—ফাইল চিত্র।
আদালত বা সরকার যে যা-ই বলুক, ছটপুজোয় কোনও রকম বিধি-নিষেধের পক্ষপাতী নয় বিজেপি। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, যে পুজোয় যা করণীয়, তাতে দল কোনও রকম বাধা দেবে না। বরং, বাধা এলে প্রশ্ন তুলবে।
রবীন্দ্র সরোবর বা সুভাষ সরোবরের মতো জলাশয় দূষিত করে ছট উৎসব পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সরকারি সূত্রের দাবি, কলকাতা এবং আশপাশে ১৩০০-র মতো জলাশয় খনন করা হয়েছে ‘জল ধরো, জল ভরো’ কর্মসূচির অধীনে। সরকার চায়, ছটে সেগুলি ব্যবহার করা হোক। আর রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবরে ছটপুজো ঠেকাতে তালা দিয়ে রাখা হবে।
পরিবেশ-বিধি এবং করোনা-কালে আদালতের রায় মাথায় রেখে ছটপুজো পালন করার জন্য বুধবারও আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই বক্তব্য বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বেরও। কিন্তু বিজেপি কোনও বিধিরই পরোয়া করতে নারাজ! তাদের পাল্টা যুক্তি, অন্য কোনও ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিধি প্রয়োগ না হলে পুজোর বেলায় পরিবেশ বিধি মানতে হবে কেন? রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের মতে, বিজেপি এমনিতেই অবাঙালি-ঘেঁষা দল হিসেবে পরিচিত। এখন ছটপুজোর অছিলায় ভোট-মুখী রাজ্যে তারা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণই শুধু নয়, ভাষাগত বিভাজনও তৈরি করার চেষ্টা করছে।
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু এ দিন বলেন, ‘‘আমরা কোথাও ছটে বাধা দেব না। কাউকে বারণও করব না, বোঝাবও না। যাঁরা ছট পালন করেন, তাঁরাই যথেষ্ট বুঝদার। করোনা আবহে বিধি মেনেই তাঁরা পুজো-অনুষ্ঠান করবেন।’’
কিন্তু পরিবেশ দূষণ আটকাতে কলকাতা হাইকোর্ট রবীন্দ্র সরোবরের মতো জায়গায় ছট পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাজ্য সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা মানবে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির অবস্থান কী? খোলাখুলি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দিকে আঙুল তুলে সায়ন্তন বলেন, ‘‘শুধু দুর্গাপুজো, ছটে আদালতের নির্দেশ মানবে আর অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে মানবে না, সরকারের এই দু’রকম নীতি আমরা মানি না।’’ তাঁর আরও দাবি, তাঁদের দল ক্ষমতায় এলে ছটপুজো বা ইদ, সব ধরনের উৎসবেই আদালতের রায় বা বিধি পালন করবে।
বিজেপির এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএম এবং কংগ্রেস দু’দলেরই অভিযোগ, করোনা-আবহে পরিবেশ বিধিকেও অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রের শাসক দল ধর্মীয় মেরুকরণের তত্ত্ব আমদানি করছে এবং রাজ্যে ‘মৌলবাদী’ পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তার মধ্যে অপযুক্তি এনে বিষয়টাকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা নিন্দনীয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, উৎসবকেও নানা সময়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মত, বিশেষ পরিস্থিতিতে মক্কায় হজের জমায়েত বা রেড রোডে ইদের জমায়েতও বন্ধ থেকেছে। তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তাঁর কথায়, ‘‘ধর্মাচরণের অধিকার সকলের আছে। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে অনেক সময়ে অনেক কিছুই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। তার জন্য ধর্মীয় আবেগকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলে মৌলবাদের হাতকেই শক্ত করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy