E-Paper

অ্যাসিড হামলায় শীর্ষে রাজ্য, বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা

অ্যাসিড হামলার কারণ এবং আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা এ রাজ্যের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, অ্যাসিড বিক্রি সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৩৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

লাইসেন্স ছাড়া কোনও দোকানে অ্যাসিড বিক্রি করা যাবে না। লাইসেন্স থাকলেও কোন দোকান, কাকে, কতটা অ্যাসিড বিক্রি করছে, সব তথ্য রাখতে হবে স্থানীয় থানাকে। সুপ্রিম কোর্টের এই কড়া নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশিকা কি থেকে যাচ্ছে শুধুই খাতায়-কলমে? এখনও অ্যাসিড-হামলার শিকার মূলত মেয়েরাই এবং সেই অপরাধের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এ বারও সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ!

সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া ২০২৩ সালের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’র তথ্য (এনসিআরবি রিপোর্ট) বলছে, এ বারও দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে। রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা দেশের মধ্যে ২০২৩ সালে মোট ২০৭টি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ৫৭টিই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ৫৭টি ঘটনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ জন। একই ভাবে কলকাতাতেও দু’জন ওই বছর অ্যাসিড হামলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ। পশ্চিমবঙ্গের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। সে রাজ্যে ২০২৩ সালে ৩১টি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তবে এই প্রথম নয়, ২০১৮ সাল থেকেই অ্যাসিড হামলার ঘটনায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। ২০২২ সালে এ রাজ্যে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছিল ৪৮টি। তাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২।

অ্যাসিড হামলার কারণ এবং আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা এ রাজ্যের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, অ্যাসিড বিক্রি সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন তো বটেই, জেলা পুলিশের কাছেও অ্যাসিড বিক্রির কোনও তথ্য থাকে না। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তার দাবি, দোকানে যে অ্যাসিড বিক্রি হয়, সে তো ব্যবহার হয় মূলত শৌচাগার পরিষ্কারের কাজে। কিন্তু সম্প্রতি বেশির ভাগ অ্যাসিড হামলার ঘটনায় দেখা গিয়েছে, যে অ্যাসিড নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে, তা মূলত সোনার দোকানে ব্যবহার হয়। এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের কর্তারাও নির্দিষ্ট নজরদারির অভাবের কথা মানছেন। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘সোনার দোকানের রিপোর্ট থানাগুলোকে নিতে বলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে গড়িমসি হয় ঠিকই, তবে কড়া হাতে আবার ব্যাপারটা দেখারনির্দেশ এসেছে।’’

তবে শুধু অ্যাসিড হামলার ক্ষেত্রেই নয়, দেখা যাচ্ছে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সামান্য কমেছে। ২০২২ সালে নথিভুক্ত এমন অপরাধের সংখ্যা ছিল ৩৪৭৩৮টি এবং ২০২৩ সালে হয়েছে ৩৪৬৯১টি। দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে রাজ্যে মহিলার সংখ্যা ছিল চার কোটি ৮৬ লক্ষ ৪০ হাজার। প্রতি লক্ষে অপরাধের মাত্রা ৭১.৩ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাও বেড়েছে এ রাজ্যে (১৯৬৯৮টি থেকে বেড়ে হয়েছে ২০৪৬২টি)। উত্তরপ্রদেশের পরেই এই অপরাধে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এর মধ্যে মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন স্বামীর দ্বারা। গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনায় আবার সবচেয়ে বেশি মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যেই (২০৪৬২)। একই ভাবে বেড়েছে মহিলা পাচারের স‌ংখ্যা। ২০২২ সালে যেখানে ২৯ জন মহিলা পাচার হয়েছিলেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে ২০২৩ সালে পাচার হয়েছেন ৪২ জন। যা নিয়ে অনেকেই বলছেন, রাজধানী কলকাতা দেশের মধ্যে নিরাপদতম শহর হলেও এ রাজ্যের অন্যান্য অপরাধের পরিসংখ্যান কিন্তুযথেষ্ট উদ্বেগের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Acid Attack Domestic Violence

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy