Advertisement
E-Paper

পুলিশের নামে বিস্তর নালিশ শুনলেন কেশরী

এক পা এক পা করে এগোচ্ছেন আর এই রকম এক একটা কথা শুনে থমকে যাচ্ছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তিনি বোঝার চেষ্টা করছিলেন, সাম্প্রতিক হিংসায় আসানসোল ও রানিগঞ্জের ক্ষত কত গভীর।

রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩৮
কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

কেউ বলছেন, ‘‘স্যার একবার দেখুন, কী ভাবে সব শেষ করেছে!’’ কেউ বলছেন, ‘‘স্যার, আজ এত পুলিশ আর সে দিন কারও দেখা পাইনি!’’

এক পা এক পা করে এগোচ্ছেন আর এই রকম এক একটা কথা শুনে থমকে যাচ্ছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তিনি বোঝার চেষ্টা করছিলেন, সাম্প্রতিক হিংসায় আসানসোল ও রানিগঞ্জের ক্ষত কত গভীর। দুর্গত মানুষের উদ্দেশে দু’-এক বার অস্ফুটে কিছু বলেছেন বটে, কিন্তু চারপাশের আর্তি আর আবেদনে সেগুলো ঠিক মতো শোনাই যায়নি। তবে আসানসোলের রেলপাড়া-চাদমারি অঞ্চলের মানুষের কাছে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একটাই কথা বলেছেন তিনি, ‘‘শান্তি রক্ষা করুন। আমি শান্তির বার্তা নিয়েই এসেছি।’’

রামনবমী ঘিরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে দিন কয়েক আগেই রক্তাক্ত হয়েছে আসানসোল। পুড়েছে বহু দোকান-বাড়ি। সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনার ৬ দিন পরেও স্বাভাবিক হয়নি বহু এলাকা। এর মধ্যেই শনিবার বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন রাজ্যপাল। আর প্রায় সর্বত্রই শুনলেন পুলিশের নামে ভুরিভুরি অভিযোগ।

রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের এ দিনের সফর ঘিরে শিরদাঁড়া টান করে ছিল রাজ্য পুলিশ। রাজ্যপালের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের পাশাপাশি পুলিশের কয়েক দফার বেষ্টনী ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল ১১টায় কলকাতা থেকে আসানসোলে পৌঁছন কেশরীনাথ। পূর্বপরিকল্পনা মতোই সার্কিট হাউসে জেলাশাসক-সহ পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। তার পর রওনা হন শহর লাগোয়া চাদমারিতে। সঙ্গে বিশাল পুলিশ বাহিনী। রাজ্যপালের যাত্রাপথ নিশ্ছিদ্র রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রায় সব থানা এ দিন নেমেছিল রাস্তায়।

অশান্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলতে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের পাশে নিয়ে বেলা সওয়া বারোটা নাগাদ রাজ্যপাল পৌঁছন বালবোধন হাইস্কুলের মাঠে। গন্ডগোলের সময় যথেচ্ছ বোমা, গুলি ছুড়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেই আতঙ্ক এখনও ভুলতে পারেননি স্থানীয়রা। রবিবারের অশান্তির জেরে এখানেই একটি দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সে দাগ এখনও স্পষ্ট। মধ্যবয়সী এক স্থানীয়ের মুখে সে দিনের বিবরণ শোনেন রাজ্যপাল। কনভয় দেখে স্থানীয় মানুষেরা আগেই এগিয়ে এসেছিলেন। পরিবারের শিশু- কিশোরদের নিয়েই মহিলারা রাজ্যপালের গাড়ির সঙ্গে এগিয়ে যান বেশ কিছুটা পথ। ভিতরে বসে থাকা রাজ্যপালের উদ্দেশে তাঁদেরই এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাদের কী হবে? কে দেখবে?’’ এ সবের সঙ্গেই চার দিক থেকে উড়ে আসে সে দিনের গন্ডগোলের বিবরণ। এক সময় গাড়ির ভিতর থেকেই আক্রান্তদের আশ্বস্ত করেন রাজ্যপাল। এক সময় রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আগেই আসতাম। কিছু কারণে আসতে পারিনি।’’ তার পরই স্থানীয় জনতার উদ্দেশে শান্তি রক্ষার আবেদন করেন তিনি।

মিনিট কুড়ি এই অঞ্চলে থাকার পর রাজ্যপাল ফিরে আসেন সার্কিট হাউসে। সেখানে ফের একবার শান্তি রক্ষার আবেদন করেন। কিছু ক্ষণ পরে রওনা হন হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত রানিগঞ্জের তারবাংলার দিকে। এখানে একটি বাজারে পরপর কয়েকটি দোকান পোড়ানো হয়েছিল সংঘর্ষের সময়। পুলিশি প্রহরার মধ্যেই রাজ্যপাল সে দিকে এগিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রৌঢ় এক দোকানিকে ডেকে খোঁজ নেন ক্ষয়ক্ষতির। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন লাগোয়া হাটতলার পরিস্থিতি ঘুরে দেখার জন্য। রাজ্যপাল অবশ্য সেখানে যাননি। প্রায় সব জায়গাতেই এ দিন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ শুনতে হয়েছে রাজ্যপালকে। তবে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি কেশরীনাথ।

রাজ্যপাল এলেন, দেখলেন, আক্রান্তদের সঙ্গে কথাও বললেন। কিন্তু কী ‘বুঝলেন’, সেটা স্পষ্ট করলেন না সাংবাদিকদের কাছে। কেন্দ্রের কাছে তাঁর পাঠানো মাসিক রিপোর্টে আসানসোল প্রসঙ্গে কী বলা হবে, এখন সেটাই রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয়।

Asansol Keshari Nath Tripathi Communal Violence Raniganj কেশরীনাথ ত্রিপাঠী Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy