Advertisement
E-Paper

শিশু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার আরও দুই চিকিৎসক

শিশু পাচার তদন্তের ১০ দিনের মাথায় ফের দুই চিকিৎসককে গ্রেফতার করল সিআইডি। ধৃতদের এক জন বিজেপির রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য এবং চিকিৎসক সেলের আহ্বায়ক দিলীপ ঘোষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৩০

শিশু পাচার তদন্তের ১০ দিনের মাথায় ফের দুই চিকিৎসককে গ্রেফতার করল সিআইডি। ধৃতদের এক জন বিজেপির রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য এবং চিকিৎসক সেলের আহ্বায়ক দিলীপ ঘোষ। এ দিনই তাকে সাসপেন্ড করেছে দল। সিআইডি দিলীপকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করায় মঙ্গলবার বিকেলে তাকে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি জানতে চান বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বুধবার রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘উনি আমাকে বলেছিলেন, দল চাইলে ইস্তফা দেবেন। উনি গ্রেফতার হওয়ার পর দল ওকে সাসপেন্ড করছে। উনি যদি পরে নিজেকে নিষ্কলঙ্ক প্রমাণ করে ফিরতে পারেন, তখন দেখা যাবে।’’

বুধবার ভোরে বেহালার মোহনানন্দ ব্রহ্মচারী শিশু সেবা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক নিত্যানন্দ বিশ্বাস এবং মহাত্মা গাঁধী রোডের শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমের চিকিৎসক দিলীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়। নিত্যানন্দ বেহালার পর্ণশ্রী এলাকায় বসবাস করলেও আদতে গাইঘাটার বড়াগ্রামের বাসিন্দা। ধৃত হাতুড়ে চিকিৎসক তপন বিশ্বাসের বাড়ির উল্টো দিকেই তার আদি বাড়ি।

দিলীপ সল্টলেকের সিএফ ব্লকের বাসিন্দা। সিআইডি সূত্রে খবর, শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমের দুই কর্ণধার পারমিতা চট্টোপাধ্যায়, তার স্বামী পার্থ এবং চিকিৎসক সন্তোষ সামন্তকে গ্রেফতারের পরেই বছর ষাটেকের দিলীপের নাম মেলে। ওই নার্সিংহোমে সন্তোষের সহযোগী ছিল দিলীপ। দু’জনেই ওই নার্সিংহোমের জন্মলগ্ন থেকে রয়েছে। দু’জনেই সেখানে শিশু ও প্রসূতিদের সব রকম চিকিৎসা করত। ওই নার্সিংহোম থেকে বিদেশেও শিশু পাচার হয়েছে, এই তথ্য সামনে আসার পরেই দিলীপের কাজ নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। সিআইডি-র এক কর্তা জানিয়েছেন, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী এবং নানা দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দিলীপের ওঠাবসা ছিল। সেই যোগাযোগ শিশু পাচারের কাজেও লাগিয়েছে দিলীপ। বিজেপি সূত্রের খবর, চিকিৎসক দিলীপ বেশ কিছু দিন ধরেই দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঢুকে পড়েছিল। কাদাপাড়ায় রাজ্য সভাপতির বাড়িতে প্রায়ই যেত এবং তাঁকে নানা পদ খাওয়াত। রাজ্য সভাপতিও ওই চিকিৎসকের বাড়িতে প্রয়োজনে দলের গোপন বৈঠক করতেন। আরএসএসের স্বেচ্ছাসেবকও ছিল ওই চিকিৎসক। প্রতিদিন সকালে রাজ্য সভাপতি তাঁর বাড়ির পাশে যেখানে আরএসএসের শাখায় যান, ওই চিকিৎসকও সেখানেই যেত। বাম জমানায় দিলীপ শুরুতে ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকে। এক শীর্ষ স্তরের সিপিএম নেতার কাছেও যাতায়াত ছিল। ২০০৫ সালে সিপিএমের টিকিটেই বিধাননগর পুরভোটে জয়ী হয় সে। ২০১৪ সালে দিলীপ বিজেপিতে যোগ দেয়। পরের বছর পুরভোটে বিজেপি-র প্রার্থী হয়।

নিত্যানন্দের প্রতি সিআইডি-র সন্দেহ হয় এক দম্পতির অভিযোগের ভিত্তিতে। বেহালার ওই শিশু সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিত্যানন্দ বছর দশেক যুক্ত। ২০১৪ সালে এক দম্পতির সন্তানকে ভর্তি নিয়ে কয়েক দিন পরে মৃত বলে জানিয়েছিল নিত্যানন্দ। হৃদপিণ্ডে ফুটো থাকার জন্য তার মৃত্যু হয়েছে বলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ সইও করেছিল নিত্যানন্দ। শিশু পাচার কাণ্ড সামনে আসায় ওই দম্পতির সন্দেহ হয়। দিন কয়েক আগে ওই দম্পতি ভবানীভবনে গিয়ে সেই ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ গোয়েন্দাদের দেখান। মঙ্গলবার ভবানীভবনে দীর্ঘ ক্ষণ নিত্যানন্দকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কথাবার্তায় অসঙ্গতি থাকায় এ দিন গ্রেফতার হয় সে। বেহালার শিশু সেবা প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক সুনীল নাগ পরে বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’’

তদন্তকারীরা জানান, ধৃত হাতুড়ে তপন বিশ্বাসের মাধ্যমে শিশুদের জোগাড় করত নিত্যানন্দ। প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ভুয়ো ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ বা চুরি করা শিশুর আইনি কাগজপত্র তৈরি করত। বেহালায় নিজের বাড়িতেও একটি ছোট নার্সিংহোম চালাত সে। সেখানেও প্রসূতিরা আসতেন।

বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে এ দিন বিচারক দু’জনকেই ন’দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। কোর্ট লকআপে নিয়ে যাওয়ার সময়ের তাদের মুখ তোয়ালেতে ঢেকে দেওয়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়ে সিআইডি। এক বিক্ষোভকারীর চড় এসে পড়ে দিলীপের ঘাড়ে। সিআইডি কোনও রকমে দু’জনকে গাড়িতে তুলে কলকাতা রওনা হয়।

Trafficking doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy