Advertisement
১৮ মে ২০২৪

শ্রমিকদের সঙ্গে ছক কষেই পাচার হত অস্ত্র

লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, গোয়েন্দাদের একটি দল ইতিমধ্যেই ওই দুই রাজ্যে গিয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

ইছাপুর রাইফেল কারখানা থেকে অস্ত্র পাচারের ঘটনায় এ বার সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশকেও সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, জেরায় উমেশ এবং কার্তিক স্বীকার করেছে, শুধু পাঁচিল টপকেই নয়, শ্রমিকদের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশে তারা ভিতরে ঢুকে যন্ত্রাংশ চুরি করেছে। তদন্তকারীরা আরও বলছেন, নিরাপত্তারক্ষীদের মদত না পেলে এ ভাবে দিনের পর দিন অস্ত্র পাচার করা সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি বিহার ও ঝাড়খণ্ডের আরও কয়েক জনের নামও তদন্তে উঠে এসেছে। সামনে এসেছে এক দালালের কথাও। লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, গোয়েন্দাদের একটি দল ইতিমধ্যেই ওই দুই রাজ্যে গিয়েছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, অস্ত্র কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ডিফেন্স সিকিওরিটি কোর’। যার মাথায় রয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের এক জন অফিসার। তদন্তে এবং ধৃতদের জেরা করে ইতিমধ্যেই কয়েক জন রক্ষীর নাম উঠে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলবেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ইছাপুর রাইফেল কারখানায় তল্লাশি করে তবে বাইরে বেরোনো যায়। কিন্তু, উমেশ ও কার্তিককে তল্লাশি না করেই ছেড়ে দেওয়া হত।

গত রবিবার বাবুঘাটে অস্ত্র কেনাবেচার সময়ে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে গুড্ডু পণ্ডিত, জয়শঙ্কর পাণ্ডে, উমেশ রায় ওরফে ভোলা এবং কার্তিক সাউ। গুড্ডু বিহারের অস্ত্র ব্যবসায়ী, জয়শঙ্কর তার শাগরেদ। উমেশ ও কার্তিক ইছাপুরের কারখানার জঞ্জাল সাফাইয়ের ঠিকাদার। ওই চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাক়়ড়াও করা হয় কারখানার দুই জুনিয়র ওয়ার্কস ম্যানেজার সুখদা মুর্মু এবং সুশান্ত বসুকে।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সুখদা ও সুশান্ত নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে বহু যন্ত্রাংশকে কাগজে-কলমে বাতিল দেখাত। তার পরে উমেশ ও কার্তিকের মাধ্যমে সেগুলি পাচার করা হত। নিয়মানুযায়ী, বাতিল যন্ত্রাংশ গলিয়ে ফেলার কথা। কিন্তু, সেই পদ্ধতি মানা হত না। পুলিশ আরও জেনেছে, উমেশ এবং কার্তিক জঞ্জাল সাফাইয়ের ঠিকাদার হওয়ার সুবাদে তাদের কারখানার ভিতরে যাওয়ার ব্যাপারে বাধা-নিষেধ ছিল না। বাতিল অথচ সামান্য মেরামতি করলেই ঠিক হয়ে যাবে এমন যন্ত্রাংশ কারখানার কোথায় রাখা থাকে, সুখদা এবং সুশান্তের থেকেই জেনে নিত ওই দু’জন। এর পরে জঞ্জাল সাফাইয়ে তদারকির ফাঁকে সেই সব যন্ত্রাংশ তুলে নিত গাড়িতে।

ধৃতেরা প্রথমে পুলিশকে জানিয়েছিল, তারা কারখানার পাঁচিল টপকে ঢুকে গ্রিল ভাঙা জানলা দিয়ে যন্ত্রাংশ বাইরে আনত। কিন্তু, মঙ্গলবার উমেশকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়ার পরে গাড়িতে করে অস্ত্র পাচারের কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘উমেশ প্রথমে ভুল তথ্য দিচ্ছিল। তাকে চেপে ধরতেই আসলটা বেরিয়ে আসে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gun smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE