—প্রতীকী চিত্র।
দূরত্ব বাড়লে সমস্যা যেমন বাড়ে, দূরত্ব কমলে কাটে সমস্যাও।
তাই স্কুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এ বার অভিভাবক ও এলাকার বাসিন্দাদের কাছে টানতে উদ্যোগী হল রাজ্য। সম্প্রতি কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া ও বর্ধমান-সহ কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি স্কুলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে এলাকার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ভাবেই কার্যত একটি ‘সেফটি ভাল্ভ’ তৈরির ভাবনায় এখন শিক্ষকেরা।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, বর্তমানে গোটা রাজ্য জুড়েই বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের অভিভাবক বা স্থানীয় বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে শিক্ষকেরা উপলব্ধি করতে পারছেন সমাজের থেকে স্কুলের দূরত্ব বাড়ছে। তাঁদের অনেকেরই মত, স্কুলের সমস্যা অন্যদের বোঝানো যাচ্ছে না বলেই অসুবিধে বাড়ছে। তাই স্টেট কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এসসিইআরটি) -র তরফে থেকে প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এসসিইআরটি-র এক কর্তা জানান, বেশ কয়েকটি পদ্ধতি প্রয়োগ করলেই স্কুলের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব ঘুচতে পারে। প্রথমত, স্কুলের যে কোনও অনুষ্ঠানে এলাকার বাসিন্দাদের সংযুক্ত করতে হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ওই অনুষ্ঠানে যেন তাঁরা অংশগ্রহণ করেন, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে প্রধান শিক্ষককেই। প্রয়োজনে একটি দল গঠন করে এই কাজ করা যেতে পারে। এ ছাড়া, পাঠ্যক্রমে প্রোজেক্টকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগকে উপযুক্ত ভাবে ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে এসসিইআরটি। পড়ুয়াদের ওই সমস্ত প্রোজেক্টের অংশ হিসেবে বেছে নিতে হবে স্কুলের এলাকার কারও বাগান বা জলাশয়। সাহায্য নিতে হবে স্থানীয় অভিভাবকদের। স্কুলের আলোচনাসভায় এলাকাবাসীদের আমন্ত্রণ করে তাঁদেরও কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। এ ভাবে তাঁরাও স্কুলের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে জানতে পারবেন। বর্তমানকে নিয়ে চলার পথে পুরনোকেও ভুললে চলবে না। প্রাক্তনীদের নিয়ে সংসদ তৈরি করে সকলকে এক সুতোয় গেঁথে নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে চললে এলাকার বাসিন্দা, অভিভাবক ও প্রাক্তনীরাও জড়িয়ে থাকবেন স্কুলের উন্নয়নে যাত্রায়। ফলে চলার পথে কোনও অসুবিধায় পড়লে তাঁদেরকেও পাশে পাওয়ার সুযোগ থাকবে স্কুল কর্তৃপক্ষের। এ কাজে সুকৌশলে নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে হবে প্রধান শিক্ষককেই। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলগুলিকে এলাকাবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে পারলেই সমস্যা মিটে যাবে বলে আমি মনে করি।’’
এসসিইআরটি-এর তরফে গত বছর থেকেই প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের আগেই নেতৃত্বের পাঠ দেওয়া হয়েছিল। এ বার আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে স্কুলকে রক্ষা করার খুঁটিনাটি পাঠ দেওয়ার কাজ শুরু হল। মূলত বাছাই করা কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মাধ্যমেই এই প্রশিক্ষণ পর্ব চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতায় ও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যে ভাবে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। ওই প্রশিক্ষণ পর্বের এক প্রশিক্ষক তথা যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য জানান, সমাজের সঙ্গে স্কুলকে এক সুতোয় কী ভাবে বাঁধতে হয়, তার পন্থা প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব থেকে আগে প্রয়োজন শিক্ষার মানের উন্নতি। যে কারণে আরও বেশি করে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের আরও কী ভাবে উৎসাহিত করা যায়, সেটা নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে ওই প্রশিক্ষণ পর্বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy