এত দিন সে ছিল বাতিলের তালিকায়। অবজ্ঞায় ফেলে দিত কেউ, কেউ পুড়িয়ে নষ্ট করতো। এ বার সেই পাটকাঠি থেকে চারকোল তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। রাজ্যের পক্ষে আশার কথা হল, এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে লাভবান হবে পশ্চিমবঙ্গ। কারণ দেশের মোট পাটের ৮০%-ই চাষ হয় এ রাজ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা পাট বিক্রির পর তার কাঠি চারকোল তৈরির কাজে দিয়ে চাষিরা বাড়তি লাভ করবেন।
কী কাজে লাগে চারকোল? কিছু জরুরি ওষুধ, দাঁতের মাজন, মুখের প্রসাধন, জল পরিশোধক যন্ত্র বা শুকনো কালি তৈরি করতে চারকোলের ব্যাপক চাহিদা। ভারতের বাজার ছাড়াও চিন, তাইওয়ান, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় চারকোলের ভাল বাজার রয়েছে।
এই চারকোল তৈরিতে ইতিমধ্যে ভারতকে ১০ গোল দিয়ে বসে আছে পড়শি বাংলাদেশ। ও পার বাংলার চারকোল যাচ্ছে চিনে। বাংলাদেশের জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহি, রাজবাড়ি ও ফরিদপুরে এখন ২৫-৩০টি কারখানায় অন্তত ৩ কোটি টন চারকোল তৈরি হচ্ছে।
বলা যায়, বাংলাদেশকে দেখেই এ বার বিশ্ববাজারে পা রাখতে চাইছে ভারত। সূত্রের খবর, সম্প্রতি ন্যাশনাল জুট বোর্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির চুক্তি হয়েছে। পাটকাঠি থেকে কী ভাবে উন্নত মানের কার্যকরী (অ্যাক্টিভেটেড) চারকোল তৈরি করা যায়, তার একটি বিস্তারিত রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করা হচ্ছে। কী ধরনের প্রযুক্তি লাগবে, কারখানার নকশা কেমন হবে— তা ঠিক করবে ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ২০১৮ সালের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি ছোট ও মাঝারি চারকোল কারখানা হবে বেসরকারি উদ্যোগে। এই প্রকল্প ভর্তুকি দেওয়ার কথাও ভাবছে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক।
চারকোল তৈরিতে কেন নজর দিল জুট বোর্ড? এক কর্তা জানান, বাংলাদেশের খবর তাঁরা আগেই পেয়েছিলেন। বছর দেড়েক আগে এ রাজ্যের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে তাঁরা পাটকাঠি থেকে কৃষকদের চারকোল তৈরি করতে দেখেন। কোথাও কোথাও সাহায্য করছেন কয়েক জন চিনা— এমন দৃশ্যও চোখে পড়ে। বলা যায়, সেই থেকেই ভাবনার শুরু।
কী ভাবে মেলে চারকোল? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি পাট গাছ থেকে ৭%-এর মতো কাঁচা পাট পাওয়া যায়। বাকি ৯৩%-ই পাটকাঠি। প্রযুক্তির মাধ্যমে এই কাঠি পুড়িয়ে তৈরি হয় চারকোল। পাটকর্তারা জানান, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ছয় লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। ন্যাশনাল জুট বোর্ডের হিসেব, এক হেক্টর জমি থেকে কমপক্ষে ২০ টন পাটকাঠি পাওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে এ রাজ্যে যা পাটকাঠি পাওয়া যাবে তার ৫০% কাজে লাগাতে পারলেই বিপুল পরিমাণ চারকোল উৎপাদন সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy