Advertisement
০২ মে ২০২৪
Dhupguri By election

ধূপগুড়ি উদ্ধারের ৫ কারণ: তৃণমূলের বিজয়ী প্রার্থী নির্মলচন্দ্র ব্যাখ্যা দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনে

ধূপগুড়ি বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারল তৃণমূল। ব্যবধান চার হাজারের বেশি। এই জয়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছেন দলনেত্রী স্বয়ং। কিন্তু কী ভাবে পুনরুদ্ধার হল? পাঁচ কারণ বললেন বিজয়ী।

Dhupguri By election

নির্মলচন্দ্র রায়। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২৮
Share: Save:

ধূপগুড়ির উপনির্বাচনকে উত্তরবঙ্গের প্রেক্ষিতে লোকসভার ‘অ্যাসিড টেস্ট’ হিসাবে দেখেছিলেন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের অনেকেই। তার কারণ, এলাকার জনবিন্যাস। রাজবংশী, চা-বলয়ের আদিবাসী মানুষজন মিলিয়েই ধূপগুড়ি। উপনির্বাচনে বিজেপির পরীক্ষা ছিল আসন ধরে রাখার। আর শাসক তৃণমূলের কাছে ছিল ছিনিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। শুক্রবার ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল, তৃণমূল ধূপগুড়ি আসনটি বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পেরেছে। ব্যবধান চার হাজারের বেশি। এই জয়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। কিন্তু কী ভাবে ধূপগুড়ি পুনরুদ্ধার করল তৃণমূল? কোন কোন ‘ফ্যাক্টর’ বড় ভূমিকা নিল? বিজয়ী প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় তাঁর মতে পাঁচটি প্রধান কারণকে তুলে ধরলেন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে।

অধ্যাপক নির্মল মনে করেন, দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ধূপগুড়িকে পৃথক মহকুমা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তা প্রচারের শেষ মুহূর্তে দারুণ কাজ করেছে। বিধায়ক হিসাবে শপথ নিতে চলা নির্মলের বক্তব্য, অভিষেকের ওই ঘোষণা শহরাঞ্চলে তৃণমূলের ভোট ঘাটতিকে অনেকটা কমিয়ে দিতে পেরেছে। যা তাঁর জয়কে তুলনামূলক সহজ করেছে।

দ্বিতীয়ত, নির্মল মনে করেন, সমান্তরাল ভাবে সরকারের সমস্ত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদি ভাবে ধূপগুড়ি উদ্ধারে কাজ করেছে। লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ সামাজিক ভাতা প্রকল্পগুলিও জনমানসে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পেরেছে।

নির্মল তৃতীয় কারণ হিসাবে কর্মীদের মধ্যে জেতার জেদ ও ঐক্যের কথা বলছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ধূপগুড়িতে বিজেপির জয়ের পর তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ ময়নাতদন্তে উঠে এসেছিল দলের মধ্যেকার অনৈক্যের বিষয়টি। শনিবার নির্মল বলেন, ‘‘এই ভোটে কর্মীরা এক হয়ে ঝাঁপিয়েছিলেন। তার ফল আমরা পেয়েছি।’’

চতুর্থত, নির্মল মনে করেন, ধূপগুড়ির বাইরের নেতারা যে ভাবে ধারাবাহিক যাতায়াত করেছেন, থেকেছেন, গাঁ-গঞ্জে ঘুরেছেন, তা-ও মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করছিল। প্রকাশ্যে না-বললেও তৃণমূলের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, অভিষেকের টিম যে ভাবে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে কাজ করেছে, সেটা‌ও এই ভোটে কার্যকরী হয়েছে।

পঞ্চম কারণ হিসাবে নির্মল উল্লেখ করেছেন প্রচার কৌশলকে। তাঁর কথায়, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা বাদ দিয়ে আমরা কোনও বড় সভা করিনি। জোর দেওয়া হয়েছিল বুথস্তরের প্রচারে। বাড়ি বাড়ি যাওয়ায়। যেখানে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলা গিয়েছে। সেই সঙ্গে মানুষের কথা, অভাব-অভিযোগও শোনা গিয়েছে।’’

ধূপগুড়ি শহর এলাকা নিয়ে যে তৃণমূল চাপে ছিল, তা আনন্দবাজার অনলাইন আগেই লিখেছিল। শনিবার নির্মল বলেন, ‘‘গত বিধানসভা ভোটে শহরাঞ্চলে আমরা চার হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলাম। এ বার সেটা হাজারের কম ভোটে নেমে এসেছে।’’ অভিষেকের মহকুমা-ঘোষণার ফলেই তা সম্ভব হয়েছে মনে করছেন ইতিহাসের অধ্যাপক। তবে যে সব জায়গায় তৃণমূল হেরেছে, সেখানকার ফল নিয়ে দ্রুতই বিশ্লেষণে বসা হবে বলে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বানারহাট-১, শালবাড়ি-২, গধেয়ারকুঠি, মাগুমারি-১, দাদং— এই সব এলাকায় বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। যে সমস্ত এলাকায় রাজবংশী, আদিবাসী সবাই রয়েছেন। আবার তৃণমূল রুপোলি রেখা দেখছে চা বাগানের ফলাফলে। কারণ, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ছ’টি চা বাগান এলাকাতেই তৃণমূল ধরাশায়ী হয়েছিল। এ বার কিন্তু তিনটি চা বাগান এলাকায় তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, চা বাগান এলাকায় বিজেপির যে আধিপত্য তৈরি হয়েছিল, উপনির্বাচন পর্বে তা অনেকটাই ভেঙে দিতে পেরেছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhupguri TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE