Advertisement
E-Paper

শিক্ষক বদলি নিজের হাতে নিচ্ছে সরকার

স্কুল কর্তৃপক্ষ নয়, শিক্ষকদের বদলির ক্ষমতা পর্যদের মাধ্যমে এ বার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে রাজ্য সরকার। এ জন্য মার্চ মাসে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগে সংশ্লিষ্ট দু’টি আইন সংশোধন করবে স্কুল শিক্ষা দফতর।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১১

স্কুল কর্তৃপক্ষ নয়, শিক্ষকদের বদলির ক্ষমতা পর্যদের মাধ্যমে এ বার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে রাজ্য সরকার। এ জন্য মার্চ মাসে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগে সংশ্লিষ্ট দু’টি আইন সংশোধন করবে স্কুল শিক্ষা দফতর।

আইন সংশোধন হয়ে গেলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকদের সরকার রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে বদলি করতে পারবে। পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যে কোনও স্কুলে বদলির আবেদন করতে পারবেন। নবান্নের বক্তব্য, বহু দিন ধরেই বদলির নীতি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। এ বার তা পূরণ হতে চলেছে।

তবে নতুন বদলি নীতির আওতায় কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়বেন না। এক কর্তার ব্যাখ্যা— আইনে ‘রেট্রোস্পেক্টিভ এফেক্ট’ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সংশোধিত আইন পাশ হওয়ার পরে যাঁরা শিক্ষকের চাকরি পাবেন, তাঁরাই শুধু নতুন বদলি

নীতির আওতায় আসবেন। তবে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য সরকার বিকল্প কিছু ভাবতে পারে বলে বিকাশ ভবন ইঙ্গিত দিয়েছে।

এখন স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ হয়। যোগ্য প্রার্থীদের নাম স্কুল পরিচালন সমিতির কাছে সুপারিশ করে কমিশন। তার ভিত্তিতে স্কুল পরিচালন সমিতিই নিয়োগপত্র দেয়। স্কুল পরিচালন সমিতি নিয়োগপত্র দেওয়ায় শিক্ষক পদগুলি ‘সিঙ্গল ক্যাডার পোষ্ট’ হয়ে যায়। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট স্কুলেই সারাজীবন থেকে যেতে হবে এক জন শিক্ষককে।

সমস্যা মেটাতে আগের সরকার আপস বদলি বা ‘মিউচ্যুয়াল ট্রান্সফার’ চালু করে। কিন্তু সরকার কাউকে বদলি করতে পারত না। এ বার সেই ব্যবস্থার খোলনলচেই বদলে ফেলছে সরকার।

কী ভাবে? স্কুল শিক্ষা দফতরের খবর, বিধানসভার মার্চের অধিবেশনে স্কুল সার্ভিস কমিশন আইন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধিত স্কুল সার্ভিস কমিশন আইনে বলা হবে, কমিশন প্যানেল চূড়ান্ত করে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে, আগের মতো আর স্কুল পরিচালন সমিতির কাছে নয়। পর্ষদের সংশোধিত আইনে স্কুল শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখার কথা বলা থাকবে। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আইন সংশোধন করে নিয়োগের ক্ষমতা স্কুল পরিচালন সমিতির হাত থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’ ওই

কর্তার পর্যবেক্ষণ, ‘‘বদলির ক্ষমতা পরিচালন সমিতির হাতে থাকায় নিয়োগ নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। এখন তাই সে দায়িত্ব পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।’’

তবে শিক্ষা মহলের একাংশের মতে, সংশোধনীতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বদলির কথাও থাকছে। এর সুযোগ নিয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে পর্ষদ। আবার, স্বশাসিত পর্ষদকে সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠতে পারে।

দফতর সূত্রের খবর, স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনে সংশোধন এনে আরও বলা হবে, কমিশন প্রয়োজন মতো মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে শিক্ষকদের বদলির সুপারিশও করতে পারবে। সেই সুপারিশ মতো পর্ষদ রাজ্যের যে কোনও স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি করতে পারবে। দফতরের খবর, কী ভাবে এক জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলি করা হবে, সংশোধিত আইনের বিধিতে তার সবিস্তার ব্যাখ্যা থাকবে।

তবে কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে আলোচনা হচ্ছে। প্রথমত, ডাক্তারদের চাকরি পাওয়ার পর যেমন প্রথম তিন বছর গ্রামে পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, তেমনই চাকরির শুরুতে প্রথম দু’বছর প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাজ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, গোটা রাজ্যকে তিনটি জোনে ভাগ করা। প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বাধ্যতামূলক ভাবে তিনটি জোনেই কাজ করতে হবে। তৃতীয়ত, সংরক্ষণ বিধি মেনে বদলির ব্যবস্থা আরও সরল করা। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বদলি নীতি এখনও আলোচনা সাপেক্ষ। নানা রকমের ভাবনাচিন্তা হচ্ছে।’’

কর্তাদের আশা, অধিকাংশ শিক্ষকই বদলি নীতিকে সমর্থন করবেন। কেন না, অনেক শিক্ষিকার বিয়ের পর বদলির প্রয়োজন পড়ে। অনেক সময় পরিচালন সমিতির রোষের শিকার হয়ে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা প্রয়োজন সত্ত্বেও বদলির সুযোগ পান না। নতুন ব্যবস্থায় সেই অবস্থার পরিবর্তন হবে।

State Government Teachers Transfer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy