Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের প্রার্থী হয়েও বাংলো আঁকড়ে এএসপি

প্রার্থী হলেও এখনও ‘হুজুর’ কুজুর সাহেব। তাই শনিবার দিনভর সেই ‘হুজুর’ বন্দনা করে যেতে হল পুলিশকে। এ দিন সকালে ব্যাডমিন্টন খেলে বাংলোয় ফিরলেন জেমস কুজুর। বাংলোর হাতায় গাড়ি ঢোকা মাত্র ডান হাত কপালে তুলে সেলাম ঠুকেছেন সামনে দাঁড়ানো উর্দিধারী সেন্ট্রি।

অনির্বাণ রায় ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৬
জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাংলোর বাগানে মেয়ে ইলিনা এবং পোষ্য কোকোর সঙ্গে জেমস কুজুর। —নিজস্ব চিত্র।

জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাংলোর বাগানে মেয়ে ইলিনা এবং পোষ্য কোকোর সঙ্গে জেমস কুজুর। —নিজস্ব চিত্র।

প্রার্থী হলেও এখনও ‘হুজুর’ কুজুর সাহেব। তাই শনিবার দিনভর সেই ‘হুজুর’ বন্দনা করে যেতে হল পুলিশকে।

এ দিন সকালে ব্যাডমিন্টন খেলে বাংলোয় ফিরলেন জেমস কুজুর। বাংলোর হাতায় গাড়ি ঢোকা মাত্র ডান হাত কপালে তুলে সেলাম ঠুকেছেন সামনে দাঁড়ানো উর্দিধারী সেন্ট্রি। পোষ্য ল্যাব্রাডরকে সঙ্গে নিয়ে সাদা গেঞ্জি আর কালো ট্রাউজারে কুজুর সাহেব লনে আসা মাত্র ট্রে-তে চাপিয়ে কাঁচের গ্লাসে জল এগিয়ে দিয়েছেন এক পুলিশকর্মীই। এ ভাবেই মুখ থেকে হুকুম মাটিতে পড়ার আগেই লুফে নিয়েছেন তটস্থ পুলিশকর্মীরা।

কেননা তিনি তৃণমূলের প্রার্থী হলেও, এখনও জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারই বটে। জেমস কুজুর জানাচ্ছেন, শুক্রবার প্রার্থী হিসেবে দলনেত্রী তাঁর নাম ঘোষণা করায় ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়ে তিনি এখন ছুটিতে। বলছেন দু’দিনের ‘ক্যাজুয়াল লিভ’। বিরোধীদের অভিযোগ, কর্তব্যরত অবস্থায় কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়ে অনৈতিকতার যে নজির তৈরি করেছেন ১৯৮৬ ব্যাচের এই ডব্লিউবিপিএস অফিসার, শনিবারও সেই ধারাই তিনি বজায় রেখেছেন। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছে শুক্রবার। আর শনিবার রাতে কুজুর দাবি করেন, বৃহস্পতিবারই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তবে শুক্রবার কেন অফিসে গিয়েছিলেন? তাঁর উত্তর, ‘‘টেবিল পরিষ্কার করতে।’’

কর্তব্যরত অবস্থায় আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম কেন্দ্রে তাঁর প্রার্থী হওয়া, এবং তার পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের চেম্বারে বসে সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূল নেত্রীর গুণগান করা এবং বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে কী করবেন তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বামেরা শনিবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। এ দিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানানোর পর বাম নেতা রবীন দেব বলেন, ‘‘শাসক দলের প্রার্থী তালিকায় নাম ঘোষণার পরেই ওই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিজের অফিসে বসে দলের প্রচার করেছেন। এটা আইন বিরুদ্ধ।’’ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীকে লেখা চিঠিতে কুজুরের প্রার্থীপদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। প্রশ্ন উঠেছে শাসক দলের প্রার্থী হওয়ার পরেও সরকারি বাংলো দখলে রাখা নিয়েও।

এ সবই জানেন কুমারগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী কুজুর। কিন্তু তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো এখনও মনোনয়ন জমা দিইনি। ভোটের প্রচারও শুরু করিনি। চাকরি থেকে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে আপাতত দু’দিন ক্যাজুয়াল লিভ নিয়েছি। ইস্তফা গ্রহণ হলেই বাংলো ছেড়ে দেব।’’

বিরোধীরা কুজুরের যুক্তিকে বালখিল্য বলে দাবি করেছেন। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, যে কোনও দলেরই প্রার্থী তালিকা তৈরির একটা প্রক্রিয়া থাকে। যিনি প্রার্থী হচ্ছেন আগেই তাঁর সম্মতি নেওয়া হয়, অথবা তাঁকে জানানো হয়। তাই এ ক্ষেত্রে পুলিশের উর্দির নিরপেক্ষতাও কতটা বজায় ছিল উঠছে সেই প্রশ্নও। জেলা কংগ্রেস নেতা পিনাকী সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘গত চার বছরে একাধিক বার স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে। তখনই মনে হত, তিনি তৃণমূল নেতার মতো কথা বলছেন।

অবশ্য কুজুরের সাফাই ‘‘নিরপেক্ষতার শপথ নিয়ে পুলিশের চাকরিতে ঢুকতে হয়। কর্মজীবনে সেই নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছি। প্রার্থী তালিকায় নাম দেখেই ইস্তফা দিয়েছি।’’ তাহলে অবশ্য বৃহস্পতিবারই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলে যে তথ্য দিয়েছেন তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

কেন তৃণমূলের প্রার্থী হলেন সে প্রশ্নে তাঁর জবাব, “বাম আমলে আমি বঞ্চিত হয়েছি। আমাকে টপকে আমার ব্যাচমেটদের ডিআইজি করা হয়েছে।’’

তবে কি সেই ‘বঞ্চনা’ মনে রেখেই উর্দি পরে তৃণমূলের ঝান্ডা তুলে নিয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার? আপাতত সেই প্রশ্নেই তোলপাড় রাজনীতি আর প্রশাসন।

TMC candidate assambly election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy