Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বন্যা ঠেকাতে বাড়তি জল ধরে রাখবে ডিভিসি

প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার মরসুমে বা আগে-পরে বন্যা এবং তার কারণ নিয়ে দোষারোপের পালা শুরু হয়ে যায়। সেই টানাপড়েনের মোকাবিলায় এ বার বর্ষায় প্রয়োজন হলে মাইথন আর পাঞ্চেত জলাধারে বাড়তি জল ধরে রাখবে ডিভিসি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার মরসুমে বা আগে-পরে বন্যা এবং তার কারণ নিয়ে দোষারোপের পালা শুরু হয়ে যায়। সেই টানাপড়েনের মোকাবিলায় এ বার বর্ষায় প্রয়োজন হলে মাইথন আর পাঞ্চেত জলাধারে বাড়তি জল ধরে রাখবে ডিভিসি। মাইথনে অতিরিক্ত পাঁচ ফুট এবং পাঞ্চেতে ১০ ফুট জল ধরে রাখার সিদ্ধান্তের কথা শুক্রবার জানান ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ।

মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারে যথাক্রমে এক লক্ষ ৮২ হাজার ৫৬০ একর ফুট এবং দু’লক্ষ ৫৬ হাজার ২৫০ একর ফুট অতিরিক্ত জল রাখা সম্ভব হবে বলে জানান ডিভিসি-র চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু ল্যাংস্টি। তিনি জানান, রাজ্যে ফি-বছরের বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই তাঁরা বাড়তি জল ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মাইথন জলাধারের গভীরতা ৪৯৫ ফুট। ঠিক হয়েছে বর্ষায় প্রয়োজন হলে সেখানে ৫০০ ফুট পর্যন্ত জল আটকে রাখা হবে। পাঞ্চেত জলাধারের গভীরতা প্রায় ৪২৫ ফুট। ওই জলাধারে পাঁচ লক্ষ পাঁচ হাজার ১৬০ একর ফুট পর্যন্ত জল ধরে রাখা যায়। এ বছর প্রয়োজন হলে আরও ১০ ফুট জল রাখা হবে।

ভরা বর্ষায় বাঁধের জল ছাড়া নিয়ে কয়েক বছর ধরেই ডিভিসি-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চাপান-উতোর চলছে। বিশেষ করে গত বছর অগস্টে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা-পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সরকার সরাসরি ডিভিসি-কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছিল।

ডিভিসি-র কর্তারা অবশ্য বরাবরই জানিয়ে আসছেন, তাঁরা কখনওই খেয়ালখুশি মতো জল ছাড়েন না। জলাধারগুলি থেকে কখন ঠিক কতটা জল ছাড়া হবে, তা স্থির করে দেয় কমিশন। রাজ্যের পাল্টা অভিযোগ, ডিভিসি-র জলাধারগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না-হওয়ায় মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধের জল ধারণের ক্ষমতাই কমে গিয়েছে।

এই বিতর্ক এড়াতে এ বছর বর্ষা আসার আগেই ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি শুরু করে দেন। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁদের গোটা পাঁচেক বৈঠক হয়ে গিয়েছে। গত মাসে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান নিজে বৈঠক করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

তা হলে কি রাজ্যের চাপেই বেশি জল ধরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে? ডিভিসি-প্রধান অবশ্য তা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, বন্যা-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাই ডিভিসি-র প্রধান কাজ। সেই দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। ল্যাংস্টি বলেন, ‘‘মাইথন ও পাঞ্চেতে অতিরিক্ত জল ধরে রাখার জন্য জলাধারের আশপাশের
এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ৭২ ঘণ্টার বেশি জল জমে থাকলে নিয়ম অনুযায়ী গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। প্রয়োজন হলে আমরা তা-ও দেবো।’’

ডিভিসি-র এক কর্তা জানান, আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, সেপ্টেম্বরে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। তবে গত বছর অগস্টের পর থেকে রাজ্যে ভারী বৃষ্টি হয়নি। তাই বাঁধগুলিতে এখনও অনেক জল ধরে রাখা যাবে। ‘‘সেপ্টেম্বরে টানা ভারী বর্ষণ হলেও জল ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়,’’ আশ্বাস দিয়েছেন ওই ডিভিসি-কর্তা।

জল ছাড়ার বিষয়ে এ বছর ডিভিসি তাদের ওয়েবসাইটে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করছে। কখন, কত জল ছাড়া হচ্ছে এবং সেই জল কখন কোথায় পৌঁছতে পারে, ওয়েবসাইটে তা পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হবে। যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন সময়মতো সেটা জেনে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা-ব্যবস্থা নিতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

DVC Flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE