ভাঙড়ের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কৃষি, বাস্তু ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জমির নাম (মিউটেশন) ও চরিত্র (কনভার্সন) পরিবর্তনের খরচ এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
নবান্নের খবর, জমির মিউটেশন ফি ৪০ থেকে ২০০ গুণ বাড়িয়ে দিয়ে ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ভূমি দফতর। বাণিজ্যিক কাজে কনর্ভাসন ফি দিতে হবে জমির বাজার দরের ভিত্তিতে। সেটা কত এবং কী ভাবে নেওয়া হবে— তা ঠিক করবে মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া বিশেষ মন্ত্রিগোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার নবান্নে ভূমি সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মিউটেশন-কনভার্সনের হার কত হল? ভূমি দফতরের খবর, এত দিন কেএমডিএ এলাকায় এক বিঘা জমি মিউটেশন করতে ফি দিতে হত ১৬৫০ টাকা। জমির কনভার্সন ও ডেভেলপমেন্ট চার্জও নির্দিষ্ট করা ছিল। সম্প্রতি মিউটেশন ফি বাড়িয়ে করা হয়েছে বিঘাপ্রতি ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। আর কনভার্সন ও ডেভেলপমেন্ট ফি ঠিক হবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জমির বাজার দরের ভিত্তিতে। একই ভাবে, পুর এলাকায় মিউটেশন করাতে খরচ হতো বিঘাপ্রতি ৪৯৫ টাকা। সেটা ১০০ গুণ বেড়ে হয়েছে ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। কেউ কনভার্সন করতে চাইলে তার খরচ আলাদা। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, শুধু বাণিজ্যিক সংস্থাই নয়, এর ফলে সাধারণ মানুষের উপরেও বাড়তি বোঝা চাপবে। ভূমি কর্তাদের অবশ্য দাবি, সাধারণ মানুষের উপর বিশেষ চাপ পড়বে না। কারণ, তাঁদের হাতে বেশি জমি থাকে না।
মহার্ঘ মিউটেশন
জমি গ্রাম পুর এলাকা কেএমডিএ
ছিল হলো ছিল হলো ছিল হলো
• কৃষি ১ ৪০ ১ ৬০ ১ ৮০
• অকৃষি ১০ ১০০ ১৫ ১৫০ ২০ ২০০
• বাণিজ্যিক* ২০ ৫০০ ৩০ ১৫০০ ৫০ ৫০০০*
টাকা প্রতি ডেসিমেল
* জমি ১০ ডেসিমেলের বেশি হলে ফি ডেসিমেল-পিছু গ্রামে ১০০০, পুর এলাকায় ৩০০০ এবং কেএমডিএ এলাকায় ১০০০০ টাকা
কেন এই অস্বাভাবিক ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত?
এর কারণ হিসাবে ভূমি দফতর মূলত দু’টি যুক্তি খাড়া করেছে। প্রথমত, বিভিন্ন জেলা শহরে এক শ্রেণির জমি হাঙর সামান্য মিউটেশন এবং কনভার্সন ফি দেওয়ার সুযোগ নিয়ে একরের পর একর জমি কিনে নিচ্ছেন। পরে তার চরিত্র বদল করে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কলকাতার আশপাশে জমির সিলিং (সাড়ে সাত কাঠা) বেঁধে দেওয়া থাকলেও ওই জমি হাঙরেরা বেনামে সেই সব জমি হাতিয়ে নিচ্ছেন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙড়-কাণ্ডেও সেই অভিযোগ উঠেছে। এবং এই কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ক্ষোভও জানিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটেই এক ধাক্কায় অনেকটা মিউটেশন-কনভার্সন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। ভূমি দফতরের হিসেব, নতুন নিয়মে কলকাতা ও আশপাশে এক একর জমির মিউটেশন, কনভার্সন ও ডেভেলপমেন্ট করার জন্য ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। ফলে যাঁর সত্যিই প্রয়োজন তিনিই জমি কিনবেন এবং ব্যবহার করবেন। বেনামে জমি কিনে রাখার প্রবণতা কমবে।
দ্বিতীয়ত, ঋণ ভারে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি বেশ খারাপ। মিউটেশন ফি বাড়ালে রাজস্বও বাড়বে। ২০১৭-১৮ সালের বাজেটে ভূমি রাজস্ব খাতে ২৭৬০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু মিউটেশন–কনভার্সন ফি বাড়ানোর ফলে এই খাতে রাজস্ব ৫০০০ কোটি ছুঁতে পারে বলে মনে করছেন ভূমি কর্তারা। এক কর্তা জানান, এই চার্জ শেষ বেড়েছিল ২০০৫ সালে।
জমির চরিত্র বদলের হার কী ভাবে ঠিক হবে, তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠী এ দিন নবান্নে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়, এখন শহরে এক শতক জমিকে বাণিজ্যিক জমিতে চরিত্র বদল করতে দিতে হয় ৭৫ টাকা। সঙ্গে প্রতি ডেসিমেলে ১১০০ টাকা ডেভেলপমেন্ট ফি। গ্রামে বাস্তু জমির ক্ষেত্রে এখন চরিত্র বদলালে দিতে হয় শতকপিছু ২০ টাকা, প্রতি ডেসিমেলে ডেভেলপমেন্ট ফি ৭৫০ টাকা। এ বার এলাকা অনুযায়ী জমির বাজার দরের ভিত্তিতে কনভার্সন চার্জ দিতে হবে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আলোচনা অসমাপ্ত। তা চূড়ান্ত হওয়ার আগে কিছু বলছি না। তবে সরকার জমির কনভার্সনের হার নিয়ে নতুন নীতি তৈরি করতে চলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy