Advertisement
E-Paper

টিএমসিপি কর্মীদের জামিন খারিজ

জেলা আদালতে সবং মামলার শুনানির সময় সওয়াল করতে গিয়ে নিম্ন আদালতের নির্দেশকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ করে বসলেন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর, সংক্ষেপে পিপি) রাজকুমার দাস। এর আগে মেদিনীপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) এজলাসে ধৃত দুই টিএমসিপি কর্মীর জামিনের আবেদন জানানো হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৩৯

জেলা আদালতে সবং মামলার শুনানির সময় সওয়াল করতে গিয়ে নিম্ন আদালতের নির্দেশকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ করে বসলেন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর, সংক্ষেপে পিপি) রাজকুমার দাস। এর আগে মেদিনীপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) এজলাসে ধৃত দুই টিএমসিপি কর্মীর জামিনের আবেদন জানানো হয়েছিল। চার্জশিটে নাম না- থাকা ধৃত এক টিএমসিপি কর্মীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। সব দিক খতিয়ে দেখে অবশ্য সিজেএম আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য্য করে। কেন নিম্ন আদালত ওই আবেদন না মঞ্জুর করে শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য্য করল, বুধবার জেলা আদালতে সবং মামলার শুনানির সময় সওয়াল করতে গিয়ে কার্যত এই প্রশ্নই সামনে আনেন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি। যদিও ফের ধৃত তিন টিএমসিপি কর্মীর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।

টিএমসিপি কর্মী অসীম মাইতিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনও না মঞ্জুর হয়েছে। অন্য দিকে, শুনানি চলাকালীন ধৃত সিপি কর্মী সৌমেনের আইনজীবী অলোক মণ্ডলের বক্তব্য ছিল, চার্জশিট জমা পড়ার পরে সিজেএম আদালত যে অর্ডার দেয়, সেই অর্ডার আগে থেকেই লেখা ছিল। জমা পড়ার পরে অর্ডারকপিতে শুধুমাত্র দু’টো শব্দ লেখা হয়েছে। সিজেএম আদালতের এই অর্ডারে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন অলোকবাবু। জেলা আদালত ওই অর্ডারে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই সংক্রান্ত শুনানির জন্য মামলার পরবর্তী দিন ধার্য্য হয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর। ধৃত সিপি কর্মীদের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশ এমন চার্জশিট জমা দিয়েছে, যার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।”

ভরা এজলাসে এ দিন সরকারপক্ষের কৌসুঁলি বলেন, “যাদের (টিএমসিপি- র কর্মীদের) বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারা আছে, তারা কেন জামিন পাবে না? ওদের অধিকার খর্ব হচ্ছে। এটা কলঙ্কজনক অধ্যায়। কালো দিন। ওরা জেলে বসে কাঁদছে। এই দিনগুলো ওদের কে ফিরিয়ে দেবে?” সরকারপক্ষের কৌঁসুলির সওয়াল শুনে বিস্মিত হন এজলাসে থাকা অনেকেই। মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ইন্দ্রনীল অধিকারী অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি। বস্তুত, এই প্রথম নয়, এর আগেও ধৃত টিএমসিপি কর্মীদের ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছেন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি। সবং মামলার শুনানির সময় জেলা আদালতেই রাজকুমারবাবু দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশের তদন্ত একেবারে ঠিক পথেই এগোচ্ছে। ওই তিনজন (ধৃত টিএমসিপি কর্মীরা ঘটনার সঙ্গে যুক্তই নয়।” সরকারপক্ষের কৌঁসুলি যে ভাবে টিএমসিপি- র পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না ধৃত সিপি কর্মীদের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য। তাঁর মন্তব্য, “এই মামলায় প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে নির্দোষদের জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই করেছে। পুলিশের পাশে থেকে পিপি তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। উনি টিএমসিপি- র ক্ষেত্রে খুব নরম। সিপি- র ক্ষেত্রে খুব গরম।”

আগে একবার জেলা আদালতেও ধৃত টিএমসিপি কর্মীদের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তখন অবশ্য চার্জশিট জমা পড়েনি। চার্জশিট জমা পড়ার পরে ফের জামিনের আবেদন জানানো হয়। গত ৭ অগস্ট সবং সজনীকান্ত কলেজ চত্বরে সিপি কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। এই মামলায় ৭ জন গ্রেফতার হন। ৪ জন ছাত্র পরিষদের (সিপি)। ৩ জন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি)। ঘটনার ৪১ দিনের মাথায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। চার্জশিটে যে ২১ জনের নাম রয়েছে, তারমধ্যে ১৯ জনই সিপি-র। ২ জন টিএমসিপি-র। সিপি-র ১৮ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে খুন-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারা। টিএমসিপি-র ধৃতদের মধ্যে অসীম মাইতির নাম চার্জশিটে নেই। অন্য ২ জনের বিরুদ্ধে মারধর-সহ যে ধারাগুলো দেওয়া হয়েছে, তা জামিন যোগ্য। বুধবার মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ইন্দ্রনীল অধিকারীর এজলাসে ধৃত দুই টিএমসিপি কর্মী শেখ মুন্না আলি এবং সানোয়ার আলির জামিনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী মৃণাল চৌধুরী বলেন, “আমার মক্কেলদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারা আছে। আমার মক্কেলরা নির্দোষ।” ধৃত টিএমসিপি কর্মী অসীম মাইতির নাম যে চার্জশিটেই নেই, সেই বিষয়টিও আদালতের নজরে আনেন তিনি। মৃণালবাবু বলেন, “অসীমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। ওর নাম তো চার্জশিটেই নেই।”

সিপি- র যে নেতা কৃষ্ণপ্রসাদের মৃত্যু সংক্রান্ত অভিযোগটি দায়ের করেছিলেন, সবং কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সেই সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়কেও এই মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুনানির সময় সৌমেনের আইনজীবী অলোক মণ্ডল বলেন, “সৌমেনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি শুরু হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, চার্জশিট পেশের আগে নোটিস পাঠিয়ে অভিযোগকারীর বক্তব্য পুলিশের জানা উচিত । অবশ্য এ ক্ষেত্রে পুলিশ তা করেনি। অভিযোগকারীর বক্তব্য না- জেনেই চার্জশিট জমা দিয়েছে।” পাল্টা সওয়ালে সরকারপক্ষের কৌঁসুলি রাজকুমারবাবু বলেন, “কে অভিযোগকারী? ও এখন আসামী। ওকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।” তাঁর কথায়, “মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশের তদন্তেই তা উঠে এসেছে। এখানে অভিযোগকারী পুলিশ।” পুলিশের চার্জশিটে অবশ্য সৌমেনকে অভিযোগকারী হিসেবেই দেখানো হয়েছে। এ দিন জেলা আদালতে সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়েরও জামিনের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য্য ছিল। শুনানির আগেই সরকারপক্ষের কৌঁসুলি আদালতে আবেদন করেন, “সিডি- র (কেস ডায়েরি) পুরোটা দেখা হয়নি। একদিন যদি সময় দেন। কাল শুনানি হোক।”

Trinamool bail plea rejected court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy