Advertisement
২৪ মে ২০২৪

হুঁশিয়ারিতে কান দেয়নি রাজ্য সরকার

সারদা গোষ্ঠী যে বেআইনি ভাবে টাকা তুলছে, সে বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সতর্ক করেছিল। সেটা ২০১২ সাল। কিন্তু তার পরে এ বিষয়ে আর কোনও সাড়া শব্দই হয়নি। অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে এমনটাই জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৮
Share: Save:

সারদা গোষ্ঠী যে বেআইনি ভাবে টাকা তুলছে, সে বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সতর্ক করেছিল। সেটা ২০১২ সাল। কিন্তু তার পরে এ বিষয়ে আর কোনও সাড়া শব্দই হয়নি। অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে এমনটাই জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

সারদা-রোজ ভ্যালির মতো রাজ্যের অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্তে সিবিআই ফের তৎপর হয়ে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডা সিবিআইকে জেরার মুখে জানিয়েছেন, তিনি সারদা ও রোজ ভ্যালির থেকে নেওয়া টাকার একাংশ দলের কাজেই লাগিয়েছেন। শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েই তা করেছেন। ঠিক এই সময় আজ স্থায়ী কমিটি সংসদে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে নতুন করে অস্বস্তিতে তৃণমূল শিবির।

কী রয়েছে সেই রিপোর্টে?

স্থায়ী কমিটি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে জানতে চেয়েছিল, তারা কেন সারদা ও এই ধরনের সংস্থার বেআইনি প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার উত্তরে বলেছে, ‘সারদা যে টাকা তুলেছিল, তাকে আমানত বলা যায় না। সারদা গোষ্ঠী রিজার্ভ ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত না হয়েও যে ‘কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’-এ টাকা তুলছে, তা জানিয়ে ২০১২-র ২১ সেপ্টেম্বর রাজ্য পুলিশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এর পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আর কিছুই জানানো হয়নি। কলকাতায় ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির রাজ্য স্তরের সমন্বয় বৈঠকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।’ রাজ্য সরকারও ওই সমন্বয় কমিটির অংশ।


সবিস্তারে পড়তে ক্লিক করুন...

সারদার মতো একের পর এক সংস্থার হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্বান্ত হওয়ার পর এই অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান আইনগুলি কতখানি কার্যকর, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কংগ্রেসের বীরাপ্পা মইলির নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূলের সৌগত রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আজ স্থায়ী কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে তার মূল বক্তব্য হল, বিভিন্ন রকমের অর্থ জমা প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন রকমের আইন এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। এর সুযোগেই নানা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়েছে সারদা-রোজ ভ্যালির মতো সংস্থা। তারা সবার চোখে ধুলো দিয়ে বেআইনি ব্যবসা চালিয়েছে। সেবি-রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-কোম্পানি নিবন্ধক-রাজ্য সরকার-কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক নিজেদের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলিতেই ব্যস্ত থেকেছে।

এই প্রেক্ষিতে কমিটির সুপারিশ, নানা রকম অর্থ জমা প্রকল্পের জন্য এখন এক ডজন আইন রয়েছে। তার বদলে একটি ‘মডেল’ কেন্দ্রীয় আইন তৈরি করা হোক। সব রকম অর্থ জমা প্রকল্পকে তারই আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ওই আইনে বিভিন্ন রকমের অর্থ জমা প্রকল্পের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা থাকবে।
একই সঙ্গে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকর্মকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। কমিটির সুপারিশ, বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমানতকারীদেরক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে ওই আইনে। ব্যবস্থা থাকবে অপরাধীদের জামিন অযোগ্য ধারায় কড়া শাস্তির।

সারদা-রোজ ভ্যালির মতো সংস্থাগুলির দৌরাত্ম্য বন্ধ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারেরই দায়িত্ব রয়েছে বলেই রায় দিয়েছে স্থায়ী কমিটি। তাদের মতে, কোনও সংস্থা বেআইনি ভাবে বাজার থেকে টাকা তুললে রাজ্য প্রশাসনকেই সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজে লাগানো উচিত। সঙ্গে সঙ্গে আমানতকারী ও সাধারণ মানুষকে সতর্ক করাটাও রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। একই ভাবে এখন বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার কাজকারবার বন্ধ করতে যে দু’টি আইন রয়েছে, (প্রাইজ চিট ও মানি সার্কুলেশন প্রকল্প নিষেধাজ্ঞা আইন ও চিট ফান্ড আইন), সেই দু’টিই অর্থ মন্ত্রকের তৈরি। সেগুলি কার্যকর করার দায়িত্ব রাজ্যের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই আইন কার্যকর হচ্ছে না দেখেও অর্থ মন্ত্রক ‘নীরব দর্শক’ হয়ে থেকেছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পাশাপাশি সেবি-র কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল, সারদা রিয়েলটি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি হল কেন?

সেবি জানিয়েছে, তাদের ছাড়পত্র ছাড়াই সারদা অর্থ লগ্নির ব্যবসা শুরু করে। ২০১১-র ডিসেম্বরে আইন ভেঙে কাজ করার জন্য সারদাকে শো-কজ করা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে সারদা। কিন্তু নথি হাজির করে তাদের ব্যবসার বিষয়টি যাচাই করানোর কাজ সারদা বারবার এড়িয়ে যায়। ২০১৩-য় সারদা রিয়েলটিকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে তিন মাসের মধ্যে লগ্নিকারীদের অর্থ ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই ভাবে রোজ ভ্যালি ও এমপিএস গ্রিনারির বিরুদ্ধেও নির্দেশ জারি হয়েছিল। কিন্তু দু’টি সংস্থাই সেবি-র রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যায়। এই সব সংস্থাগুলির সম্পর্কে সাবধান করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আবার পাল্টা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালিয়েছে। কিন্তু এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় স্থায়ী কমিটি। তাদের মতে, সেবি-র আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE