Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বিজেপির ‘গর্জনের’ আগে জল, কাঁদানে গ্যাসের বর্ষণ

বিজেপির অভিযানের বিরোধিতা করে তৃণমূলের যুব সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওরা গেছে কেন? যারা সন্ত্রাস করে, তারাই আবার অভিযান করছে!

বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের জল-কামান। বুধবার ফিয়ার্স লেনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের জল-কামান। বুধবার ফিয়ার্স লেনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

প্রতিরোধের বহর ছাড়িয়ে গেল প্রতিবাদের মাত্রা। নেতারা বৌবাজার পৌঁছনোর আগেই জল-কামান, কাঁদানে গ্যাস এবং পরে মৃদু লাঠি চার্জ করে বিজেপির লালবাজার অভিযান আটকে দিল পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল রায়, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিজেপির কয়েক জন নেতা। রাজু এবং বিজেপির মহিলা মোর্চার ছ’জন কর্মী-সহ মোট ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিল বলে বড়সড় গণ্ডগোল হয়নি। শাসক দল আমাদের সংখ্যাকে ভয় পাচ্ছে। তাই মিছিল গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই প্রতিরোধ করা হল।’’

বিজেপির অভিযানের বিরোধিতা করে তৃণমূলের যুব সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওরা গেছে কেন? যারা সন্ত্রাস করে, তারাই আবার অভিযান করছে! আমাদের অস্ত্র শান্তি, ওদের অস্ত্র সন্ত্রাস।’’

বুধবার বেলা ১২টার সময় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে সন্দেশখালি-কাণ্ড-সহ ভোট-পরবর্তী হিংসার প্রতিবাদে মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল বিজেপির। তবে শেষ পর্যন্ত তা শুরু হয় বেলা দেড়টা নাগাদ। মিছিলের অভিমুখ ছিল বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ পেরিয়ে লালবাজারের দিকে। তবে পুলিশের তরফ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ফিয়ার্স লেনের মুখেই মিছিল আটকে দেওয়া হবে। সেই মতো সকাল থেকে নিশ্ছিদ্র ব্যারিকেডের ব্যবস্থাও রেখেছিল পুলিশ। ছিল জল-কামান, ইলেকট্রিক শক লাগে এমন ঢাল ও লাঠি এবং কাঁদানে গ্যাস।

বিজেপির মিছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছয় বেলা সোয়া দু’টো নাগাদ। মিছিলের একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন কিছু কর্মী-সমর্থক। তার ঠিক পিছনেই ছিলেন রাজ্য থেকে নির্বাচিত দলের বহু সাংসদ, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, মুকুলবাবু প্রমুখ। তার পিছনের সারিতে ছিলেন দিলীপবাবু এবং রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিবার। নেতারা যখন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছন, মিছিলের মুখ তখন সবেমাত্র ফিয়ার্স লেনে ঢুকেছে। তখনই অতর্কিতে জল-কামান ব্যবহার করতে শুরু করে পুলিশ। হুড়োহুড়ি শুরু হয় তখনই। আর তার মিনিট কয়েকের মধ্যেই ব্যারিকেডের পিছন থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। বিশৃঙ্খলার মধ্যেই সেই শেল এসে পড়ে মুকুলবাবুর পায়ের কাছে। প্রবল ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় দ্রুত তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান তাঁর ছেলে তৃণমূল-ত্যাগী বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়।

অন্য দিকে, সেই একই সময়ে আর একটি শেলে আহত হন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু। রাস্তার উপরেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন তিনি। দলের কর্মীরা তাঁকে তুলে নিয়ে যান একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এ দিন রাত পর্যন্ত হাসপাতালেই ছিলেন তিনি। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। ঘটনায় আহত হয়েছেন দলের মহিলার মোর্চার কর্মীরাও। সন্ধ্যায় হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান কৈলাস এবং মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।

পুলিশ মিছিল আটকে দিলে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মোড়ে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন বিজেপি নেতারা। কৈলাস বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানসিক স্থিতি হারিয়েছেন। না হলে শান্তিপূর্ণ মিছিলে কোনও প্ররোচনা ছাড়াই কাঁদানে গ্যাস, জল-কামান ছোড়া হত না। পুলিশের বেপরোয়া আচরণ গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জাকর।’’ প্রায় আধ ঘণ্টা রাস্তায় বসে ছিলেন বিজেপি নেতারা। পরে পুলিশ ঘোষণা করে, সমবেত বিজেপি সদস্যদের ওই জায়গাতেই গ্রেফতার করে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হল। ওই প্রতীকী গ্রেফতার এবং মুক্তির পরে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ৫০ হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করে মুক্তি দিয়েছে পুলিশ।’’ পুলিশ অবশ্য লালবাজার অভিযানে অংশগ্রহণকারী বিজেপি নেতা-কর্মীর সংখ্যা সরকারি ভাবে ঘোষণা করেনি। তবে এক পুলিশকর্তার দাবি, জমায়েত ১০-১২ হাজারের বেশি ছিল না।

পুলিশের পাশাপাশি কিছু ‘বাইরের লোক’ও বিজেপির মিছিলে আক্রমণ করে বলে এ দিন অভিযোগ করেন মুকুলবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আশপাশের বাড়িগুলি থেকে মিছিলের দিকে ইট ছুড়তে আমি নিজে দেখেছি। ইট মেরে আমাদের কর্মীদের উত্তেজিত করার চেষ্টা হয়েছিল। তাঁরা সেই প্ররোচনায় পা দেননি। বস্তুত, মুকুলবাবু-সহ বিজেপির অনেক নেতারই বক্তব্য, তাঁদের দল রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় আসতে চলেছে। অতএব, এখন তাদের আচরণ হওয়া উচিত সংযত। সেই জন্যই এ দিন কর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মুকুলবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের কর্মীরা বিশৃঙ্খলা করলে শহরে আগুন লেগে যেত। কিন্তু দল সকলকেই শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। কারণ, আমরা সরকারে আসতে চলেছি। এখন আমাদের আচরণ নিয়ন্ত্রিতই হওয়া উচিত।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Lalbazar Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE