এ ভাবেই র্যাগিং চলত বলে অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত।
‘থ্রেট কালচার’ (ভয় ও শাসানির সংস্কৃতি) চলে এখানে। দিনে-রাতে র্যাগিং হয়— এই অভিযোগ আগেই করেছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার এবং পড়ুয়াদের একাংশ। এ বার প্রকাশ্যে এল র্যাগিংয়ের ভিডিয়ো (এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)।
ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এক দল পড়ুয়ার উপরে র্যাগিং চলছে। ঘটনাস্থল কলেজের হস্টেল (বয়েজ়)। রাতে ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের ঘোরানো হচ্ছে সারিবদ্ধ ভাবে। ঠিক যে ভাবে রেললাইনে ট্রেন চলে! পড়ুয়ারা ওই ভাবে গোল হয়ে ঘুরছেন। তাঁদের উপরে নজর রেখেছেন কয়েক জন সিনিয়র ‘দাদা’। এর আগে সদ্য গ্রেফতার হওয়া সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকের নাম জড়ায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘থ্রেট কালচার’র অভিযোগের সঙ্গে। এই ভিডিয়োয় অবশ্য দেখা যাচ্ছে না মুস্তাফিজুরকে। তবে তাঁর দলবলই এই র্যাগিং করেছে বলে দাবি। যদিও ভিডিয়োটি কবেকার, তা স্পষ্ট নয়।
ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই র্যাগিংয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। চাপের মুখে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী বলেন, ‘‘বিষয়টি এক জন পড়ুয়া আমাদের নজরে এনেছেন। কলেজে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি রয়েছে। তদন্ত হবে।’’ ইতিমধ্যে মুস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ পদক্ষেপ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। মেদিনীপুর মেডিক্যালের হাউসস্টাফ মুস্তাফিজুরকে সোমবারই কলেজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে কলেজের এক ছাত্রের দাবি, ‘‘এখানে আরও এ রকম মুস্তাফিজুর রয়েছে। তাদেরকেও সরাতে হবে।’’ প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো, কলেজ হস্টেল ক্যাম্পাসেরই— এ কথা জানিয়ে আর এক ছাত্রের মন্তব্য, ‘‘এ ভাবেই র্যাগিং হত।’’ অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির কাছে আগে অভিযোগ গিয়েছিল? এক ছাত্রীর জবাব, ‘‘অনেকেই তো অত্যাচারের কথা বলতে পারত না। এখন এগিয়ে এসে সবাই সব বলছে।’’
অভিযোগ করলেই কি শাস্তি হত? এক বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের জেরেই নদিয়ার এক ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। সন্তানহারা সেই বাবা-মা বলছেন, ‘‘র্যাগিং বিরোধী আইনের সঠিক ব্যবহার হয় না বলেই, কেউ এমন অপরাধ করতে ভয় পায় না। ছেলের মৃত্যুতেও আজও কারও সাজা হল না।’’
সূত্রের খবর, র্যাগিং অভিযোগ তুলে আগে যখন পড়ুয়াদের অনেকে সরব হয়েছিলেন, তখন এক চিকিৎসক নাকি বলেছিলেন, ‘অভিযোগ করতে গেলে তথ্যপ্রমাণ দিয়েই করতে হয়।’ এ দিন ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরে ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর মন্তব্য, ‘তথ্যপ্রমাণ দিতে বলেছিলাম ঠিকই, তবে কোথাও বলা হয়নি যে, তদন্ত হবে না।’ এক ছাত্রীর দাবি, ‘‘মুখ খুললেই পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেওয়া হত।’’ এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখানে র্যাগিং হত বলে পড়ুয়ারা কোনও দিনই অভিযোগ করেনি। এখন করছে। নিশ্চিত ভাবে তদন্ত হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy