Advertisement
E-Paper

ঋণ বন্ধ, ধুঁকছে কৃষি-গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক

মোটা টাকা ঋণ অনাদায়ী থাকায় নতুন করে ঋণ দেওয়া বন্ধ। ঋণ দেওয়া বন্ধ থাকায় শুকিয়ে গিয়েছে আয়ের উৎস। ফলে, বন্ধ হয়েছে নতুন ঋণ দেওয়া। এই চক্রে পড়ে ধুঁকছে রাজ্যের একাধিক কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০১:১৫

মোটা টাকা ঋণ অনাদায়ী থাকায় নতুন করে ঋণ দেওয়া বন্ধ। ঋণ দেওয়া বন্ধ থাকায় শুকিয়ে গিয়েছে আয়ের উৎস। ফলে, বন্ধ হয়েছে নতুন ঋণ দেওয়া। এই চক্রে পড়ে ধুঁকছে রাজ্যের একাধিক কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক। আবার ব্যাঙ্ক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ না পেয়ে চাষিরা চলে যাচ্ছেন মহাজনদের কাছে। ফলে, ব্যাঙ্কের বাজারও খারাপ হচ্ছে।

কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ২৬টি কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক রয়েছে। সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগেও তারা প্রায় প্রত্যেকেই লাভের মুখ দেখত। কিন্তু গত কয়েকটি অর্থ-বর্ষে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ব্যাঙ্কই লোকসানে চলছে। দফতরের তথ্য বলছে, এখন রাজ্যে এই ব্যাঙ্কের মাত্র তিনটি শাখা লাভে চলছে—বর্ধমান সদর, মালদহ সদর ও পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি। বাকিগুলির লোকসান কোটি কোটি টাকা। সব ব্যাঙ্ক মিলিয়ে লোকসানের পরিমাণ প্রায় একশো কোটি টাকা।

এই অবস্থায় ব্যাঙ্কগুলি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সে প্রশ্নই ঘুরছে রাজ্যের সমবায় দফতরের জেলা ও রাজ্য স্তরে। রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী জ্যোতির্ময় কর আশার সুরে বলছেন, ‘‘কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির পুনরুজ্জীবন সম্ভব। সরকার আর্থিক বরাদ্দ করে, তা করার চেষ্টা করছে।’’ কৃষি ও সমবায় ব্যাঙ্কগুলি ‘ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট’ (নাবার্ড)-এর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তা কৃষিক্ষেত্রে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, পাম্প কেনার জন্য চাষিদের ঋণ হিসেবে দেয়। নাবার্ড ঋণের জন্য ব্যাঙ্কের থেকে যে হারে সুদ নেয়, ব্যাঙ্ক তার থেকে কিছুটা বেশি সুদ আদায় করে চাষিদের থেকে। এটাই তাদের আয়ের মুখ্য উৎস। কিন্তু ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার ফলে ব্যাঙ্কগুলির আয়ের সেই উৎস বন্ধ।

বেহাল আর্থিক দশার জন্য ব্যাঙ্কগুলি চাষিদের গত কয়েকটি অর্থবর্ষে সে ভাবে কৃষি ঋণ দেয়নি। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে নদিয়া জেলা কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক এক টাকাও ঋণ দেয়নি। একই অবস্থা উত্তর চব্বিশ পরগনার। মুর্শিদাবাদের কান্দি ব্যাঙ্কও চাষিদের ঋণ দেয়নি। রাজ্যের কৃষিপ্রধান জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম হুগলি। সেখানকার ব্যাঙ্ক কৃষিক্ষেত্রে ঋণ দিয়েছে মাত্র ২১ লক্ষ টাকা।

ব্যাঙ্কগুলি কেন ঋণ দিচ্ছে না? প্রশাসন সূত্রের দাবি, তার অন্যতম কারণ—বছর দশেক ধরে একাধিক কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের অনেক ঋণ অনাদায়ী হিসেবে পড়ে রয়েছে। তারপর থেকে ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে না। এত ঋণ অনাদায়ী হয়ে পড়ে থাকছে কেন? ব্যাঙ্ক ও প্রশাসন সূত্রের খবর, কিছু কর্মী এবং দুষ্ট চক্রের যোগসাজসে চাষি নন, এমন অনেকে চাষের কাজে ব্যবহারের নামে ঋণ পেয়ে গিয়েছেন। পরে সেই ঋণের টাকা ব্যাঙ্ক আর ফেরত পায়নি।

ঋণ না দেওয়ার আর এক কারণ হল, দীর্ঘদিন ধরে কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির একটা বড় অংশে কোনও পরিচালন সমিতি ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী, ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা রয়েছে পরিচালন সমিতির কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে তৈরি ঋণ অনুমোদন কমিটির। কিন্তু তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পুরনো পরিচালন সমিতিগুলি ভেঙে দেওয়া হয়। নতুন কমিটি হয়েছে সবে মাসখানেক। ফলে, একটা দীর্ঘ সময় ব্যাঙ্কগুলি ঋণ প্রস্তাব পাশ করাতে পারেনি। তা ছাড়া, পরিচালন সমিতি না থাকলে অডিটের কাজও ঠিকঠাক করা যায় না। অন্য দিকে নাবার্ডের শর্তই হল, ব্যাঙ্কের অডিট ‘আপডেট’ না থাকলে নতুন করে মিলবে না ঋণ। ফলে, ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না পেয়ে অনেক চাষিই মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছেন। নদিয়ার চাপড়া এলাকার চাষি আনোয়ার শেখের অভিজ্ঞতা, ‘‘মাস ছ’য়েক আগে কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কে গিয়‌েছিলাম, ট্রাক্টর কেনার জন্য ঋণ নিতে। কিন্তু সেখান থেকে বলা হল, এখন ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে না।’’ আনোয়ারের দাবি তাঁর মতো অনেকেই ঋণ না পেয়ে ব্যাঙ্ক-বিমুখ।

এই অবস্থায় ব্যাঙ্কগুলির কী হবে? মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ আদায় হয়নি। চাষিদের ঋণও ঠিকমতো দেওয়া যায়নি। পরিচালন সমিতি না থাকার ফলেও নানা সমস্যা হয়েছিল। আমরা ব্যাঙ্কগুলিকে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবই।’’

development bank trouble loan Manirul seikh Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy