Advertisement
০৩ মে ২০২৪
BJP

বঙ্গে অ্যাডিনোর প্রকোপ বেশি, বিজেপির অভিযানে ধুন্ধুমার

গত ১ জানুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে এ রাজ্যে সংক্রমণের ৩৮ শতাংশের কারণ অ্যাডিনোভাইরাস।

Representational image of BJP.

স্বাস্থ্যভবন অভিযানের জন্য করুণাময়ী মোড়ে জমায়েতের ডাক দেয় বিজেপির যুব ও মহিলা মোর্চা। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৪
Share: Save:

জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এখনও সক্রিয় অ্যাডিনো-সহ অন্যান্য ভাইরাস। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত জ্বর, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ-সহ অসুখে মৃত্যু হয়েছে চার জন শিশুর। প্রত্যেকেই বিসি রায় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। এরা সকলে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত ছিল কি না, তা জানা যায়নি। তবে এ দিন নাইসেড সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের মধ্যে অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ সব থেকে বেশি পশ্চিমবঙ্গেই।

এ দিকে, রাজ্যে অ্যাডিনোভাইরাসে পর পর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতার অভিযোগ তুলে শুক্রবার স্বাস্থ্যভবন অভিযান করে বিজেপি। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার হয় সল্টলেকে।

প্রতি বছরই আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময়ে অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে। কিন্তু এ বারে দেশ জুড়ে বেশি মাত্রায় শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের (অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) নেপথ্যে কোন ভাইরাস খলনায়কের ভূমিকায় রয়েছে, তা জানতে সমীক্ষা শুরু করে আইসিএমআর। তাদের আওতাধীন সমস্ত ভাইরাস-গবেষণাগার বা পরীক্ষাগারের রিপোর্টেই দায়ী করা হয়েছে অ্যাডিনোভাইরাসকে। নাইসেড-এর অধিকর্তা শান্তা দত্ত বলেন, “শ্বাসনালীর সংক্রমণের নেপথ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যাডিনোভাইরাস থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে এ বারে সেটি অনেক বেশি।”

গত ১ জানুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে এ রাজ্যে সংক্রমণের ৩৮ শতাংশের কারণ অ্যাডিনোভাইরাস। ওই একই সময়ে তামিলনাড়ুতে ১৯ শতাংশ, কেরলে ১৩ শতাংশ, দিল্লিতে ১১ শতাংশ এবং মহারাষ্ট্রে ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যাডিনোভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে।

যদিও দেশের পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই সব থেকে বেশি অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপের বিষয়টি জানা নেই বলেই এ দিন দাবি করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “নাইসেডের থেকে রিপোর্টটি চাওয়া হবে। তবে সংক্রমণ এখন অনেকটা কমেছে।” চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জন্মগত হৃৎপিণ্ডে সমস্যা রয়েছে, জন্মের সময়ে ওজন দুই কেজির কম ছিল, সময়ের আগে জন্ম হয়েছে কিংবা অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণ সহজেই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ওই আনুষঙ্গিক অসুস্থতা থাকলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শিশু অতি সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে। ২০১৮-২০১৯ সালেও অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু এ বারে আচমকাই সেটি বেশি কেন? গবেষকেরা জানাচ্ছেন, অ্যাডিনোভাইরাস থাকা নমুনাগুলির ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং’ করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে অ্যাডিনো-৩ (মারাত্মক সংক্রামক) এবং অ্যাডিনো-৭ (মারণ ক্ষমতা বেশি) প্রজাতি মিশে গিয়েছে। আর ওই ‘রিকম্বিনেন্ট’ ভাইরাসের কারণেই এতটা উদ্বেগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিসি রায় হাসপাতালে মারা যায় চুঁচুড়ার ১১ মাসের শান্তনু কীর্তনিয়া। জ্বর, সর্দি-কাশি ও বুকে কফ বসে যাওয়ার সমস্যায় আক্রান্ত ওই শিশুকে গত মঙ্গলবার ভর্তি করা হয়েছিল। রাতেই মৃত্যু হয় বনগাঁর বাসিন্দা দেড় বছরের আয়ান মণ্ডলের। শুক্রবার ভোরে মারা যায় ঠাকুরনগরের বাসিন্দা বছর দুয়েকের এক শিশু। আর এ দিন দুপুরে মারা যায় রানাঘাটের বাসিন্দা সাড়ে চার বছরের ঈশিতা অ্যাঞ্জেল গোমস। প্রবল নিউমোনিয়া নিয়ে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

এ দিন স্বাস্থ্যভবন অভিযানের জন্য করুণাময়ী মোড়ে জমায়েতের ডাক দেয় বিজেপির যুব ও মহিলা মোর্চা। অভিযোগ, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীদের মিছিল শুরুর আগেই আটক করে পুলিশ। এ দিনই সেক্টর ফাইভে রাজ্য বিজেপির নয়া ভবনের উদ্বোধন ছিল। অভিযোগ, সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া অনেক কর্মী-সমর্থককে শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনের ভিতর থেকেও পাকড়াও করা হয়। তবে রাজ্য বিজেপির তরফে যুব মোর্চার দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে কয়েকশো কর্মী পুলিশি বাধা অতিক্রম করে স্বাস্থ্য ভবনের দিকে এগোতে চেষ্টা করেন। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিধাননগর কমিশনারেটের বিশাল বাহিনী ব্যারিকেড গড়ে সেই কর্মী-সমর্থকদের বাধা দেয়। পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের বচসা এক সময়ে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয়। বিজেপির দাবি, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী তনুজা চক্রবর্তী-সহ আরও এক যুব মোর্চার কর্মী আহত হন। পরে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ, অগ্নিমিত্র পাল-সহ প্রায় শ’খানেক কর্মী-সমর্থককে আটক করে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমাদের কর্মীদের আক্রমণ করার পাশাপাশি মহিলা নেত্রীকে পুরুষ পুলিশ মেরেছে। উনি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আমাদের এই প্রতীকী কর্মসূচি নিয়ে পুলিশের যত ব্যস্ততা! আর এসএফআইকে বিধানসভায় পৌঁছে দিল।” তিনি আরও বলেন, “আমরা তো ভেবেছিলাম, গেট খুলে বিধানসভা কক্ষে নিয়ে যাবে। বোঝাই যাচ্ছে, কে কার দিকে রয়েছে, কার সঙ্গে কার জোট জলের মত পরিষ্কার।” তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেন, “সম্পূর্ণ বাজে কথা। স্থানীয় ভাবে পুলিশ কোনও আন্দোলন ঠেকাতে কোন কৌশল নেবে, তার সঙ্গে সরকারি নীতির কোনও সম্পর্ক নেই। উনি প্রলাপ বকছেন।”

আবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “ওরা কিস্যু জানে না। প্রথমে হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশনে পুলিশ আমাদের ছাত্র সংগঠনের নেতা, কর্মীদের আটকায় ও মারধর করে। তার পরেও ছাত্ররা মিছিল করেছে। পুলিশকে বোকা বানিয়ে বিধানসভায় পৌঁছে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Adenovirus West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE