বিকল ভোটযন্ত্র। মহেশতলায় ভোটের লাইন থেকেই ছড়াল বিক্ষোভ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারিতে সোমবার মহেশতলা বিধানসভার উপনির্বাচনে অশান্তির অভিযোগ কার্যত নেই। কিন্তু এই ভোটে সারাদিন ফুটতে থাকল ইভিএমের কাঁটা।
পূর্ব মাগুরা প্রাথমিক স্কুলের ১২৯ নম্বর বুথে এ দিন দেখা গেল ইভিএম বিভ্রাটের নজিরবিহীন চিত্র। বুথের সামনে লম্বা লাইন। সকাল সাতটায় ভোট শুরু হতেই ইভিএম খারাপ। সকাল সাড়ে আটটায় এল নতুন ইভিএম। তা-ও খারাপ। ফের সাড়ে ন’টায় নতুন ইভিএম। তা-ও খারাপ। বেলা ১১টায় আর একটি ইভিএম এলে শুরু হল ভোট। সংখ্যালঘু এলাকায় তত ক্ষণে ভোটের লাইন ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছেন মহিলারা। এক মহিলা ভোটারের কথায়, ‘‘আর কত ক্ষণ দাঁড়াব বলুন তো? রমজান মাস। সারাদিন উপোস। সন্ধ্যায় ইফতার। দাঁড়িয়ে থাকা তো মুশকিল! বাড়িতে নানা রান্না করতে হবে। ভোটের লাইনে দাঁড়ালে তো সব কিছুই মাথায় উঠবে।’’ সকাল থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত মহেশতলা বিধানসভার ২৮৩টি বুথে ৮২টি ইভিএম খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর। শাসক ও বিরোধী— দু’পক্ষেরই অভিযোগ, ইভিএম বিভ্রাটের জেরে তাদের সমর্থকদের একাংশ ভোট দিতে পারেনি।
আরও পড়ুন: কৌশলে চাই ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতও: শুভেন্দু
অবশ্য ইভিএম বিভ্রাট ছাড়া এ দিনের ভোটে আর কোনও উল্লেখযোগ্য বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েনি। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে শাসক দলের উপস্থিতিই বেশি নজরে এসেছে। গোটা মহেশতলা বিধানসভায় শাসক দলের তুলনায় সিপিএম ও বিজেপি-র ক্যাম্প অফিসের সংখ্যা ছিল প্রায় অর্ধেক। মহেশতলা পুরসভার ২৬টি ওয়ার্ডে সিপিএম ও বিজেপির ক্যাম্প অফিস ছিল হাতে গোনা। আর যেখানে তা ছিল, সেখানেও দলের কর্মী ছিল না। সকাল থেকে শাসক দলের প্রার্থী দুলাল দাস, সিপিএম প্রার্থী প্রভাত চৌধুরী ও বিজেপি প্রার্থী সুজিত ঘোষ বিভিন্ন বুথে ঘোরেন।
বিরোধীদের ক্যাম্প অফিসের সংখ্যা কম কেন, জিজ্ঞাসা করতেই মোল্লার গেটে দলীয় কার্যালয়ে বসে দুলালবাবু বলেন, ‘‘বিরোধীরা হয়তো অভিযোগ করবে, আমরা সন্ত্রাস করেছি বলে ওরা বসতে পারেনি। কিন্তু আসলে ওদের পাশে মানুষ নেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ীর ব্যাখ্যা, ‘‘এক দিকে রমজান মাস। আর এক দিকে গরম। আমরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সমর্থকের বাড়িতে অফিস করেছি।’’ শমীকবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘সরকারের অধীনে না হয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে ভোট হলে তা কেমন হয়, সেটা শাসক দলের শেখা উচিত।’’ বিজেপি-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পশ্চিম) জেলা সভাপতি অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের শাসানি দিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করায় অনেকে ক্যাম্পে আসেননি।’’
বিজেপি-র অভিযোগ, শেষ বেলায় ২৭৪ ও ৭৯ নম্বর বুথে তাদের এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি বুথে তাদের এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে বিরোধীরা। এ দিন প্রায় ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy