Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফের প্রাচীন মন্দিরের সংস্কার শুরু

শতাব্দী প্রাচীন ভগ্নপ্রায় মন্দির সংরক্ষণের থমকে যাওয়া কাজ ফের শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। উত্তর দিনাজপুরের মারনাই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রমথেশ্বর জিউ মন্দির তৈরি হয় ১৩২৬ বঙ্গাব্দে।

ছবি: প্রতিবেদক।

ছবি: প্রতিবেদক।

অশোক সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:০২
Share: Save:

শতাব্দী প্রাচীন ভগ্নপ্রায় মন্দির সংরক্ষণের থমকে যাওয়া কাজ ফের শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।

উত্তর দিনাজপুরের মারনাই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রমথেশ্বর জিউ মন্দির তৈরি হয় ১৩২৬ বঙ্গাব্দে। পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়। ২০১২ সালের শেষ দিকে সিদ্ধান্ত হয় সংস্কার ও সংরক্ষণের। কাজ শুরু হলেও থমকে যায় কিছু কাল বাদে। সম্প্রতি নবান্নের বৈঠকে নানা ঐতিহ্য সংরক্ষণ প্রকল্পের মধ্যে এটিকেও অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রায় একশো বছর আগে অবিভক্ত বাংলায় জমিদার শশিভূষণ পালচৌধুরী তাঁর মারনাই গ্রামের প্রাসাদের অদূরে একটি শিবমন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। মহানন্দা নদীর কাছে তৈরি করান প্রমথেশ্বর জিউ মন্দির। ভূমি থেকে দুই ধাপে মন্দিরটির মোট উচ্চতা ১২.৫৬ মিটার, অর্থাৎ প্রায় চার তলা বাড়ির মতো। সেটি তৈরি হয় দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের আদলে। দক্ষিণমুখী মন্দিরের ভিত্তি বেশ শক্ত। উপরের ধাপে ছিল ৯টি মিনার। পাঁচটি মিনার আস্তে আস্তে ভেঙে যায়। ছাদের কিছু অংশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠায় পুজো বন্ধের উপক্রম হয়। এ অবস্থায় রাজ্য মন্দির সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। পরামর্শদাতা সংস্থার সমীক্ষা এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় ধরে মঞ্জুর হয় ২৬ লক্ষ ৮৩ হাজার ১৩ টাকা।

কিন্তু কাজ কেন বন্ধ হয়ে গেল? সংরক্ষণ কাজে যুক্ত সংস্থার ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রজিৎ রায় বলেছেন, ‘‘৭০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। টেন্ডারের পর বরাদ্দ অর্থ দিয়ে ভেঙে যাওয়া চূড়ার নির্মাণ ও বাকি কাজ হবে। কাজ শুরুর পর বাধা না এলে মাস দু’য়েকের মধ্যে সংস্কার-সংরক্ষণ শেষ হয়ে যাবে।’’ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মন্দিরের গা ঘেঁষে তৈরি রাস্তার মানোন্নয়ন হয়েছে। সীমানায় প্রাচীর, ঝিলে শালবল্লার পাইলিং দিয়ে পার বাঁধানো, আলোকসজ্জা— এ সবের অধিকাংশই হয়েছে।’’

এক কালে নিয়মিত ঘটা করে পুজো হত। এখন সে রাম নেই, অযোধ্যাও নেই। কেবল নির্দিষ্ট তিথিতে পুজো হয়। এ কথা জানিয়ে শশীবাবুর নাতি আশিস পালচৌধুরী বলেন, ‘‘মন্দিরের খরচের কথা ভেবে শিবের নামে ৫০০ বিঘা জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশ ভাগের পরে তার সিংহভাগ বাংলাদেশে পড়ে গিয়েছে। সেই জমি উদ্ধারের চেষ্টা হয়নি। এখন অর্থাভাবই অনিয়মিত পুজোর প্রধান কারণ।’’ দ্বিতীয় কারণ, বিপজ্জনক কাঠামো। আশিসবাবু জানান, শিবরাত্রির সময়ে তিন দিন জমজমাট হয়ে ওঠে প্রমথেশ্বর জিউ মন্দির প্রাঙ্গণ। মন্দিরের সামনে বাহনমন্দির। সেখানকার কষ্টিপাথরের ষাঁড় প্রায় দেড় যুগ আগে চুরি হয়ে যায়। নতুন ষাঁড় আসেিন? ‘‘পেরে উঠছি না’’— আক্ষেপ আশিসবাবুর গলায়।

এই প্রকল্পের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা পুরাতত্ত্ব ও সংরক্ষণ বিভাগের অফিসার বিনয় মনি বলেন, ‘‘মন্দিরে যেতে হলে মালদহ স্টেশন থেকে রায়গঞ্জগামী বাসে মারনাই মোড়ে নেমে যেতে হবে ভ্যানে চেপে।’’ এ অবস্থানে ঐতিহ্যের মন্দির দেখতে ভিন্ন অঞ্চলের ক’জন আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কাজের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাজ বিলুপ্তির হাত থেকে ঐতিহ্য রক্ষা করা। দর্শক টানার দায়িত্ব পর্যটন দফতরের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE