Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল কর্মী খুন, অভিযুক্ত দলীয় নেতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের শীর্ষ নেতারা নিচুতলার নেতাকর্মীদের বারবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর বার্তা দিচ্ছেন। সেই বার্তা তৃণমূলের নিচুতলায় কতটা পৌঁছচ্ছে, সেই প্রশ্ন ফের তুলে দিল শনিবার খানাকুলে আহম্মদ আলি আখুন (৬২) নামে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনা।

নিহত আহম্মদ আলি। - নিজস্ব চিত্র।

নিহত আহম্মদ আলি। - নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খানাকুল শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের শীর্ষ নেতারা নিচুতলার নেতাকর্মীদের বারবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর বার্তা দিচ্ছেন। সেই বার্তা তৃণমূলের নিচুতলায় কতটা পৌঁছচ্ছে, সেই প্রশ্ন ফের তুলে দিল শনিবার খানাকুলে আহম্মদ আলি আখুন (৬২) নামে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনা।

বাড়ির কাছেই বাঁশ, মুগুর দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় হিরাপুর গ্রামের ওই প্রৌঢ়কে। গ্রামের তৃণমূল নেতা মোকারম হোসেনের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদের জন্যই আহম্মদ আলিকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নিহতের ছেলে এবং পড়শিরা। মোকারম ও তাঁর ৮ অনুগামীর বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগও হয়েছে। এ ঘটনায় শেখ আরেফুল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি তৃণমূল কর্মী হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। তবে, বাকি অভিযুক্তদের পুলিশ ধরতে পারেনি। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিহতের ছোট ছেলে শেখ সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘ওরা বাবার হাত-পা ভেঙে দিয়েছিল। মারা যাওয়ার আগে বাবা বারবার মোকারমরাই হামলা করেছে বলছিল। পুলিশকেও ওদের নাম বলেছে বাবা।’’

মোকারম খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদের অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। যদিও ইকবালের দাবি, ‘‘মোকারমকে চিনি না। যিনি খুন হয়েছেন, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের যোগ আছে বলে আমার জানা নেই। দোষীদের রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক, পুলিশকে বলা হয়েছে কড়া পদক্ষেপ করতে। দুষ্কৃতীদের দলে বরদাস্ত করা হবে না।’’ রবিবার দুপুরেই নিহতের বাড়িতে যান জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। সংশ্লিষ্ট কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের নূর নবি মণ্ডল বলেন, ‘‘আহম্মদ আলি ভাল সংগঠক ছিলেন।’’

রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই খানাকুল-সহ আরামবাগ মহকুমার সর্বত্রই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বারেবারে প্রকাশ্যে এসেছে। শনিবার আরামবাগে চিকিত্‌সার জন্য এসেছিলেন আহম্মদ আলি। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ খানাকুলের রাজহাটি বাসস্ট্যান্ডে নেমে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কিছুটা আগে একটি ধানকল সংলগ্ন এলাকায় প্রথমে পিছন থেকে তাঁর মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয়। তিনি পড়ে গেলে হামলাকারীরা বাঁশ এবং মুগুর দিয়ে তাঁকে বেধড়ক পিটিয়ে কাদার মধ্যে মুখ গুঁজে ফেলে রেখে পালায়। পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে বাড়িতে খবর দেন। আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আহম্মদ আলি মারা যান। এ কথা গ্রামে চাউর হতেই হিরাপুর এবং পাশের দু’টি গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশ দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। উত্তেজনা প্রশমনে গ্রামে পুলিশ টহল শুরু হয়।

আহম্মদ আলির মেজো ছেলে রাজা বলেন, ‘‘মোকারমদের উত্‌পাত এবং দুর্নীতির প্রতিবাদ করতেন বাবা। গ্রামে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিলেন। পরিকল্পনা করেই বাবাকে খুন করা হয়েছে।’’ প্রতিবেশীরাও জানান, রাস্তার গাছ কেটে বিক্রি করা থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ লুঠ, হাঁস-মুরগি চুরি, পারিবারিক বিবাদে নাক গলানো— সবেতেই জড়াচ্ছিল মোকারম ও তাঁর অনুগামীরা। আহম্মদ আলি এ সব রুখে দিচ্ছিলেন। সেই আক্রোশেই তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন। চেষ্টা করেও মোকারমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE