দুনিয়ার ক্ষিপ্রতম সাংবাদিকের নাম কি ডোনাল্ড ট্রাম্প? এক্স হ্যান্ডলে খোদ ট্রাম্পের নামের প্রোফাইলেই ব্রেকিং নিউজের ঢঙে পাকিস্তানে ‘নিউক্লিয়ার ইমার্জেন্সি’র ভুয়ো খবর ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে বিপজ্জনক বিকিরণ বা রেডিয়েশনের ফলে সঙ্কটের কথা।
অ্যাকাউন্টে স্পষ্ট নীল দাগ। ক’দিন আগের এই ঘোষণাটির স্ক্রিনশট এখনও নেটমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ভুয়ো খবর যাচাইয়ের সংস্থা অল্ট নিউজের সিনিয়র এডিটর ইন্দ্রদীপ ভট্টাচার্য সতর্ক করছেন, “প্রোফাইলে নীল দাগ বা ব্লু টিক থাকলেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করার নয়। ফলোয়ার বা প্রচার পরিধি একটু বাড়লেই ব্লু টিক কেনা যায়। ব্লু টিক থাকলে এক্সের প্রোফাইল থেকে রোজগারের ঢালাও সুবিধা। ব্লু টিক জাহির করে অপকর্ম রুখতে ভারতে এক্স হ্যান্ডল কর্তৃপক্ষের তত তৎপরতা নেই।” ইন্দ্রদীপ বলছেন, “এখন অনেকে প্যারোডি প্রোফাইল কথাটাও পরিচিতিতে লিখে থাকেন। ট্রাম্পের ভেকধারী প্রোফাইলটি ট্রাম্পের আসল প্রোফাইল ‘রিয়েলডোনাল্ড ট্রাম্প’-এর সঙ্গে যুক্ত নয় লেখা ছিল। কিন্তু বিভ্রান্তিকর টুইটের স্ক্রিনশট ছড়ানোর সময়ে তা বোঝার জো থাকে না।” ট্রাম্পের নামাঙ্কিত প্রোফাইলটি এখন নাম পাল্টে সদ্য ট্রায়াম্ফ আপডেট হয়েছে। ভুয়ো খবর শনাক্তকারীদের মতে, হয়তো এর পিছনের আসল লোকটিকে অনেকে চিনে ফেলেছেন। ওই ভুয়ো প্রোফাইলটি ভারতীয় বলে ইতিমধ্যে চিহ্নিত।
নীল দাগের গরিমা বহন করে আরও অনেক বিপজ্জনক চরিত্রই এক্স হ্যান্ডল জুড়ে কিলবিল করছে। এবং তাদের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ও প্রভাবেরও নানা খবর রয়েছে। যেমন, দেশের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রির কন্যার সাইবার হেনস্থার সঙ্গে যুক্তদের প্রথম সারিতেই স্কুইন্ট নিওন বলে একটি প্রোফাইলের কথা তুলে আনেন অল্ট নিউজ কর্ণধার মহম্মদ জুবের। এক লক্ষ ৩০ হাজার অনুগামী বিশিষ্ট স্বঘোষিত ‘পলিটিক্যাল হিন্দুত্ব স্প্রেডার’ ওই ব্যক্তিও ব্লু টিকধারী। ভিন্ ধর্মে বিবাহিত দম্পতি, বিশেষত মুসলিম মেয়েদের নেট-লাঞ্ছনা তার নেশা। অভিযোগ, সাংবাদিক রানা আয়ুবের নম্বর প্রকাশ করে হেনস্থায় সে জড়িত। গত বছর পেরিয়রের একটি মূর্তির ছবির সঙ্গে অশ্লীল ছবি জোড়ায় তামিলনাড়ু পুলিশ তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে। জানা যায়, এই কাজ বিহারের জনৈক চন্দন কুমারের। তবে তদন্তকারীদের সূত্র বলছে, প্রভাবশালী যোগেই সে ছাড়া পায়। সম্প্রতি এক ইউটিউবার পাক চর সন্দেহে ধরা পড়ার পরে কোন কোন ভারতীয় ইউটিউবার পাকিস্তানে গিয়ে সদর্থক ভিডিয়ো করেছেন বা কে কোথায় দেশের সরকারের সমালোচনা করছেন, সবাইকে এক গোত্রে ফেলে নেট-লাঞ্ছনায় সে মত্ত।
বাংলাদেশে হিন্দু-নির্যাতন নিয়ে রং চড়ানো বা মিথ্যা প্রচার থেকে শুরু করে নানা ভুয়ো খবরে যুক্ত জিতেন্দ্র প্রতাপ সিংহ বা ‘মিস্টার সিনহা’র কথাও উঠে এসেছে অল্ট নিউজের তদন্তে। জিতেন্দ্রর দাবি, স্বয়ং মোদী তাঁর অনুগামী (ফলোয়ার)। সিনহা আবার মোদী সরকারের তৃতীয় বারের শপথগ্রহণে আমন্ত্রিত ছিলেন বলেও দাবি। অল্ট নিউজের তরফে দাবি, ভুয়ো খবরের কারবারি তথা আইটি সেলের কুশীলবদের একাংশ রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট। আবার টাইমস অ্যালজ়েব্রা, মেঘ আপডেটসের মতো প্রোফাইলেও বিস্তর ভুয়ো খবর ছড়ানোর নজির রয়েছে। ইন্দ্রদীপের কথায়, “মিথ্যা সাধারণত বেশ চমকপ্রদ। ছড়ায়ও দ্রুত। তেমন কিছু চট করে সত্যি না ভেবে সমান্তরাল খোঁজখবরে, নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে যাচাই করা জরুরি।”
ভুয়ো খবরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খবর কাটাছেঁড়া করে সত্যান্বেষণের যোদ্ধারাও সক্রিয়। সম্প্রতি পাকিস্তানি ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারও পাক বিমানবাহিনীর লেখা দ্য ডেলি টেলিগ্রাফের খবরের ছবি শেয়ার করেন। পিআইবি এবং অল্ট নিউজ ছবিটি ভুয়ো এবং খবরটি মিথ্যা বলে চিহ্নিত করেছে। ওই সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটেও খবরটি মেলেনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)