Advertisement
E-Paper

কংগ্রেসের ৭৫, হোঁচট সামলাতে দৌত্য দিল্লিতে

কংগ্রেসের জন্য জায়গা ছেড়ে রেখে প্রথম পর্যায়ে ১১৬টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বামফ্রন্ট। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ৭৫টি আসনের তালিকা প্রকাশ্যে আনল প্রদেশ কংগ্রেস। আপাতদৃষ্টিতে কংগ্রেসের পদক্ষেপে সমঝোতার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৫:১৬

কংগ্রেসের জন্য জায়গা ছেড়ে রেখে প্রথম পর্যায়ে ১১৬টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বামফ্রন্ট। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ৭৫টি আসনের তালিকা প্রকাশ্যে আনল প্রদেশ কংগ্রেস। আপাতদৃষ্টিতে কংগ্রেসের পদক্ষেপে সমঝোতার ইঙ্গিত স্পষ্ট। কিন্তু একই সঙ্গে তাদের জন্য ছেড়ে রাখা জায়গার বাইরেও পা ফেলতে চেয়েছে কংগ্রেস! যার ফলে শেষ মুহূর্তে দুই শিবিরের টানাটানি হঠাৎ চরমে উঠেছে।

রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরে মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী শুধুই আসনের নাম ঘোষণা করেছেন। প্রার্থীর নাম পরে ঘোষণা হবে দিল্লি থেকে! কংগ্রেসের এমন পদক্ষেপের মধ্যে চাপ বাড়ানোর খেলাই দেখছে বাম শিবির। তার উপরে বাড়তি প্রশ্ন উঠে গিয়েছে পুরুলিয়ার জয়পুর আসন নিয়ে। বামেদের ঘোষিত ১১৬ এবং কংগ্রেসের ঘোষিত ৭৫— দুই তালিকার মধ্যেই রয়েছে জয়পুর!

বাম শিবির এমন ঘোষণার মধ্যে কথার খেলাপের ইঙ্গিত দেখছে। শরিক ফরওয়ার্ড ব্লককে বাঘমুণ্ডি আসন ছেড়ে দিতে রাজি করানোর পরেই জয়পুরে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল আলিমুদ্দিন থেকে। কংগ্রেসের জন্য ছাড়া হয়েছিল পুরুলিয়া, বাঘমুণ্ডি ও বলরামপুর। এই রফা-সূত্রের কথা প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ জানতেন। তার পরেও বিধান ভবন থেকে ওই তিনটির পাশাপাশি জয়পুরের নাম ঘোষিত হওয়ায় বিস্মিত বাম শিবির! পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লিতে ফের কথা বলছেন কংগ্রেস ও সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

প্রকাশ্যে অধীর এ দিন চেষ্টা চালিয়েছেন বোঝাপড়ার আবহ ধরে রাখতেই। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ প্রচারে তাঁরা যাবেন না। কিন্তু অধীর এ দিন বলেছেন, ‘‘যৌথ প্রচার হলে ভালই হতো! কিন্তু ওঁদের নানা ছুঁৎমার্গ আছে। তবে কংগ্রেসের মঞ্চ সকলের জন্য খোলা।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা নির্বাচনী বোঝাপড়া করেছি রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্যই। দু’পক্ষেরই লক্ষ্য, তৃণমূলকে সরাও। বিজেপি-র বিপদ থেকে দেশকে মুক্ত করো।’’

প্রদেশ সভাপতির বক্তব্যের এই অংশকে স্বাগতই জানাচ্ছেন বাম নেতারা। কিন্তু গোল বেধেছে অন্যত্র। ডোমকল, হরিহরপাড়া ও নবগ্রাম— মুর্শিদাবাদে গত বারের জেতা এই তিনটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে সিপিএম। আলোচনা চলাকালীন কেন ওই তিন আসনে প্রার্থী দেওয়া হল, প্রশ্ন তুলেছিলেন অধীর। তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘হরিহরপাড়া, ডোমকলে প্রার্থী নিয়ে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে শাসক দলের সুবিধা হয়ে যেতে পারে! আমরা আলোচনা চালাচ্ছি।’’ আলোচনায় মীমাংসা না হলে ওই তিন কেন্দ্রে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হবে বলে অধীর জানিয়েছেন।

যা শুনে বাম শরিক নেতারা বলতে শুরু করেছেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ করতে হলে তাঁরাও রফার বাইরে কিছু আসনে প্রার্থী দিয়ে দিলে কী হবে? ফরওয়ার্ড ব্লক যেমন তাদের ভাগের ৩৪টি আসন থেকে অন্তত ৮টি কংগ্রেসের জন্য বলি দিতে রাজি। কিন্তু যে ভাবে রফার পরেও জয়পুরের নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস, তাতে ফ ব নেতারা ক্ষুব্ধ। দলের নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায় কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়াতে বলে রেখেছেন, ‘‘মানুষের ঐক্য তৈরি হওয়ার অভূতপূর্ব পরিস্থিতি এ বার। কিন্তু এ ভাবে চললে সেই ঐক্য ভেঙে যাওয়ার দায় বর্তাবে কংগ্রেসের উপরে!’’ বোঝাপড়ার আলোচনা সত্ত্বেও বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমায় কংগ্রেস কেন আগাম আসন ঘোষণা করছে, সেই প্রশ্নও তুলছে ফ ব। আবার আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী জানিয়েছেন, কংগ্রেসের জন্য মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি ও নদিয়ার একটি আসন তাঁরা ছেড়ে দিতে পারেন। কিন্তু সুতি, নওদা বা বড়ঞার মতো সব আসন ছেড়ে দিতে হলে তো দলটার অস্তিত্বই বিলোপ হয়ে যাবে!

ঘটনাপ্রবাহের এই মোচড়ে ঈষৎ বিরক্ত সিপিএম নেতৃত্বও। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের আক্ষেপ, ‘‘বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও কংগ্রেস আলোচনার জন্য কোনও নির্দিষ্ট দল গড়ে সুনির্দিষ্ট তালিকা দিচ্ছে না। এক এক জন নেতার এক এক রকম মতামত! এ ভাবে চললে আমাদের মধ্যে বিরোধ হবে আর তার ফায়দা নিয়ে যাবে তৃণমূল।’’ বস্তুত, দিল্লিতে এ দিন এআইসিসি নেতাদের কাছে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা বেঁধে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও। আবার হাইকম্যান্ডের তরফে অহমেদ পটেলেরা কথা বলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে। অহেতুক জেদাজেদি ছেড়ে ৮৫-র কম-বেশি আসন কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে যাতে দু’পক্ষের বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়, নিজের নিজের দলকে তা দেখতে বলেছেন দুই শীর্ষ নেতাই।

কংগ্রেসের ঘোষিত তালিকায় এ দিন মুর্শিদাবাদের ২২টির মধ্যে ১৫টি আসনেরই উল্লেখ রয়েছে। কলকাতায় বামেরা যে চারটি আসন কংগ্রেসের জন্য ছাড়তে চায়, তার বাইরেও বালিগঞ্জ আছে তালিকায়। কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া, করণদীঘিও বামেদের ছাড়ার ব্যাপারে বৈঠকে আপত্তি জানিয়েছেন দীপা দাশমুন্সি। কংগ্রেসের তরফে বামেদের কাছে এই কেন্দ্রগুলি পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হতে পারে। কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘এখন তো আসন নিয়ে দর কষাকষি চলছে। এতে বোঝাপড়া ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করা ঠিক নয়!’’

congress assembly election candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy