Advertisement
E-Paper

ভোট-সংক্রান্তিতে আজ দই-চিঁড়েও উৎসব

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৭
দই-চিঁড়ে উৎসবের ফ্লেক্স।—নিজস্ব চিত্র।

দই-চিঁড়ে উৎসবের ফ্লেক্স।—নিজস্ব চিত্র।

বাঙালির নাকি বারো মাসে তেরো পার্বণ! এমন প্রবাদ এখন আক্ষরিক অর্থেই ক্লিশে! বারো মাসে তেরো কেন, একশো তিরিশ রকম উৎসব এখন দেখা যাচ্ছে এ বাংলায়! বস্তুত, সংখ্যার গণ্ডি ভেঙে নতুন নতুন উৎসবের পরিকল্পনা করে রেকর্ড ভেঙে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানা!

উৎসব-মুখরতার এই আবহেই নতুন সংযোজন হচ্ছে আজ, শুক্রবার। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে মধ্য কলকাতায় আয়োজন হচ্ছে ‘দই-চিঁড়ে উৎসবে’র! উদ্যোক্তা শাসক দলের এক কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী। আকাশ থেকে মাটি, যে কোনও বিষয়ে উৎসবে সিদ্ধহস্ত এই আমলেও এমন উৎসব অভিনব বৈকি! মকর সংক্রান্তির সময়ে রসনার তৃপ্তি ঘটিয়ে ভোটের বাজারে জনতাকে রসে-বশে রাখাই যে উৎসবের লক্ষ্য।

মকর সংক্রান্তির দিন দই-চিঁড়ে-গুড় মেখে খাওয়ার রেওয়াজ সদাব্যস্ত এই নাগরিক জীবনে ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। কিন্তু উৎসব-প্রিয় তৃণমূলের নেতারা অত সহজে রেওয়াজ হারিয়ে যেতে দিলে তো! তাই হিন্দ সিনেমার কাছে গিরিন ব্যানার্জি উদ্যানে আজ সংক্রান্তির সকালে হাজির হয়ে গেলেই হল। দই, চিঁড়ে, পাটালি এবং নানা রকমের মিষ্টি দিয়ে পসরা প্রস্তুত থাকবে। চোখের, মনের এবং পেটের খিদে মেটানো বিলকুল ফ্রি! তৃণমূল ফ্যাশনের নীল-সাদা কাপড়ে দিব্যি সেজে উঠছে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই

পার্ক। সব কিছু ঠিকঠাক চললে উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণে উৎসবে হাজির হতে পারেন কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও।

ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন সিংহ এমন মাখো-মাখো উৎসবকে দলের জনসংযোগের কাজে ব্যবহার করবেন ঠিকই। তবে উৎসবের মূল উদ্যোক্তা তাঁর স্বামী, প্রাক্তন কাউন্সিলর বিমল সিংহ। দই-চিঁড়ের পিছনে রেস্তও তাঁর। বিমলের কথায়, ‘‘মকর সংক্রান্তির দিন সাধারণ ভাবে আমাদের এখানকার মানুষ যা খেতে পছন্দ করেন, সে সব দিয়েই একটা উৎসব করছি। মানুষ আসবেন, খাবেন, আনন্দ পাবেন।’’ এমন নির্মল আনন্দ দেওয়ার বাসনায় বিরোধী রাজনীতির চিঁড়ে অবশ্য ভিজছে না! সিপিএমের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘চা-বাগানের শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের লোকজন অভুক্ত। উৎসবের বদলে ওঁরা চা-বাগানের শ্রমিকদের কাছে দই-চিঁড়ে পাঠাতে পারতেন তো!’’ বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের টিপ্পনী, ‘‘এই তৃণমূল দলটা যা শুরু করেছে, পূর্ণিমায় চাঁদ উঠলেও এখন উৎসব করতে হবে! আসলে পূর্ণিমার চাঁদ এখন ঝলসানো রুটিকে কেড়ে নিচ্ছে!’’

শুধু বিরোধীরাই বা কেন? শাসক দলেরই প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় ইদানীং দলীয় কর্মী সম্মেলনে পরামর্শ দিচ্ছেন, বিধানসভা ভোটের আগে কয়েকটা মাস মেলা-খেলা একটু কমিয়ে ‘পলিটিক্যাল’ হওয়াই ভাল। যদিও সে পরামর্শ আর কানে তুলছে কে? তৃণমূলের নেতা-বিধায়ক-কাউন্সিলরেরা বুঝেছেন, ‘অরাজনৈতিক’ ভাবেই লোককে খেলিয়ে-খাইয়ে যদি মন জিতে নেওয়া যায়, আলাদা করে ‘পলিটিক্যাল’ হওয়ার আবার দরকার কী! আর স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, ‘‘মেলা, উৎসব আমাদের সংস্কৃতি। সমস্যা তো থাকবেই। তা বলে উৎসব হবে না? যারা এ সব নিয়ে কথা বলে, তারা নিজেদের খুব কেউকেটা ভাবে! উৎসব হবেই!’’

অতএব, বিরোধীদের চিঁড়ে ভিজুক-না ভিজুক, দই-চিঁড়ে খাওয়াও এখন উৎসব!

dahi-chira utsav sandipan chakraborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy