Advertisement
১৮ মে ২০২৪
অভিযোগ কুলটিতে

আন্দোলনের জেরে ব্যাহত উৎপাদন

এই কারখানার সূচনা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। তখন তিনি রেলমন্ত্রী। নানা টালবাহানার পরে সবে আশার আলো দেখেছিল সেই কুলটির ওয়াগন কারখানা। মঙ্গলবার থেকে শুরুও হয়েছিল কাজ। কিন্তু, শুরুতেই ধাক্কা খেল সে প্রক্রিয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কুলটি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১১
Share: Save:

এই কারখানার সূচনা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। তখন তিনি রেলমন্ত্রী। নানা টালবাহানার পরে সবে আশার আলো দেখেছিল সেই কুলটির ওয়াগন কারখানা। মঙ্গলবার থেকে শুরুও হয়েছিল কাজ। কিন্তু, শুরুতেই ধাক্কা খেল সে প্রক্রিয়া।

স্থানীয়দের নিয়োগের দাবি তুলে মুখ্যমন্ত্রীর দলেরই শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র আন্দোলন এবং হুমকির জেরে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ করলেন আসানসোলের এই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার কর্তৃপক্ষ। একই অভিযোগ উঠেছে আর এক শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, গত কয়েক বছরে পরের পর কারখানা বন্ধ হয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। পুজোর আগেই রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান কেবলসের ঝাঁপ ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কুলটি ওয়াগন কারখানার উৎপাদন কিছুটা হলেও অক্সিজেন জুগিয়েছিল এলাকায়।

এই আন্দোলন সেই আশাতেই জল ঢালবে না তো!

উৎপাদনশূন্য কুলটি ইস্কো কারখানায় রেল-সেলের যৌথ উদ্যোগে ওয়াগন কারখানা তৈরির প্রথম প্রস্তাব রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক হয়, কুলটি ইস্কোর বন্ধ হয়ে যাওয়া স্প্যান পাইপ বিভাগের জমিতে রেলের অধিগৃহীত সংস্থা রাইটস এবং সেলের যৌথ উদ্যোগে ওয়াগন কারখানা তৈরি করা হবে। ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি কারখানার শিলান্যাস করেন। কারখানার নাম দেওয়া হয় ‘সেল-রাইটস বেঙ্গল ওয়াগন ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড’। পরের বছর কারখানার ছাউনি তৈরি ও যন্ত্রাংশ বসানোর কাজে হাত পড়ে। সময় মতো সে সব শেষও হয়। কিন্তু, পাঁচ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উৎপাদন শুরু না হওয়ায় হতাশা ক্রমেই গ্রাস করছিল শ্রমিক-কর্মী এবং এলাকার মানুষকে।

এ সপ্তাহে সেই কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছিল সব মহলে। ১৬ ওয়াগনের পুরনো একটি রেক পুননির্মাণের জন্য কারখানাকে বরাত দেয় রেল বোর্ড। মঙ্গলবার থেকে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এবং বৃহস্পতিবার থেকেই স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে কারখানার গেটে পৃথক ভাবে পিকেটিং শুরু করে তৃণমূল ও আইএনটিইউসি। শুক্রবার দু’পক্ষই কারখানার গেটে শিবির বানিয়ে সংগঠনের পতাকা টাঙিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুশান্ত ভট্টাচার্যের অভিযোগ, উৎপাদনের জন্য বাইরে থেকে বেশ কয়েক জন কারিগরি বিশেষজ্ঞকে আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভকারীরা ঢুকতে বাধা দেওয়ায় তাঁরা ভয়ে কারখানামুখো হচ্ছেন না। কারখানার উৎপাদন মার খাচ্ছে। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘কাজের শুরুতে এমন আন্দোলন হলে সংস্থা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হবে।’’ পুলিশের কাছে তাঁরা লিখিত অভিযোগ না করলেও মৌখিক ভাবে নিরাপত্তার আবেদন করেছেন।

আইএনটিটিইউসি-র সর্বভারতীয় সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনার রিপোর্ট আমরা পাইনি। তবে, নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ওখানে যে সমস্যা হচ্ছে, তার সঙ্গে তৃণমূল বা তৃণমূল অনুমোদিত আইএনটিটিইউসি-র কোনও ইউনিটের যোগ নেই। ওখানকার কর্তৃপক্ষ মাঝেমাঝেই উৎপাদন বন্ধ রাখেন। হয়তো লোকসান সামাল দিতেই এটা ওঁদের কৌশল।’’

তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওখানে যাঁরা শ্রমিক সংগঠনের পতাকা টাঙিয়ে আন্দোলন করছেন, তাঁদের জানা উচিত, এই কারখানা তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎপাদন সবে শুরু হয়েছে। এখনই এই ধরনের আন্দোলন দল বরদাস্ত করবে না।’’ স্থানীয়দের নিয়োগ নিয়ে দলের কুলটি ব্লক সভাপতি এবং স্থানীয় বিধায়ক কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও তিনি জানান। আইএনটিইউসি-র বর্ধমান জেলার সাধারণ সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আধিকারিকদের হুমকি দিয়ে কারখানায় ঢুকতে বাধা দেওয়ার ঘটনা সমর্থন করি না। নিয়োগের দাবি জানানোর পাশাপাশি কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee wagon factory Worker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE