Advertisement
E-Paper

কয়লাখনি-নিলামে বড় লাভের আশা রাজ্যের

মেঘ না চাইতেই জল! পশ্চিমবঙ্গের কোষাগারের জন্য জন্য সুখবর শোনালেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আজ নরেন্দ্র মোদী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট যে ২১৪টি কয়লাখনির বণ্টন বাতিল করে দিয়েছিল, সেই খনিগুলি নতুন করে নিলাম করা হবে। সেই নিলামের অর্থ যাবে রাজ্যগুলির সিন্দুকে। ওই ২১৪টি কয়লাখনির মধ্যে ৩০টি পশ্চিমবঙ্গে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৩

মেঘ না চাইতেই জল!

পশ্চিমবঙ্গের কোষাগারের জন্য জন্য সুখবর শোনালেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আজ নরেন্দ্র মোদী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট যে ২১৪টি কয়লাখনির বণ্টন বাতিল করে দিয়েছিল, সেই খনিগুলি নতুন করে নিলাম করা হবে। সেই নিলামের অর্থ যাবে রাজ্যগুলির সিন্দুকে। ওই ২১৪টি কয়লাখনির মধ্যে ৩০টি পশ্চিমবঙ্গে। এগুলির মধ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিদ্যুত্‌ সংস্থার প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকটি কয়লাখনি দিতে হবে। বাকি খনিগুলি নিলাম করে যে অর্থ আসবে, তার পুরো টাকাই রাজ্য পাবে। কেন্দ্র সেই অর্থে ভাগ বসাবে না। বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্যের কোষাগার নিয়ে অনুযোগ শোনা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অমিত মিত্রদের মুখে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত সেই অনুযোগ কিছুটা কমাতে পারে।

আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের পর অরুণ জেটলি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি এর ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতেই অধিকাংশ কয়লা খনি অবস্থিত।” তাঁর কথায়, “এই রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। নিলামের অর্থে রাজ্যগুলির আর্থিক ক্ষমতায়ন হবে। কয়লা খনিগুলিতে উত্‌পাদন শুরু হলে এ সব রাজ্যে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ পাবেন।’’ বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপি-তৃণমূলের সংঘাতের কোনও সম্পর্ক নেই। এ’টি উন্নয়নের প্রশ্নে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত।

বিদ্যুত্‌, সিমেন্ট ও ইস্পাত উত্‌পাদনকারী সংস্থাগুলির জন্য ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে যে সব কয়লাখনি বণ্টন করা হয়েছিল, তা নিয়মমাফিক হয়নি বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২১৪টি খনির বণ্টন বাতিলও করে দেয় শীর্ষ আদালত। ফলে কয়লাখনি ক্ষেত্রে বিপুল অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। খনি থেকে কয়লা তুলে যে সব সংস্থা বিদ্যুত্‌, সিমেন্ট বা ইস্পাত তৈরি করছিল, তারা কোথা থেকে কয়লা পাবে, সেই প্রশ্ন ওঠে। সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে এই সমস্যা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিন-চার মাসের মধ্যে খনিগুলি ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিলাম (ই-অকশন) করে দেওয়া হবে। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে কোল ইন্ডিয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বেসরকারি খননকারী সংস্থাগুলিকে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার দরজাও খোলা রাখছে মোদী সরকার। কার্যত কয়লা ক্ষেত্রের অসরকারিকরণ (ডি-ন্যাশনালাইজেশন) এটা। খনি থেকে কয়লা তুলে বাজারে বিক্রি করার উপরে সরকারি সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার যে একচেটিয়া অধিকার ছিল, এই পদক্ষেপ করা হলে তা আর থাকবে না। কয়লাখনি ক্ষেত্রে যা মোদী সরকারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেই শিল্পমহল মনে করছে।

জেটলি অবশ্য জানিয়েছেন, অসরকারিকরণের পথে এখনই হাঁটছে না কেন্দ্র। তিনি বলেন, “এখনই এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। যখন যেমন প্রয়োজন, তেমনই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোল ইন্ডিয়ার স্বার্থে কোনও আঘাত লাগবে না।” বিদ্যুত্‌মন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, “কোল ইন্ডিয়ার পক্ষে কয়লার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। বহু খনিতে উত্‌পাদনের কাজ শুরু হয়নি।” কয়লা মন্ত্রক সূত্রের মতে, প্রতিযোগিতার মুখে পড়লে কোল ইন্ডিয়ারও কর্মদক্ষতা বাড়বে। কয়লার কালোবাজারি বন্ধ হবে।

নতুন করে নিলামের ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে কি না, সেই প্রশ্ন নিয়েও এত দিন আলোচনা চলছিল। মন্ত্রিসভার আজকের সিদ্ধান্তের ফলে বিদ্যুত্‌, সিমেন্ট বা ইস্পাত উত্‌পাদনকারী যে সব সংস্থা নিজেদের প্রয়োজনের জন্য খনি পেয়েছিল, তাদের নতুন করে নিলামের মাধ্যমে খনি কিনতে হবে। এত দিন যে কয়লা তোলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তার জন্য জরিমানাও দিতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদনকারী সংস্থাগুলির উত্‌পাদনের খরচ বাড়বে। তাদের বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হতে পারে।

বিদ্যুত্‌মন্ত্রী পীযূষ গয়াল অবশ্য দাবি করেছেন, “বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদনের খরচ যাতে না বাড়ে, সে দিকে নজর রাখা হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার বদলে বরং কমতে পারে।”

কী ভাবে? পীযূষের কথায়, “বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদনকারী সংস্থাগুলি প্রয়োজন মতো কয়লা পাচ্ছিল না। এ বার সেই সমস্যা থাকবে না। যথেষ্ট পরিমাণে কয়লা উত্‌পাদন হওয়ার ফলে দাম কমতে পারে। দেশে যথেষ্ট কয়লা উত্‌পাদন না হওয়ায় বছরে ২ হাজার কোটি ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হচ্ছিল। তারও আর দরকার পড়বে না।”

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, নিলামের আগে একটি সরকারি কমিটি খনিগুলির ন্যূনতম মূল্য ঠিক করে দেবে। জেটলি বলেন, “আজই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য অর্ডিন্যান্স পাঠানো হচ্ছে। ২০০৫ সাল থেকে ইউপিএ সরকার কয়লা ক্ষেত্রে যে জট পাকিয়ে রেখেছিল, আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।” ২১৪টির মধ্যে ৭৪টি খনি থেকে কয়লা উত্‌পাদন শুরু হয়ে গিয়েছিল বা শুরু হতে যাচ্ছিল। সেগুলিও নিলাম হবে। আগে যারা খনি পেয়েছিল, তারা অগ্রাধিকার পাবে না। কয়লাখনি বণ্টন দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্ত করছে। যে সব সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে, তারাও আর নিলামে অংশ নিতে পারবে না।

coal block allocation coal block auction arun jaitley profit of west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy