Advertisement
E-Paper

সকলে তবু বাঁচলেন না, আক্ষেপ ওঁদের

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ভাবেই সাঁতরাগাছি ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে থাকা টোটোচালকদের দেখা গিয়েছিল ত্রাতার ভূমিকায়। বুধবার টোটোস্ট্যান্ডে ফিরে নিজেদের সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন ওই চালকেরাই।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৮
ত্রাতা: ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসা টোটোচালকেরা। বুধবার, সাঁতরাগাছিতে। নিজস্ব চিত্র

ত্রাতা: ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসা টোটোচালকেরা। বুধবার, সাঁতরাগাছিতে। নিজস্ব চিত্র

সাঁতরাগাছি স্টেশনে ভিড় বেশি হওয়ায় প্ল্যাটফর্মের কাছেই টোটো নিয়ে হাজির হয়ে হাঁকডাক শুরু করেছিলেন চালকেরা। সেই হইচইয়ের মধ্যেই হঠাৎ তাঁদের কানে ভেসে আসে আর্তনাদ। ততক্ষণে প্ল্যাটফর্মে ভিড়ে পদপিষ্ট হয়েছেন বেশ কয়েক জন। দূর থেকে তাঁরা দেখতে পান, মাটিতে পড়ে থাকা মানুষদের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে ভিড়। এই অবস্থায় আর যাত্রী ভাড়ার মায়া না করে পুলিশের পাশাপাশি তাঁরাও নেমে পড়েন উদ্ধারকাজে। জনা দশেক টোটোচালক প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভিড় ঠেলে পৌঁছে যান আহতদের কাছে। রক্তাক্ত, জ্ঞান হারানো বহু মানুষকে কোলে তুলে নিয়ে পৌঁছে দেন হাসপাতালে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ভাবেই সাঁতরাগাছি ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে থাকা টোটোচালকদের দেখা গিয়েছিল ত্রাতার ভূমিকায়। বুধবার টোটোস্ট্যান্ডে ফিরে নিজেদের সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন ওই চালকেরাই। দেবব্রত সাহা ওরফে কালা নামে এক টোটোচালক জানান, ঘটনার সন্ধ্যায় তাঁরা দেখেন ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ফুটব্রিজের সিঁড়ি থেকে গোটা অংশ ভিড়ে থিক থিক করছে। কিছু জিআরপি-র দেখা মিললেও আরপিএফ ছিলই না। তাঁরাই ভিড় ঠেলে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ফুটব্রিজে ওঠেন।

ওই চালক জানান, কেউ কেউ চিত হয়ে আর কয়েক জন মুখ উল্টে পড়ে ছিলেন। বহু মানুষের পায়ের চাপে তাঁদের মুখ কালো হয়ে গিয়েছিল। এ ভাবে চাপা পড়ে থাকা
মানুষগুলিকে একে একে সরিয়ে আনা হয়। তখনও হুড়মুড়িয়ে লোকাল ট্রেনে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ কিছু যাত্রী। এক কাঁধে আহতদের তুলে নিয়ে কোনও ভাবে সিঁড়ি থেকে নেমে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে থাকা টোটোয় তুলে নেন ওঁরা। দেবব্রতের কথায়, ‘‘সেই দৃশ্য ভাবলে এখনও কেমন লাগছে। চোখের সামনে শিশুরা পড়ে রয়েছে। মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। কোনও সাড়া শব্দ নেই। কারও আবার অনর্গল বমি হয়ে যাচ্ছিল। কেউ কেউ শ্বাস নিতে পারছিলেন না। তাঁদের কাউকে কোলে কাউকে, কাঁধে তুলে দৌড়ে টোটোতে তুলে হেল্‌থ সেন্টারে নিয়ে যাই।’’ পরে আহতদের সেখান থেকে হাওড়া হাসপাতাল ও অন্যত্র রেফার করা হয়। তবে জখমদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথম পদক্ষেপ করেন ওই টোটোচালকেরাই।

শেখ আসরাফুল নামে এক চালক জানান, অনেকেরই জ্ঞান ছিল না। হাসপাতাল পর্যন্ত যেন নিয়ে যাওয়া যায় সেটার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। ওই ভিড়ের চাপে একটি ট্রেনের চালকও জখম হন। তাঁর পা ভেঙে যায়। তাঁকেও ওই টোটোচালকেরাই উদ্ধার করেন। ওই স্ট্যান্ডেরই আর এক টোটোচালক বুদ্ধদেব সাহা এ দিন বলেন, ‘‘টোটোতে বসেও অনেকের বুকে পাম্প করছিলাম। কারও কারও দম আটকে গিয়েছিল।’’

যাঁদের উদ্ধার করেছিলেন, সকলেরই ফোন নম্বর রেখে দিয়েছেন ওই টোটোচালকেরা। বুধবার সকালে তাঁদের ফোন করে খোঁজ-খবরও নিয়েছেন। যে ট্রেন চালকের পা ভেঙে গিয়েছিল, এ দিন তাঁর বাড়িতে হাজির হন টোটোচালকেরা। তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর নেন। কোনও দুর্ঘটনার পরে প্রথম চিকিৎসাই গুরুত্বপূর্ণ হয়। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছনোর সেই বড় কাজটাই করেছেন ওই চালকেরা। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘রেলরক্ষী বাহিনী বা রেলপুলিশের যা করা উচিত ছিল, তার অধিকাংশই করে দিয়েছেন ওই টোটোচালকেরা।’’

সাঁতরাগাছি স্টেশন এলাকায় বালাজি নামের এক ব্যক্তি থাকেন যিনি সকলের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে পরিচিতি। ত্রাতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকেও।

ওই টোটোচালকেরাই কেউ কেউ জানান, বাড়তি ভাড়ার আশায় হাঁকডাক করতে ওই দিন এগিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এ ভাবে কিছু মানুষকে সাহায্য করতে পেরে তৃপ্ত তাঁরা। তবে আক্ষেপও আছে। যেমন দেবব্রতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘শুনলাম দু’জন মারা গিয়েছেন। আমরা উদ্ধারকাজ চালিয়েও সকলকে যে বাঁচাতে পারলাম না, এটাই দুঃখের!’’

Stampede Santragachi police Toto Driver
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy