Advertisement
E-Paper

মধ্যমগ্রামের নির্যাতিতার পরিবারকে ৫ লক্ষ

২০১৩ সালের ঘটনা। মাকে বাড়ির কাজে সাহায্য করতে ঘটনার কয়েক মাস আগে বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল ১৬ বছরের কিশোরী। মধ্যমগ্রামে ভাড়া থাকত ওই পরিবার।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

‘‘জীবনের সব চেয়ে খারাপ সময়। কিন্তু ঘটনা তো ঘটিয়েছিল কয়েক জন। তা হলে রাজ্য কেন খারাপ হবে?’’ মঙ্গলবার এ কথাই বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ২৬ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে বিহারে থিতু হওয়া এক প্রৌঢ়— মধ্যমগ্রামের নির্যাতিতার বাবা।

২০১৩ সালের ঘটনা। মাকে বাড়ির কাজে সাহায্য করতে ঘটনার কয়েক মাস আগে বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল ১৬ বছরের কিশোরী। মধ্যমগ্রামে ভাড়া থাকত ওই পরিবার। আর সেখানেই একাধিক বার গণধর্ষণের শিকার হতে হয় ওই কিশোরীকে। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় তার। ৬০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া অবস্থায় পুলিশকে ওই কিশোরী জানিয়েছিল, আত্মহত্যা নয়। মামলার সাক্ষ্যদান থেকে আটকাতেই তার গায়ে আগুন লাগানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পাঁচ জনের ২০ বছরের সাজা হয়।

সেই ঘটনায় অবশেষে এ রাজ্য থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেতে চলেছে নির্যাতিতার পরিবার। মঙ্গলবার উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব অয়ন মজুমদার এই রায় দিয়েছেন।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভিকটিম কমপেনসেশন প্রকল্প ২০১৭’ অনুসারে ওই নির্যাতিতার পরিবারকে ধর্ষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লক্ষ টাকা এবং মৃত্যুর জন্য ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সচিব। আগামী মাসের মাঝামাঝি এই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। আবেদন করার এক বছরের মধ্যেই ক্ষতিপূরণ নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের দাবি।

ঘটনার পরে বিহার সরকার নির্যাতিতার বাবাকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও এ রাজ্য থেকে এই প্রথম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এ দিন বারাসত আদালতের পাঁচতলার ঘরে বসে তেমনই জানান মৃতার বাবা।

এ দিনের ক্ষতিপূরণের রায় নিয়ে কথা বলতেই গলা বুজে এল ছ’ফুটের উপর লম্বা, ছিপছিপে চেহারার মানুষটির। কোনওমতে সামলে তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ের ক্ষতি তো আর...। তবে এ রাজ্যের সকলে সহযোগিতা করেছেন বলেই ওদের ২০ বছর সাজা হয়েছে।’’

রাজ্য ছাড়ার পরেই বিহারের সমস্তিপুরে একটি থানায় ড্রাইভারের পদে যোগ দেন তিনি। তাই এ রাজ্যের সব খারাপ না লাগলেও এখানে আর ফিরতে চান না কলকাতার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত স্টিয়ারিং হাতে ছুটে বেড়ানো মানুষটি। তাঁর কথায়, ‘‘আর এখানে আসব না। তবুও মনের টান এখানেই।’’

বাড়িতে এখন স্ত্রী ও ছ’বছরের নাতির সঙ্গেই সময় কাটে। পথ দুর্ঘটনায় ২০১৫ সালে ছেলেকেও হারিয়েছেন তিনি।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভিকটিম কমপেনসেশন প্রকল্প ২০১৭’ অনুযায়ী ধর্ষণের শিকার ও অ্যাসিড আক্রান্তকে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। নাবালিকার শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ২ লক্ষ টাকা।

কিন্তু ক্ষতি কি অর্থ দিয়ে পূরণ করা যায়? এই প্রশ্ন একাধিক ঘটনার মতো এ দিনও ঘুরপাক খেয়েছে। এই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এ দিনের রায়েও। ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিতে গিয়ে বিচারক অয়ন মজুমদার বলেছেন, জীবনের দাম কখনও ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। রাষ্ট্র যে পাশে আছে, তা বোঝাতেই ক্ষতিপূরণের নির্দেশ। যা আক্রান্ত বা আক্রান্তের পরিবারকে লড়াই করার শক্তি জোগাবে।

আর সেই শক্তিতে ভর করেই হয়তো বিহারের ঝা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্যের স্বগতোক্তি, ‘‘বিচার তো মিলেছে।’’

Madhyamgram Madhyamgram victim Rape Rape victim মধ্যমগ্রাম ধর্ষণ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy