Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আজ শান্তিনিকেতনে শীর্ষ আধিকারিকেরা
Shantiniketan

রাস্তার ‘দখল নিতে’ যাচ্ছেন জেলাশাসক

বৃহস্পতিবার থেকেই শান্তিনিকেতন দূরদর্শনের কাছে ফের একটি পাঁচিল তোলার কাজ শুরু করছে বিশ্বভারতী।

এই সেই রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।

এই সেই রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।

বাসুদেব ঘোষ 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:১৫
Share: Save:

বিশ্বভারতীর কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়া রাস্তার ‘পজেশন’ অর্থাৎ দখল নিতে বছরের প্রথম দিনই শান্তিনিকেতনে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা।

জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘উপাসনাগৃহ থেকে কালীসায়র মোড় পর্যন্ত রাস্তা বিশ্বভারতীর কাছ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার সকালেই আমি ও জেলা পুলিশ সুপার শান্তিনিকেতন যাচ্ছি রাস্তার পজেশন নিতে।’’ জেলাশাসকের সংযোজন, ‘‘এবার থেকে এই রাস্তার দায়িত্বে পিডব্লুউডি। তাদের চিঠি পেয়েছি। বিশ্বভারতীর সঙ্গেও কথা বলব। এ বার থেকে আশ্রমিক বা বোলপুরবাসীর চলাফেরায় আর সমস্যা থাকবে না। পুলিশের চেকপোস্টও বসবে।’’

সোমবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই ওই রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়া ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মাঝেমধ্যেই বিশ্বভারতী ওই রাস্তা বন্ধ করে দিত বলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল আশ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষকে। তাঁদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সমস্যার কথা জানানো হয়। তারই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ওই সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘোষণায় খুশি হয়েছিলেন আশ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই। সেটা নিশ্চিত করতেই প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা বছরের প্রথম দিন সেখানে যাচ্ছেন।

নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, অবাঞ্চিতদের প্রবেশ ও যান নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সাল থেকেই শান্তিনিকেন থেকে শ্রীনিকেতন সংযোগকারী প্রায় তিন কিলোমিটার ওই রাস্তা রাজ্য সরকারের পূর্ত সড়কের থেকে নিজেদের দায়িত্বে নেওয়ার জন্য আবেদন করে বিশ্বভারতী। ২০১৭ সালে বিশ্বভারতীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্তের সময়কালে ওই রাস্তা বিশ্বভারতীকে হাতে তুলে দেয় রাজ্য সরকার। ওই রাস্তার মধ্যে সঙ্গীতভবন থেকে কাচমন্দির, ছাতিমতলা, রবীন্দ্রভবন মিউজিয়াম ও অন্য ঐতিহাসিক নির্মাণ রয়েছে। রয়েছে রামকিঙ্কর বেইজের বেশ কিছু অমূল্য ভাষ্কর্য। কিন্তু, ওই রাস্তায় সর্বক্ষণের জন্য মালবাহী যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না।

তবে এইটুকু অংশে যান নিয়ন্ত্রণে আপত্তি আগেও ছিল না। এখনও নেই। কিন্তু অন্য অংশেও যান নিয়ন্ত্রণ ও হুটহাট বন্ধ করে দেওয়ায় আপত্তি উঠে। সমস্যার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। বিশ্বভারতী হঠাৎ পোস্টার সেঁটে জানিয়ে দেয় শিক্ষাভবন মোড় থেকেই (যেটি সংরক্ষিত এলাকা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে) মালবাহী যান চালাচল নিষিদ্ধ। অমর্ত্য সেন, ক্ষিতিমোহন সেন, নন্দলাল বসু, গৌরী ভঞ্জ, শান্তিদেব ঘোষ-সহ বহু বিশিষ্ট আশ্রমিকের বাসভবন এই রাস্তার দু’ধারেই। আশ্রমিকদের অভিযোগ, বর্তমান উপাচার্যের সময়ে যখন তখন রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত রকম মালবাহী গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ করায় অসুবিধার মুখে পড়েছেন। তাঁদের বিকল্প পথও নেই। সমস্যায় পড়েছিলেন বোলপুরের মানুষও। এই অভিযোগ সামনে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী পদক্ষেপ করেন।

যদিও রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত খুশি করেনি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। আড়ালে তাঁদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কয়েক জনের সুবিধার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুবিধা সৃষ্টি করা ঠিক হল না।’’ তবে এখানেই না থেমে বিশ্বভারতীর যত্রতত্র পাঁচিল নির্মাণ কতটা আইন মেনে হয়েছে, তা দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সোমবারের প্রশাসনিক বৈঠকে থেকেই মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, কোনও অভিযোগ না থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকেই শান্তিনিকেতন দূরদর্শনের কাছে ফের একটি পাঁচিল তোলার কাজ শুরু করছে বিশ্বভারতী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shantiniketan Visva Bharti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE