মনোজ থাম্বে ও সতীশ গুপ্ত।
খোদ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঢুকে পানীয় জলের পাত্রে বিষ মেশানোর চেষ্টার মতো অভিযোগে গ্রেফতার হলেন খড়্গপুরের এক তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে পুলিশ সুপারের অফিস থেকে ধৃত সতীশ গুপ্ত নামে ওই যুবককে জেরা করে খড়্গপুরেরই এক যুব তৃণমূল নেতা মনোজ থাম্বেকেও ধরেছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, মনোজ এই ষড়যন্ত্র করেছিলেন। ধৃত দু’জনের কাছ থেকে মোট চারটি বিষের প্যাকেট উদ্ধার হয়েছে। ওই বিষ কী ধরনের তা জানতে পরীক্ষার জন্য ‘সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’-তে পাঠানো হচ্ছে। মনোজের কাছ থেকে কিছু গাঁজাও মিলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “এই ষড়যন্ত্রে আর কেউ যুক্ত রয়েছে কি না, দেখা হচ্ছে।”
শুক্রবার মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতদের ১২ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
খড়গপুরের নিউ সেটলমেন্ট এলাকার বাসিন্দা মনোজ রেলের কর্মী। সঙ্গে সুদের কারবারও চালান। ২০১২-য় তৃণমূল যুবার জেলা সভাপতি এবং পরে যুব তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি হন। তবে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে গত জানুয়ারিতে জেলা কার্যকরী সভাপতির পদ খোয়ান তিনি।
এই সূত্র ধরেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “মনোজের সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই।” এক ধাপ এগিয়ে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর দাবি, “ওই নামে কাউকে চিনিই না!” তবে যাঁর হাত ধরে দলে মনোজের উত্থান, সেই জেলা তৃণমূল নেতা তথা খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল বলেন, ‘‘মনোজ এ ধরনের অপকর্মে যুক্ত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করি না। ও খুব নিষ্ঠার সঙ্গে দলটা করে।”
বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশের বেশিরভাগ আধিকারিক-কর্মীই নিরাপত্তার কারণে কেশপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারীর সভায় মোতায়েন ছিলেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে চান বলে বিকেলে তাঁর কার্যালয়ে অপেক্ষা করছিলেন সতীশ। আচমকা তাঁকে পুলিশ সুপারের ঘরের বাইরে রাখা পানীয় জলের কুঁজোর কাছে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন এক পুলিশকর্মী। জেরার মুখে সতীশ পুলিশকে জানান, মনোজের নির্দেশে তিনি কুঁজোর জলে বিষ মেশানোর চেষ্টা করছিলেন।
কেন এই কাণ্ড ঘটালেন মনোজ?
পুলিশের দাবি, লিখিত আকারে না হলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে মনোজের বিরুদ্ধে টাকা চাওয়া, হুমকি দেওয়া-সহ নানা অভিযোগ পাচ্ছিল তারা। সে ব্যাপারে থানায় ডেকে তাঁকে বোঝানোও হয়েছে। সে জন্যই তাদের বিরুদ্ধে মনোজের আক্রোশ ছিল বলে মনে করছে পুলিশ।
তবে জেলা তৃণমূল থেকে অন্য ব্যাখ্যা মিলেছে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, স্থানীয় রাজনীতিতে ইদানীং দলে মনোজের বিরোধী গোষ্ঠীর দাপট বেশি। পুলিশ বিরোধী গোষ্ঠীকে মদত দিচ্ছে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন মনোজ। ঘটনার সঙ্গে সেই ক্ষোভ বা তার বহিঃপ্রকাশের সম্পর্ক থাকতে পারে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy