Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দেগঙ্গায় গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার দুই

ট্রেন থেকে নেমে অন্ধকার পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তরুণী। সেই সময় তাঁকে পাশের আমবাগানে টেনে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ছিনতাই করা হয় তরুণীর মোবাইল এবং টাকা। স্থানীয় বাসিন্দারাই উদ্ধার করেন বছর উনিশের মেয়েটিকে। পরে এলাকার দু’জনকে গণধর্ষণে জড়িত সন্দেহে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

ট্রেন থেকে নেমে অন্ধকার পথ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তরুণী। সেই সময় তাঁকে পাশের আমবাগানে টেনে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ছিনতাই করা হয় তরুণীর মোবাইল এবং টাকা। স্থানীয় বাসিন্দারাই উদ্ধার করেন বছর উনিশের মেয়েটিকে। পরে এলাকার দু’জনকে গণধর্ষণে জড়িত সন্দেহে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার রাতে দেগঙ্গার হাড়োয়া স্টেশন এলাকায় এই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকালে উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকার কিছু মদ-জুয়ার ঠেক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় জনতা। এক অভিযুক্তের বাড়িতেও ভাঙচুর চলে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানান, ধৃত দু’জনকে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ছ’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বনাথপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। গোপন জবানবন্দি নেওয়ার জন্য তাঁকে আদালতেও হাজির করানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবা মারা যাওয়ার পরে মায়ের সঙ্গে দেগঙ্গার হাদিপুর-ঝিকরা এলাকায় থাকেন ওই তরুণী। কর্মসূত্রে তাঁকে যেতে হয় কলকাতায়। বুধবার রাত সওয়া ৯টা নাগাদ হাড়োয়া স্টেশনে নামেন তিনি। বাড়ি ফেরার পথে দু’জন তাঁর উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

ঘটনাচক্রে ঝিকরা রেলকলোনির বাসিন্দা এক মহিলা দূর থেকে দেখেন, একটি মেয়েকে দু’টো লোক জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও, পরে তিনিই খবর দেন আশপাশের লোকজনকে। জনতা খোঁজাখুঁজি শুরু করে। খুঁজতে গিয়ে এলাকার আমবাগানে দেখা মেলে আক্রান্ত তরুণীর। নগ্ন, গোঙাচ্ছেন। কোনও মতে ঘটনার কথা জানান।

রেলকলোনির বাসিন্দা মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘ওড়না দিয়ে পিছমোড়া করে হাত এবং লুঙ্গি দিয়ে মুখ বাঁধা ছিল ওই তরুণীর। মাঝেমাঝে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে জানান, তাঁর মোবাইল এবং সঙ্গে থাকা নগদ পাঁচ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে ধর্ষণ করেছে অপরিচিত দু’টো লোক।’’

সন্দেহের বশে জনতা শ্যামল সর্দার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দাকে আটক করে। শ্যামল মাঝেসাঝে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে। তাকে জেরা করে পাকড়াও করা হয় তারক সর্দার নামে আর এক জনকে।

এলাকায় গিয়ে এ দিন দেখা গেল, কাকলি মণ্ডল, সাবিনা বিবি, বন্দনা মণ্ডলের মতো স্থানীয় মহিলাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, রেললাইনের ধারে চোলাইয়ের ঠেক রয়েছে। আমবাগানে বসে জুয়ার বোর্ড। ওই সব জায়গায় সমাজবিরোধীদের আনাগোনা রয়েছে। তারা মাঝেমধ্যেই এলাকার মহিলাদের প্রতি অশালীন মন্তব্য করে। রাতে আতঙ্ক বাড়ে। রাস্তায় আলো না থাকায় যত্রতত্র মদ-গাঁজা খেতে দেখা যায় অনেককে। পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ওই এলাকায় নিয়মিত টহলদারি করা হয়।

ক্ষুব্ধ জনতা এ দিন দুই চোলাই বিক্রেতার বাড়িতে হামলা করে, ভাঙচুর হয় শ্যামল সর্দারের বাড়িতেও। বুধবার তরুণীর মামাতো ভাই দিদির সঙ্গে একই ট্রেনে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু জানতেন না ওই ট্রেনেই আছেন দিদি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দিদি ফোন করলে এক সঙ্গে আসতে পারতাম। এমন ঘটত না!’’

তারক সর্দারের স্ত্রী কালিদাসী সর্দার বলেন, ‘‘স্বামী কোনও কাজকর্ম করেন না। আমি কলকাতায় গিয়ে শাকপাতা বেচে সংসার চালাই। মেয়ে হয়ে আর একটা মেয়ের উপরে এই অত্যাচার মানতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gang rape Deganga rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE