Advertisement
E-Paper

অধীরের গড়ে থাবা শুভেন্দুর, ইঙ্গিত ফলে

রাজ্যে পালাবদলের পরে শাসক দলের সাফল্যের চাকা সর্বত্রগামী হলেও, পলাশির প্রান্তরে বারবারই তা যেন পথ হারিয়ে ফেলছিল। সেই ধাঁধায় পথ দেখালেন শুভেন্দু। দলনেত্রীর ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রী জানাচ্ছেন— সাড়ে চার মাস আগে, ঘরোয়া বৈঠকে মরিয়া দলনেত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘এক বার তমলুক মডেল ব্যবহার করে দেখলে হয় না।’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৫

রাজ্যে পালাবদলের পরে শাসক দলের সাফল্যের চাকা সর্বত্রগামী হলেও, পলাশির প্রান্তরে বারবারই তা যেন পথ হারিয়ে ফেলছিল। সেই ধাঁধায় পথ দেখালেন শুভেন্দু।

দলনেত্রীর ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রী জানাচ্ছেন— সাড়ে চার মাস আগে, ঘরোয়া বৈঠকে মরিয়া দলনেত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘এক বার তমলুক মডেল ব্যবহার করে দেখলে হয় না।’ আস্থাভাজনদের সায় মেলায় গত মে মাসে, দলের সাংগঠনিক বৈঠকে মুর্শিদাবাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। শনিবার, মুর্শিদাবাদের পঞ্চায়েত সমিতির আটটি আসনে এবং ২৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে উপনির্বাচন ছিল। বুধবার ফল প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, যার অর্ধেকেই ঘাস ফুল ফুটিয়ে তাঁর প্রতি দলনেত্রীর আস্থা রাখার মান্যতা দিয়েছেন শুভেন্দু। যা দেখে দলনেত্রীর ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রী বলছেন, ‘‘২০০৮ থেকে ২০১৪, ৬ বছরে ৬ জন জেলা সভাপতি বদল করেও যে সাফল্য অধরা ছিল, জেলার আনাচকানাচে ঘুরে কর্মীদের চাঙ্গা করে সেই সাফল্যই দিদি’র হাতে তুলে দিয়েছে শুভেন্দু।’’

দিনান্তে তা নিয়ে অবশ্য বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি তমলুকের সাংসদের। বলছেন, ‘‘মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি, বিরোধীরা নয়, উন্নয়ন আমরাই করতে পারব। নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি করে মানুষকে এই ভরসা দেওয়া গিয়েছে।’’

তাঁর খাসতালুকে তৃণমূলের সাফল্যের সম্ভাবনা অবশ্য আঁচ করেছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। উপনির্বাচনের আগে প্রচারে যথেষ্ট সময়ও দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনের দিনে, শাসক দলের ‘সীমাহীন সন্ত্রাস’ এবং সেই তাণ্ডবে ‘পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ সঙ্গতের’ অভিযোগ তুলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কবুল করছেন, ‘‘পদের লোভে অনেকেই দল ছেড়ে গিয়েছেন। তাঁদের অনুগামীরাও শাসক দলের দিকে ঝুঁকেছেন। এটা তো হতে পারে না যে, এর ফলে দলের ক্ষতি হবে না।’’ দলের অন্দরের খবর, এত দিনের প্রায় অক্ষুণ্ণ রেখে দেওযা গড়ে ফাটল ধরায় এখন অভিযোগের আঙুল উঠছে অধীরের দিকেও।

দলের এই ব্যর্থতা প্রসঙ্গে দিল্লি থেকে ফোনে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অধীর— ‘‘শাসক দলের সন্ত্রাসই বিরোধীদের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া শাসক দলের অর্থবলের সঙ্গেও পাল্লা দেওয়া যায়নি।’’ কংগ্রেসের এক জেলা নেতার সংযোজন— ‘‘মুসলিম প্রধান মুর্শিদাবাদে অধীরের সঙ্গে যে সংখ্যালঘু নেতারা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন শাসক দলে। সপুত্র মান্নান হোসেন, সিদ্দিকা বেগম, বানি ইস্রাইল, নিয়ামত শেখ, ইমানি বিশ্বাস এমনকী, অধীরদার অতি স্নেহের পাত্র, জেলার শিল্পপতি জাকির হোসেন — দীর্ঘ তালিকা। এর ফলে, কংগ্রেসের বাঁধা সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ তৃণমূলে চলে গিয়েছে।’’ অধীর-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতার দাবি, শাসক দলের প্রতি জেলা পুলিশের পক্ষপাত নতুন নয়। তবে, হালে অবস্থাটা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। অধীর নিজেও দাবি করেছেন, ‘‘সালারে একটি বুথে গণ্ডগোলই হয়নি। অথচ, কংগ্রেসের ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এর পরে লড়াই করা যায়!’’

তাহলে কি নিছক সন্ত্রাসের জোরেই সাফল্য পেয়েছেন শুভেন্দু?

জেলা কংগ্রেসেরই একটি অংশের মত, বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ছিন্নভিন্ন হয়ে থাকা শাসক দলকে গত চার মাসে এক ছাতার তলায় এনে ফেলেছিলেন শুভেন্দু। কংগ্রেস ছেড়ে আসা মান্নান হোসেন এবং তাঁর পুত্র সৌমিককেও ঠিক মতো ‘ব্যবহার’ করতে পেরেছেন তিনি। তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত এক নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘দলের জেলা সভাপতির পদে বসাটা তো মিউজিক্যাল চেয়ারে বসার মতো হয়ে গিয়েছিল। সেই অনিশ্চয়তাটাও মুছে দিতে পেরেছেন শুভেন্দু।’’

জেলা তৃণমূলের এ নেতার কথায়, ‘‘শুভেন্দুদার রাজনৈতিক আচরণ এবং মান্নানের মতো সংগঠকের যুগলবন্দিতেই এই জেলায় ঘাসফুল ফুটল।’’ ছবিটা এক মালদহেও। দলীয় কোন্দল মুছে সেখানেও ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভা দু’টি দখল করেছে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের এক নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘মনে রাখবেন, উপনির্বাচন আর বিধানসভা ভোট এক নয়, খেলা এখনও বাকি!’’

Trinamool Murshidabad Congress Adhir Chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy