Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

মাস ফুরোলে ৬৬ হাজার গুনে নেয় টোটো ইউনিয়ন

এলাকায় চলে ২২০টি টোটো। প্রতিটির জন্য দৈনিক ‘চাঁদা’ ধার্য হয়েছে ১০ টাকা। আর তা দিতে হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার শহরের আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত টোটো সংগঠনের তহবিলে। মাস গেলে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৬ হাজার।

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০২:৩২
Share: Save:

এ-ও যেন এক সিন্ডিকেট!

Advertisement

এলাকায় চলে ২২০টি টোটো। প্রতিটির জন্য দৈনিক ‘চাঁদা’ ধার্য হয়েছে ১০ টাকা। আর তা দিতে হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার শহরের আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত টোটো সংগঠনের তহবিলে। মাস গেলে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৬ হাজার। কিন্তু সেই সংগঠনের না আছে নির্দিষ্ট অফিস, না আছে হিসেব! টোটো চালকদের একাংশ এই নিয়ে থানা-পুলিশ পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু তাতেও ইউনিয়নের টাকা তোলা বন্ধ হয়নি।

ইমারতি ব্যবসা, বালি খাদানের সিন্ডিকেট দেখতে অভ্যস্ত এই রাজ্য। সেই খাতায় যেন নতুন সংযোজন হয়েছে এই টোটো সিন্ডিকেট।

ডায়মন্ড হারবারের টোটো ইউনিয়নের পোশাকি নাম ক্ষুদ্র পরিবহন যান সংগঠন (ই-রিকশা)। ইউনিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন টোটো রাস্তায় নামার প্রাথমিক শর্ত হল ৩৬০ টাকা দিয়ে ইউনিয়নের খাতায় নাম তোলা। তার পর টোটো গাড়ির কাচে দলের প্রতীক আঁকা স্টিকার এবং একটি নির্দিষ্ট নম্বর (এটি ইউনিয়নের সিরিয়াল নম্বর) সেঁটে দেওয়া হয়। এর পর রয়েছে প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা। বিনিময়ে দেওয়া হয় বিল। জোড়াফুলের প্রতীক আঁকা সেই বিলের উপরে লেখা রয়েছে, ‘মা-মাটি-মানুষ জিন্দাবাদ’। নীচে সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি, সম্পাদক এবং আদায়কারীর সই। এই বিল দেখালে তবেই মিলবে গাড়ি চালানোর ছাড়পত্র।

Advertisement

জেলার সিটু নেতা শমীক লাহিড়ির অভিযোগ, ‘‘এটা তোলাবাজির নতুন উপায়। সিন্ডিকেটের নতুন রূপ। বেকার যুবকদের খাটা টাকায় ভাগ বসিয়ে সম্পত্তি বাড়াচ্ছে কিছু তৃণমূল নেতা। প্রশাসনের উচিত এই বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’

ডায়মন্ড হারবারের এসডিও শান্তনু বসু বলেন, ‘‘টোটো চালকদের থেকে টাকা তোলার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা দেব।’’

কী ভাবে তোলা হয় এই টাকা? ডায়মন্ড হারবারের টোটো ইউনিয়নের নির্দিষ্ট কোনও অফিস নেই। প্রতি দিন বিকেলে ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ডের পাশে কয়েক জন তৃণমূলের নেতা দাঁড়িয়ে থাকেন। ইউনিয়নের খাতা ধরে টোটো পিছু দৈনিক টাকা তাঁরা নেন। কেউ যদি টাকা দিতে না চান, তা হলে তাঁর গাড়ি চলতে না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ঠিক যেভাবে সল্টলেক-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেট থেকে ইমারতি দ্রব্য না কিনলে বাড়ি তৈরি প্রায় অসম্ভব এই জমানায়।

টোটো চালকদের দাবি, তৃণমূল নেতারা তাঁদের বলেছেন প্রতিটি ১০ টাকা আদায় থেকে ৫ টাকা পুরসভার তহবিলে যাবে। বাকি ৫ টাকা জমা পড়বে দলের তহবিলে। তাঁরা জানান, টাকা তোলার দায়িত্বে থাকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তাপস কাঞ্জি এবং তাঁর দলবল। তৃণমূলের একাংশের দাবি, তাপসবাবুদের মাথায় রয়েছে ডায়মন্ড হারবার ব্লক তৃণমূল সভাপতি উমাপদ পুরকাইতের হাত। যদিও সেই অভিযোগ না মেনে উমাপদবাবুর দাবি, ‘‘আমার টাকা লাগে না। নিন্দুকেরা আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে বলছে।’’

তৃণমূল পরিচালিত ডায়মন্ড হারবার পুরসভার উপ পুরপ্রধান পান্নালাল হালদার কিন্তু পুরসভার টোটো ইউনিয়নের টাকা জমা পড়ার কথা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘ওঁরা কোনও টাকা জমা দেয় না।’’ তা হলে কি পুরো টাকাটাই দলীয় তহবিলে জমা পড়ে? ডায়মন্ড হারবারের বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী দীপক হালদারের আবার দাবি, ‘‘১০ টাকা তো দূরের কথা, ১০ পয়সাও ওঁরা দলের তহবিলে দেয় না।’’

তা হলে মাসে ৬৬ হাজার টাকা (নতুন টোটো এলে টাকার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়) যাচ্ছে কোথায়?

টাকা তোলার কথা মেনে নিয়ে তাপস কাঞ্জির দাবি, ‘‘টোটো চালকদের নিয়ে সভা হয়েছিল। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রুট পরিচালনার জন্য নারায়ণপুর, রত্নেশ্বরপুর, ডায়মন্ড হারবার, ও পারুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মাসিক ৪ হাজার টাকায় ৪ জন কর্মী নেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘রাস্তায় কোনও টোটো চালকের দুর্ঘটনা হলে তাঁকে ওই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য করা হয়। এই সব কিছুই হয় ওই টাকায়।’’ কিন্তু বাকি টাকার হিসেব কে রাখেন?

এই প্রশ্ন শুনে তাপসবাবুর সাফাই, ‘‘কমবেশি ২২০টি টোটো চললেও হাতে গোনা ৫০ থেকে ৬০ টোটো দৈনন্দিন টাকা দেয়। বাকিরা দেয় না।’’ টাকা না দিলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। যদিও আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি সন্তোষ মজুমদারের দাবি, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তাপসবাবুর এই দাবি শুনে আড়ালে হাসছেন টোটো চালকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা ভয়ে আমাদের নাম বলতে পারছি না। কিন্তু প্রতিদিন যে টাকা উঠছে সেটি ইউনিয়নের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। থানায় সব জানিয়েছি। দেখি কী হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.