Advertisement
E-Paper

থেমেছে ভোট, থামছে না হিংসা

কোথাও সিপিএম কর্মীকে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি, কোথাও বিজেপি নেতাকে মারধর, কোথাও বা কংগ্রেস প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের বাড়ির জলের লাইনে কোপ!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০৩:২১

কোথাও সিপিএম কর্মীকে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি, কোথাও বিজেপি নেতাকে মারধর, কোথাও বা কংগ্রেস প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের বাড়ির জলের লাইনে কোপ!

ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস অব্যাহত শেষ দফা ভোটের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে। শিলিগুড়িতেও নতুন ভাবে গোলমাল হয়েছে। এবং সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের নিশানায় শাসক দল। খেজুরিতে গুলি চালানোর ঘটনায় শুক্রবার রাতে ঘোলাবাড় গ্রাম থেকে রতিউর রহমান নামে এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের কাছ একটি পিস্তলও উদ্ধার হয়েছে। তবে, কোচবিহারে গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি।

ভোট ঘিরে হিংসার পরম্পরা বন্ধ করতে এ বার বিরোধীরা নানা ভাবে বার্তা দিচ্ছে। সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ফের বলেছেন, ‘‘মানুষকে বলছি, কোনও ভাবেই প্ররোচনায় পা দেবেন না।’’ তবে, বিরোধীদেরই একটা অংশ দাবি করছে, ভোট চলাকালীনই ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়া’র যে হুঁশিয়ারি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দিয়েছেন, ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসে তারই প্রতিফলন ঘটছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথার ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে বারবার। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়া বলতে উনি রাজনৈতিক লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন। এর সঙ্গে হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ তবে, একই সঙ্গে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কর্মীদের মধ্যে যাঁদের শিরদাঁড়া সোজা, তাঁরা রাজনৈতিক ভাবেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবেন। সরকার এখনও আমাদের। আমাদের সরকারই আসবে। এমন কোনও কাজ করা চলবে না, যাতে সরকার বিব্রত হয়।’’ দলের মহাসচিব এই হুঁশিয়ারি দিলেও তৃণমূলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের কাছে তা কতটা পৌঁছচ্ছে, সে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। কেননা, শুক্রবার নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি বাপ্পা দাস ও তাঁর বাবা মধুসূদনবাবুকে মারধরের

অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শিমুলকুণ্ডু গ্রামের বাপ্পা ও তাঁর ভাই সাহেব বিজেপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করায় ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে অভিযোগও হয়েছে। সাহেব বলেন, ‘‘দাদাকে বাড়ি থেকে কিছু দূরে একটি খালের ধারে নিয়ে গিয়ে রড, বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয়েছে। শূন্যে গুলি ছোড়া হয়। আমি কোনও মতে পালাই।’’ অভিযোগ উড়িয়ে ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পালের দাবি, ‘‘মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে আমাদের দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

পাঁশকুড়ায় আবার জোটপ্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হওয়ার ‘অপরাধে’ প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর কল্যাণ রায়ের বাড়ির জলের লাইন কেটে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কল্যাণবাবুর দাবি, ‘‘তৃণমূলের বিরোধিতা করার জন্যই ওদের পুরসভা এমন করল।’’ পক্ষান্তরে, পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের জাকিউর রহমান খানের দাবি, ‘‘কল্যাণবাবুর বাড়ির পাইপলাইন থেকে কয়েকটি বাড়িতে জল বিক্রি করা হতো। তাই ওই জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’

শাসক দলের নিষেধ উড়িয়ে ভোট দিতে যাওয়ায় ভগবানপুরে দক্ষিণ বরোজ গ্রামের রামপদ দলুই ও স্বদেশ দলুইয়ের বাড়িতে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। শনিবার ভূপতিনগর থানায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। শুক্রবার রাতে রামনগর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের বকশিসপুর বুথের পোলিং এজেন্ট ইন্দ্রনীল গুছাইতও প্রহৃত হন। আবার শিলিগুড়ির ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যাম যাদব নামে এক সিপিএম কর্মীকে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে জয়প্রকাশ চৌহান নামে এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই তৃণমূল নেতা। স্থানীয় ওই সব নেতার সুরে পার্থবাবুও দাবি করেছেন, ‘‘সিপিএম বাড়াবাড়ি করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছে। তৃণমূলকে বদনাম করতে চাইছে।’’

পার্থবাবু সিপিএমের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করলেও খেজুরির ঘটনায় তাঁর দলের নেতাকেই পুলিশ ধরেছে। শুক্রবার বিকেলে ঘোলাবাড়ে গুলিবিদ্ধ হন শেখ মুসুদ নামে এক তৃণমূল সমর্থক। সেই ঘটনায় মুসুদের ভাই হাসিবুর রহমান খেজুরি থানায় শেখ আশিক, রতিউর রহমান-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ধৃত রতিউরকে শনিবার কাঁথি আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। মুসুদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। দলেরই নেতা গ্রেফতার হওয়ায় খেজুরির প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।’’

ও দিকে, কোচবিহারে সিপিএম কর্মীর বাড়ি লক্ষ করে গুলি চালানোর ঘটনায় কেউ ধরা না পড়ায় আন্দোলনে নেমেছে বাম-কংগ্রেস জোট। শনিবার বিকেলে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার বাবুরহাট এলাকায় মিছিল হয়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব জানিয়েছেন, অভিযোগে নির্দিষ্ট ভাবে কারও নাম বলা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

assembly election 2016 congress tmc CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy