সাফাই হয়নি রূপনারায়ণের চর। গাদিয়াড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
যেখানে খাওয়া দাওয়া চলছে তারই চারপাশেই ফেলা রয়েছে আবর্জনা। কোথাও আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া নদীর ধার। সব মিলিয়ে শীতের মরসুমে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনায় এবং উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হাওড়া জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলি নোংরা-আবর্জনায় বেহাল। পাশাপাশি নদীর ধারে যে সব পর্যটনকেন্দ্রগুলি রয়েছে সে সব ক্ষেত্রে নদীতে নোংরা পড়ার ফলে দূষিত হচ্ছে জল।
জেলার পযটনকেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম শ্যামপুরের গড়চুমুকের ৫৮ গেট ও গাদিয়াড়া। শীত পড়তে না পড়তেই এই সব জায়গায় জেলা ও তার বাইরে থেকে ভিড় শুরু হয় পিকনিক পার্টি ও পর্যটকদের। গড়চুমুকে চড়ুইভাতির পাশাপাশি মিনি চিড়িয়াখানায় হরিণ, ময়ূর, কুমির, সজারু বাড়তি আকর্ষণ হওয়ায় এখানে ভিড়ও বেশি হয়। থাকার ব্যবস্থা থাকায় অনেকে এখানে ছুটি কাটাতেও আসেন। ইতিমধ্যেই শুধু গড়চুমুকেই লক্ষাধিক পযটক হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। এ ছাড়া গাদিয়াড়া, নাওপালা, ফুলেশ্বর সেচ বাংলো, মহিষরেখা রয়েছে। সব মিলিয়ে লাখ খানেক পর্যটকের ভিড় হয়েছে ওই সব পযটন কেন্দ্রগুলোতে।
কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই নোংরা ফেলা নিয়ে ছবিটা একই। সবকটি জায়গাই দূষণে জেরবার। সম্প্রতি গড়চুমুকে গিয়ে সেটাই দেখা গেল। দামোদরের ধারে এই পর্যটন কেন্দ্র চড়ুইভাতির জন্য বিখ্যাত। কিন্তু নোংরা, আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গার অভাব থাকায় সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে নোংরা। নদীর ধারের অবস্থা আরও খারাপ। বেশিরভাগ অংশ জুড়েই ছড়ানো পর্যটকদের ফেলে যাওয়া থামোকলের নোংরা বাসন, পেয়ালা, প্লাস্টিকের গ্লাস সহ নানা বর্জ্য। কুকুর, বেড়াল সে সব আরও এখানে ওখানে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা নানা প্রয়োজনে নদীর জল ব্যবহার করেন। কিন্তু বছরের এই সময় নদী এত নোংরা হয় যে তাঁরা সমস্যায় পড়েন। অথচ প্রশাসনের তরফে কোনওরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাঁদের আরও অভিযোগ, গড়চুমুক, গাদিয়া়ড়া প্রভৃতি জায়গায় পিকনিক করার জন্য প্রশাসন টাকা নেয়। কিন্তু ওই সব এলাকা থেকে নোংরা-আবর্জনা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে তাদের প্রচণ্ড গাফিলতি রয়েছে। যার ফলে নদীও দূষিত হচ্ছে।
যদিও গড়চুমুক, গাদিয়াড়া, মহিষরেখা বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অবশ্য দাবি, বছরের এই সময় চড়ুইভাতির জন্য প্রচণ্ড ভিড় হয়। ফলে এই সব জায়গা নোংরাও হয়। কিন্তু সে সব পরিষ্কারও করা হয়। তা ছাড়া, যাঁরা আসেন তাঁদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে প্রচারও চলে। কিন্তু মানুষকেও আরও সচেতন হতে হবে।
জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানস বসু বলেন, ‘‘ওই সব নোংরা ফেলার জন্য স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না পরিকল্পনা হচ্ছে। যে সংস্থাকে ময়লা পরিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলিকেও এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হবে।
নাওপালা পর্যটনকেন্দ্র যে পঞ্চায়েত এলাকায় সেই ওরফুলির প্রধান শ্রীকান্ত সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টা জানি না। তবে এমন অবস্থা হলে পঞ্চায়েতের তরফে ওখানকার ময়লা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হবে।’’
তবে প্রশাসনের উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতারও যে অভাব রয়েছে, তাও চোখে পড়ল গাদিয়াড়ায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ থেকে একদল পর্যটক এসেছিলেন চড়ুইভাতি করতে। দেখা গেলে খাওয়া-দাওয়ার সেখানেই উচ্ছিষ্ট ফেলে চলে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন।
নিদির্ষ্ট জায়গায় ময়লা না ফেলে নোংরা করছেন কেন?
এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে দলের এক প্রবীণের উত্তর, ‘‘নোংরা ফেলার জায়গা না থাকলে কোথায় ফেলব বলুন তো! ’’ তাঁর কথা শুনে এদিক ওদিক ঘুরে অবশ্য চোখে পড়ল না কোনও নোংরা ফেলার জায়গা। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, নিয়মিত নোংরা পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু নোংরা ফেলার জায়গা কি আরও বেশি করে দেওয়াযান না? কতৃপক্ষের দাবি, এখানে বহু বার প্লাস্টিকের বা টিনের ড্রাম রাখা হয়েছিল। পযটকরা যাতে সেখানে নোংরা ফেলতে পারেন সে জন্য। কিন্তু দেখা গিয়েছে পর্যটকরা নোংরা ফেলার বদলে ড্রামগুলি নিয়ে চলে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy