এটিএমে লাইন। নিজস্ব চিত্র
এটিএম-এ গিয়ে খালি হাতে ফিরে এলেন কেউ। কোথাও বা বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাড়ি ফিরতে বাধ্য হলেন অফিস যাত্রী। পরপর দু’দিন গোলমালের জেরে বৃহস্পতিবার আসানসোলে নাগরিক পরিষেবায় দুর্ভোগের ছবিটা ছিল এমনই। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে আনার ব্যবস্থা করে পুলিশ-প্রশাসন।
গোলমালের জেরে বুধবার সন্ধ্যায় আসানসোল মহকুমা জুড়ে আজ, শুক্রবার ১২টা পর্যন্ত যাবতীয় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের ডিএম শশাঙ্ক শেঠী। এই নির্দেশের পরে মোবাইল হোক বা সরকারি অফিস, সর্বত্র পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।
শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রবীন্দ্র ভবন চত্বর। সেখানে এটিএম-এ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন তরুণী। তাঁর অভিজ্ঞতা, টাকা ওঠেনি, ‘লিঙ্ক ফেলিয়োর’ দেখিয়েছে। পুলিশ লাইন লাগোয়া এলাকা, এসবি গড়াই রোড, বার্নপুর রোড-সহ শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলির সর্বত্র টাকা তুলতে গিয়ে এমন ভোগান্তির মুখে পড়েন নাগরিকেরা।
সমস্যা হয়েছে নানা সরকারি দফতরে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে খাজনা জমা দেওয়ার মতো নানা কাজ হয়নি। একই ছবি ছিল রানিগঞ্জ, কুলটির নানা সরকারি অফিসেও। আসানসোল, কুলটিতে জমি রেজিস্ট্রি অফিস, আসানসোল পুরসভাতেও ইন্টারনেট না থাকায় প্রায় কোনও কাজই হয়নি। রেজিস্ট্রি অফিসে আসা প্রবীণ কমলাকান্ত দাস বলেন, ‘‘কাজ হল না। কবে যে সব স্বাভাবিক হবে জানি না।’’
ইন্টারনেট না থাকায় রেল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, ডাকঘর নিজস্ব ‘সার্ভার’-কে কাজে লাগিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু সমস্যায় পড়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। আসানসোলের একটি বেসরকারি শিল্প সংস্থার তরফে সঞ্জয় কবিরাজ বলেন, ‘‘ই-মেল খুলতে পারছি না কাল রাত থেকে। জরুরি দরকার ছিল।’’ টাকা লেনদেন হয়নি বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতেও।
সমস্যায় পড়েন ব্যবসায়ীরাও। রানিগঞ্জ বণিক সংগঠনের তরফে রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, ‘‘৩১ মার্চের মধ্যে আয়কর জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় সমস্যা হচ্ছে।’’ শুধু তা-ই নয়, এই পরিবেশের প্রভাব পড়ছে শিল্পাঞ্চলের বিকিকিনিতেও। রানিগঞ্জ বাজার খুললেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। আসানসোল বাজারের ব্যবসায়ীরাও জানান, এই পরিস্থিতিতে শুধু শহরবাসীই নন, সমস্যায় পড়ছেন লাগোয়া বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলা এবং ঝাড়খণ্ডের ক্রেতারাও।
বুধবার আসানসোলে পরিবহণ ব্যবস্থা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সংখ্যায় কম হলেও বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু যাত্রী খুবই কম। এই পরিস্থিতিতে আসানসোল, বার্নপুর, সীতারামপুর, নিয়ামতপুর, ধেমোমেন, চিনাকুড়ি, রাধানগর এলাকায় চড়া ভাড়া দিয়ে অটোতে চড়তে দেখা গিয়েছে বাসিন্দাদের।
এই পরিস্থিতিতে আসানসোল মহকুমার সর্বত্র বাসিন্দাদের বলতে শোনা গিয়েছে, দ্রুত স্বাভাবিক হোক পরিস্থিতি। ছন্দে ফিরুক আসানসোল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy