক্ষা দফতরের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘নির্বাচনে আরাবুলের মোকাবিলায় এই দু’জন আগাগোড়া রেজ্জাকের পাশে ছিলেন। তারই পুরস্কার পেতে পারেন কাইজার ও মইদুল।’’

পায়ের তলায় মাটি যে সরে যাচ্ছে, তা বুঝতে পারছেন আরাবুলও। তাই দলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অন্তত প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ। বরং তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল যা মনে করবে তাই হবে। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’ আর আরাবুলকে সরানোর মূল কুশীলব রেজ্জাক বলছেন, ‘‘এখানে ডানা ছাঁটার কোনও বিষয় নয়। নিয়ম মেনে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কলেজ পরিচালন সমিতি গঠন হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arabul Islam TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE