Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ফণীর ছোবল সামলাতে সতর্কতা কলকাতাতেও

এক দশক আগে মে মাসেই পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়েছিল আয়লা। তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।

‘এক্সট্রিমিলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে খাস কলকাতাও!—ফাইল চিত্র।

‘এক্সট্রিমিলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে খাস কলকাতাও!—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ০২:৩৬
Share: Save:

পরিত্রাহি দহন থেকে বাঁচার আশা জাগিয়েছিল ফণী। কিন্তু বাঁচাবে কি, এ বার ওই ঘূর্ণিঝড়ের রক্তচক্ষুতে মহা-আশঙ্কা জপতে শুরু করেছে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ। ঝড়ে গাঙ্গেয় বঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি ওই ‘এক্সট্রিমিলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে খাস কলকাতাও!

এক দশক আগে মে মাসেই পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়েছিল আয়লা। তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের মঙ্গলবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ বার মূলত শুক্র থেকে রবিবার পর্যন্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলি অর্থাৎ কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়া, হুগলিতে শুক্র ও শনিবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিপজ্জনক এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরানো, দিঘা, মন্দারমণি, বকখালিতে সৈকত পর্যটন বন্ধ রাখা এবং পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার কথাও বলা হয়েছে। সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শুক্রবার উপকূলীয় জেলাগুলিতে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৫ কিলোমিটার হতে পারে। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটারের মাত্রা ছুঁতে পারে শনিবার। হাওয়া অফিসের খবর, মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মূলত ওড়িশায় ঢুকবে ফণী। পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছতে পৌঁছতে তার শক্তি বেশ কিছুটা ক্ষয়ে যেতে পারে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, ফণী এ দিন বিকেলে বিশাখাপত্তনম থেকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দূরে ছিল। এ দিনই সে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছে। এগোচ্ছে ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার বেগে। এগোতে এগোতে সে বাঁক নেবে এবং শক্তি বাড়িয়ে চেহারা নেবে মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের। কাল, বৃহস্পতিবার রাতে ওড়িশার গোপালপুর ও চাঁদবালির মাঝখান দিয়ে ফণী ঢুকবে স্থলভূমিতে। তখন তার সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার। সামান্য শক্তি খুইয়ে শুক্রবার সে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকাগুলির উপর দিয়ে বাংলাদেশের দিকে বয়ে যাবে। সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে শক্তি আরও খানিকটা খুইয়ে গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিতে পারে ফণী।

ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই তরফেই তৎপরতা চলছে। মুখ্যসচিব মলয় দে নবান্নে বিপর্যয় মোকাবিলা, উপকূলরক্ষী বাহিনী, সেচ, পুলিশ-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব এ দিন দিল্লি থেকে উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিবদের সঙ্গে ভিডিয়ো-সম্মেলন করেন। সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। নবান্নের এক কর্তা জানান, কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকদের বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জেলায় জেলায় মাইকে প্রচার চলছে এবং ১০ হাজার বাড়তি ত্রিপল পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান।

ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি যাতে যথাসম্ভব কম হয়, সেই বিষয়ে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি পি কে সিন‌্‌হার নেতৃত্বে এ দিন একাধিক বার বৈঠকে বসে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটি। বিপর্যয় মোকাবিলায় উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির জন্য ১০৬৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ ২৩৫.৫০ কোটি। চার রাজ্যে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। ওড়িশায় প্রস্তুত থাকছে ২৮টি দল। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে যথাক্রমে আট এবং পাঁচটি দল মোতায়েন করা হবে। সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীকেও।

২০১৩ সালে দুর্গাষ্টমীর রাতে ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার বেগে ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল ভয়াল ঘূর্ণিঝড় পাইলিন। অনেকে তার সঙ্গে ফণীর তুলনা টানতে চাইলেও মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের বক্তব্য, এ বারের ঘূর্ণিঝড় পাইলিন নয়, হুদহুদ-এর চেহারা নিতে পারে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে হুদহুদের হানায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল বিশাখাপত্তনম শহর।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কাছে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল। সেটিই শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছে। উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলির মধ্যে ক্রমান্বয়ে ঘূর্ণিঝড়ের যে-নামের তালিকা রয়েছে, সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের দেওয়া ‘ফণী’ নাম জুটেছে এর কপালে। প্রশ্ন উঠছে, ফণী মারাত্মক চেহারা নিল কেন?

মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানান, বর্ষার আগে এবং পরে ঘূর্ণিঝড় বেশি তৈরি হয়। তার উপরে বর্তমানে সাগরের জল উষ্ণ রয়েছে। জলীয় বাষ্প শুষে ঘোরালো হচ্ছে পরিস্থিতি। ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হওয়ার জন্য বায়ুচাপের ফারাক-সহ আবহজনিত আরও যে-সব উপাদান দরকার, রয়েছে তা-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE