Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দোকান তুলতে অভিযান, কখনও এমন হয়নি, ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের

দোকান তুলতে পৌষমেলার মাঠে বিশ্বভারতীর অভিযান নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।

রবিবার দুপুরেও চলল বিকিকিনি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

রবিবার দুপুরেও চলল বিকিকিনি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

বাসুদেব ঘোষ 
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৩১
Share: Save:

দোকান তুলতে পৌষমেলার মাঠে বিশ্বভারতীর অভিযান নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। অনেকে রবিবারের ঘটনার পরে এরপরে পৌষমেলায় না আসার হুমকিও দিয়েছেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, যাঁরা বেচাকেনা করছিলেন তাঁদের দোকান থেকেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

শুক্রবারই এ বারের চার দিনের পৌষ মেলা শেষ হয়েছে। মেলা গোটানোর জন্য আরও দু’দিন সময় দেওয়া হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। একইসঙ্গে বিশ্বভারতীর তরফ থেকে বলা হয়েছিল, মেলা শেষের পর মেলায় আর কোনওভাবে বেচাকেনা করা যাবে না। কিন্তু শনি ও রবিবার মেলায় চলে দেদার কেনাবেচা। বেচাকেনা আটকাতে শনিবারই বিশ্বভারতীর তরফ থেকে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাতেও বেচাকেনা আটকানো যায়নি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, যাতে কোনওভাবে পর্যটকেরা মেলায় প্রবেশ করতে না পারেন সে জন্য মেলা মাঠের দুটি গেট শনিবার সকাল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যা থেকে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনের রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্যারিকেড দিয়ে। এত কিছু সত্ত্বেও শনিবার রাতে পৌষ মেলায় আগত বেশ কিছু পর্যটককে মেলার গেট টপকে প্রবেশ করতে দেখা যায় মেলা মাঠে। রবিবার দুপুর অবধিও দেদার চলে বেচাকেনা।

এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ হঠাৎই বিশ্বভারতী তরফ থেকে মেলায় কেনাবেচা আটকাতে মেলা প্রাঙ্গণে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্বভারতীর আধিকারিক, মেলা কমিটির সদস্য, এক্স সার্ভিস ম্যানের দলকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়। উপাচার্যের উপস্থিতিতেই মেলা প্রাঙ্গণে কারও খাবারের দোকানে উনুন নিভিয়ে দিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয় সিলিন্ডার। গুছিয়ে রাখা পোশাকের পেটিও ভ্যানে চাপিয়ে বিশ্বভারতীর ক্যাম্প অফিসে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। অনেক দোকানের ঝাঁপও ছিড়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠে এদিন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এর জেরে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হল তাঁদের।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হলেও তার আগেই নিয়মবহির্ভূতভাবে দোকানে দোকানে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু খাবারের দোকান থেকে সিলিন্ডার, জামাকাপড়ের দোকান থেকে বিভিন্ন ধরনের পোশাক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়। বাঁকুড়া থেকে আসা ব্যবসায়ী মদনগোপাল পাল বলেন, ‘‘মেলা তুলে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল বিশ্বভারতী। সেইমতো আমরা আজ সমস্ত জিনিস গোটানোর কাজ করছিলাম। হঠাৎই বিশ্বভারতীর লোকজন এসে আমার দোকান থেকে দু’বস্তা জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। এই অবস্থায় আমরা এখন কোথায় যাবো?’’ একই ঘটনা ঘটেছে বোলপুরের ব্যবসায়ী গৌতম সাউ ও বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁদেরও এক বস্তা করে পোশাকের সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে বিশ্বভারতী। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা মাঠ খালি করে দেওয়ার জন্য জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলাম। হঠাৎই বিশ্বভারতীর লোকজন এসে আমাদের বেশ কিছু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। এখন আমরা কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’’ পৌষ মেলায় আসা অনেক ব্যবসায়ীকেই এ দিন বলতে শোনা যায়, ‘‘বহু বছর ধরে পৌষমেলায় আসছি। এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। আমাদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করলে আমরা অনেকেই সামনে বছর থেকে মেলায় আসব না।’’ এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘মেলা তুলে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল বিশ্বভারতীর তরফ থেকে। কিন্তু তার আগেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যেভাবে ব্যবসাদারদের উপর তাণ্ডব চালিয়েছেন সেই ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা করছি।’’

শনিবার রাতে গেটের ফাঁক গলে , টপকে মাঠে ঢোকার চেষ্টা । ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘শনিবার আমরা ব্যবসায়ীদের করজোড়ে অনুরোধ করেছি মেলায় বেচাকেনা বন্ধ করার জন্য এবং দ্রুত মেলা মাঠ খালি করে দেওয়ার জন্য। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন স্বাভাবিকভাবে চালু করা যেতে পারে। কিন্তু এরপরেও রবিবার যে সমস্ত দোকান-পাট খোলা রেখে বেচাকেনা চলছিল, সেই গুলি থেকে আমরা কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছি।’’ আজ, সোমবার সকাল থেকে মেলা মাঠে তাঁরা সাফাই অভিযান শুরু করবেন বলেও দাবি করেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Visva Bharati Poush Mela পৌষ মেলা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE