Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পড়া শিকেয়, চলছে জুতোর মাপ নেওয়া

বীরভূম থেকে বর্ধমানের মাটি উৎসবে যাওয়ার পথে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের খালি পা দেখে একথাই মনে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রাথমিকের সব পড়ুয়াকে জুতো দেবে তাঁর সরকার।

এই সব কচি পায়েই উঠবে সরকারি জুতো। নিজস্ব চিত্র।

এই সব কচি পায়েই উঠবে সরকারি জুতো। নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়ে!

বীরভূম থেকে বর্ধমানের মাটি উৎসবে যাওয়ার পথে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের খালি পা দেখে একথাই মনে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রাথমিকের সব পড়ুয়াকে জুতো দেবে তাঁর সরকার। সেই ফরমান কার্যকর করতে এক দিনের মধ্যেই স্কুল শিক্ষা দফতরকে ১৫৩ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে অর্থ দফতর। তার পরেও অবশ্য সমস্যায় দাঁড়ি পড়েনি। ঠিক কত পড়ুয়া, তাদের পায়ের মাপ কী, এ সব নিয়ে ঝক্কি চলছিলই। শেষ মুহূর্তে আবার ঠিক হয়েছে কেডস-এর বদলে কালো বুট দেওয়া হবে সকলকে। আর তাতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

সব থেকে ফাঁপড়ে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। কারণ, এই জেলায় সোমবার নতুন নির্দেশিকা জারি করে স্কুলগুলোকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবারের মধ্যে পড়ুয়া সংখ্যা (কতজন ছাত্র, কত জন ছাত্রী-সহ) এবং তাদের পায়ের মাপ জানাতে হবে। হাতে মাত্র এক দিন সময়। ফলে, মঙ্গলবার পড়াশোনা শিকেয় তুলে চলল পায়ের মাপ নেওয়া। পড়ানো ফেলে শিক্ষকেরা সেই কাজে ব্যস্ত রইলেন। কেউ কাগজে মাপ নিলেন, কেউ ফিতেয়, কেউ আবার ছুটলেন স্কুলের কাছেপিঠের জুতোর দোকানে। সেখান থেকে জুতো আনিয়ে পড়ুয়াদের পায়ের মাপ নিলেন।

অবশ্য দিনের শেষে সরকারি নির্দেশ মেনে বহু স্কুলই যাবতীয় তথ্য জমা দিতে পারেনি। এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের কথায়, “এটা তো কম ঝক্কি নয়! সোমবার নতুন নির্দেশের কথা শুনলাম, মঙ্গলবার তা হাতে পেলাম। এ দিন সব তথ্য নথিভুক্ত করেছি। বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে জেলায় পাঠিয়ে দেব।” আর এক প্রাথমিক শিক্ষকের স্বীকারোক্তি, “আমাদের অনেক কাজই করতে হয়। তবে এত ঝক্কির কাজ আগে করিনি!”

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) আমিনুল আহসানের বক্তব্য, “পুরো বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। সব দিক দেখে নিচ্ছি!” সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের জেলা আধিকারিক সুদীপ্ত দেবনাথও বলেন, “তেমন সমস্যা হবে না। স্কুলগুলো তো আগেই যাবতীয় তথ্য পাঠিয়েছিল। এ বার শুধু পড়ুয়াদের মধ্যে ছেলে কত, মেয়ে কত, তাই আলাদা করে জানাতে বলা হয়েছে।” সুদীপ্তবাবু বিষয়টি সহজ বলে জানালেও পরিস্থিতি কিন্তু যথেষ্ট জটিল। কারণ, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ক্লাস ধরে ধরে জুতোর মাপ নিতে বলা হয়েছে। তবে এক ক্লাসের সব পড়ুয়ার পায়ের মাপ তো সমান নয়। তাই শিক্ষকেরা পড়ুয়া ধরে ধরে পায়ের মাপ নিয়েছেন। যাতে পরে সমস্যা নয়। আর এতেই বেড়েছে ভোগান্তি। বেশিরভাগ স্কুলই একদিনে গোটাটা গুছিয়ে উঠতে পারেনি। জেলা শিক্ষা দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “রাজ্যের নির্দেশ রয়েছে শুক্রবারের মধ্যে জেলা থেকে সব তথ্য পাঠিয়ে দিতে হবে। তাই আমরা যদি হাতে সময় না রাখি তাহলে সমস্যা। এত স্কুলের তথ্য এক জায়গায় করতে হবে তো!”

জানা গিয়েছে, ভোটের আগে জুতো বিলি সারতেই এত তাড়াহুড়ো। শিক্ষা দফতরের এক সূত্রে খবর, জুতো কেনা নিয়ে আগামী সোমবার দরপত্র চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তার আগে জেলার সব তথ্য হাতে পেতে হবে। কিছু শিক্ষক সংগঠন এতে চটেছে। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাঁতরার মতে, “এক এক বার এক এক রকম নির্দেশ পাঠিয়ে শিক্ষকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শিক্ষকেরা যদি পড়ুয়াদের পায়ের মাপ নিতেই ব্যস্ত থাকেন, তাহলে পড়াবেন কখন!” পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি চন্দন সাহার অবশ্য যুক্তি, “এটা খুব সহজ কাজ! পায়ের মাপ নিতে কতক্ষণ আর সময় লাগবে।”

রাজ্যে প্রাথমিকের পড়ুয়া রয়েছে ৫৪ লক্ষ। তার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে ৪ লক্ষ। এখন ঠিক হয়েছে, কেডস নয়, সকলকে কালো বুট দেওয়া হবে। এ মাসের শেষেই পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাথমিক পড়ুয়াদের জুতো দেওয়া শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এতো গেল জুতোর মাপ নেওয়া। জুতো এলে কী হবে, তা নিয়ে এখন থেকেই প্রমাদ গুনছেন শিক্ষকেরা। এক প্রাথমিক শিক্ষকের আশঙ্কা, “জুতো আসার পরে গণ্ডগোল বাড়বে। স্কুলে সব জুতো আসে কিনা, কোন জুতো কার পায়ে হয়, সেটাই দেখার!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school shoe westbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE