গায়ে রাখা যাচ্ছে না সোয়েটার। বড়দিনের সকালে শিলিগুড়ির রাস্তায়। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
শীতের জামাকাপড় ঠেসে ভরে ভারি ব্যাগ টানতে টানতে ডুয়ার্সে এসে পর্যটকেরা দেখছেন, ব্যাগ বওয়াই সার। ঠান্ডা নেই। বরং ওই ব্যাগ টানতে ঘেমে যেতে হচ্ছে।
নোট উধাও। তার উপরে শীতও উধাও। ডিসেম্বরের শেষে ডুয়ার্সে এসে গরমে তাই বিরক্ত দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটকই। জয়ন্তীতে পৌঁছে আসানসোলের সৌম্যজিৎ সরকার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দিনের বেলায় ভারি জ্যাকেট তো দূরের কথা, হাফ সোয়েটার অবধি গায়ে রাখতে পারেননি। জয়ন্তীতে আবহাওয়া ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। সৌম্যজিতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এর চেয়ে আসানসোলে এখন বেশি ঠান্ডা।’’ হাওড়ার কৌস্তভ রায়ও ভাবতে পারেননি বড়দিনের দুপুরে রাজাভাতখাওয়ার বাংলোয়
ফ্যান চালিয়ে হাওয়া খেতে হবে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাতে তাও একটু ঠান্ডা। দিনে তো দেখছি এপ্রিলের মতো গরম। মেজাজটাই কেমন গোলমাল হয়ে গিয়েছে।’’
ডিসেম্বরে এমন আবহাওয়া দেখে হকচকিয়ে গিয়েছে শিলিগুড়িও। শিলিগুড়িতে দিনের বেলায় তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ সুবীর সরকারের হিসেবে, খাতায়-কলমে ২৭ হলেও আকাশ একদম পরিষ্কার থাকায় সূর্যের তাপটা মনে হচ্ছে ৩০ ডিগ্রির কাছাকাছি। বিক্রি হচ্ছে আইসক্রিম। আখের রসও। বড়দিনের দিন বেলা ১১টায় সেবক রোডের অফিসে এসি চালিয়ে বসে তরুণ ব্যবসায়ী হর্ষ গোয়েঙ্কা। তাঁর কথায়, ‘‘সেবক রোডের গাছগুলো উধাও হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গেই উধাও শীতও।’’
বর্ষশেষে ডুয়ার্সে এমন আবহাওয়া কেন?
শিলিগুড়ি শহরে মধ্যে নির্বিচারে গাছ কটাই শুধু নয়, লাগোয়া বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চল ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে বলে পরিবেশ ঊষ্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী। তিনি জানান, গত দেড় দশকে শিলিগুড়িতে ডিসেম্বরে এমন গরম বোধ করিনি। হিমলয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু মনে করেন, পাহাড়-সমতলের পরিবেশ বাঁচাতে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
এমন গরম এ বার কত দিন চলবে? সিকিমের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবীর সরকারের বক্তব্য, উত্তুরে হাওয়া এখনও উত্তরবঙ্গে ঢুকতে পারছে না। তাঁরা জানাচ্ছেন, ‘অকাল-গ্রীষ্ম’ আরও কিছু দিন চলবে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের কর্তা সম্রাট সান্যাল জানান, তাঁরা পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় কারও কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy