Advertisement
২২ মে ২০২৪

ডাক্তারদেরও প্রচারে নামিয়ে দিল তৃণমূল

রাজনৈতিক বিরোধিতা ছিলই। তার সঙ্গে এ বার যোগ হলো প্রশাসনিক স্তরে সমালোচনা। নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হলেন রাজ্যের সিংহভাগ সরকারি চিকিৎসক।

রোগী দেখার ফাঁকেই আরজি করের আউটডোরে চলছে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কাজ। রয়েছেন চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল (বাঁ দিকে) এবং অন্য চিকিৎসকরা।— নিজস্ব চিত্র

রোগী দেখার ফাঁকেই আরজি করের আউটডোরে চলছে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কাজ। রয়েছেন চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল (বাঁ দিকে) এবং অন্য চিকিৎসকরা।— নিজস্ব চিত্র

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
Share: Save:

রাজনৈতিক বিরোধিতা ছিলই। তার সঙ্গে এ বার যোগ হলো প্রশাসনিক স্তরে সমালোচনা। নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হলেন রাজ্যের সিংহভাগ সরকারি চিকিৎসক।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কাজে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান। এ বার সেই কাজে সরকারি চিকিৎসকদের নেমে পড়ার ডাক দিল তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা পিডিএ। প্রায় সাত হাজার চিকিৎসক (সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে) এই সংস্থার সদস্য। সংগঠনের তরফে সরকারি হাসপাতালের আউটডোর ও ইন্ডোরে এই প্রচারাভিযান চালানোর ফরমান জারি হয়েছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসকরা নিজেদের চেম্বারেও যাতে এই প্রচার চালান, সে কথাও বলেছে পিডিএ। গত রবিবার তৃণমূল ভবনে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কেন? ‘‘তৃণমূলের সকলেই যে-যেমন পারছেন, এ ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলছেন। চিকিৎসকেরাই বা বাদ যাবেন কেন,’’ মন্তব্য দলের সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের।

কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কী ভাবে রাজনৈতিক প্রচার চালাতে পারেন? নিয়োগ বিধির মূল কথা হলো, এক জন সরকারি চাকুরে কখনওই কোনও সরকারি অবস্থানের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। তা সে রাজ্য সরকার হোক, বা কেন্দ্রীয় সরকার।

তা হলে? নিয়োগ বিধির এই তত্ত্ব মানতে নারাজ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফাই, ‘‘কোন চিকিৎসক রোগী দেখতে দেখতে কী বলবেন, তা নিয়োগ বিধিতে লেখা নেই।’’ পিডিএ-র নেতা শান্তনু সেেনরও দাবি, ‘‘এর সঙ্গে নিয়োগ বিধির সম্পর্ক নেই। কোনও একটা সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা নাগরিক হিসেবে চিকিৎসকেরও কর্তব্য। যেমন ধূমপান বা প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়। এটাও খানিকটা তাই।’’

সোমবার থেকেই হাসপাতালগুলোতে প্রচারে নেমে পড়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ। পিডিএ-র রাজ্য সম্পাদক সাক্ষীগোপাল সাহা জানান, তিনি নিজে এবং সংগঠনের প্রায় সকলেই এ দিন প্রচার করেছেন। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে গিয়ে দেখা গেল, প্রচার চালাচ্ছেন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল। তাঁর সঙ্গে থার্ড ইয়ারের পিজিটি স্বাতী কুমার আর সেকেন্ড ইয়ারের পিজিটি শুভদীপ গুপ্ত। সকলে মিলে ‘নোট বাতিলের কুফল’ সম্বন্ধে বোঝাচ্ছেন রোগীদের। রোগীকে পরীক্ষা করে ওষুধ লিখতে লিখতেই তাঁরা জানতে চাইছেন, নোট বাতিল হওয়ায় কতটা সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।

পেটের রোগ নিয়ে আরজি করে এসেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা অঞ্চলের কৃষক আসাদুর মণ্ডল। তিনি বললেন, ‘‘খুব অসুবিধেয় পড়েছি ডাক্তারবাবু। ধান বিক্রি করে হাতে-হাতে পয়সা মিলছে না, ক্ষেতে মজুরি করার পর পাওনা টাকা বাকি পড়েছে ১৫ দিনের। কেউ টাকা দিতে পারছে না।’’ সঙ্গে-সঙ্গে ডাক্তারবাবুরা উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘‘সবাইকে বোঝান। সবাই মিলে জোরদার প্রতিবাদ হলে মোদী সরকার সিদ্ধান্ত ফেরাতে বাধ্য হবে।’’

শাসক দলের এই সিদ্ধান্তে বামপন্থী সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’ সে ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়নি। তবে তাঁদেরও একাংশের কথায়, ‘‘ডাক্তাররা দেশের নাগরিক। ফলে এ রকম কর্মসূচি তাঁরা নিতেই পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE