Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মমতার দেওয়া নামটা সার্থক করে তুলবেন কংগ্রেস নেতারাই

তামাশা বলব? নাকি লোক হাসানো? কোন শব্দটা উপযুক্ত হবে? প্রাসাদের হাল জরাজীর্ণ। দেওয়ালগুলো কোনওক্রমে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠিকই। কিন্তু শ্রীহীন, ক্ষয়িষ্ণু চেহারা। এমন দশার মধ্যে অন্দরমহলের আব্রু যেটুকু রয়েছে, সেটাও খসিয়ে দিয়ে অভ্যন্তরীণ কেচ্ছাটা হাটের মাঝে এনে ফেলার কী দরকার ছিল?

অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নান এবং মানস ভুঁইয়া।—ফাইল চিত্র।

অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নান এবং মানস ভুঁইয়া।—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

তামাশা বলব? নাকি লোক হাসানো? কোন শব্দটা উপযুক্ত হবে?

প্রাসাদের হাল জরাজীর্ণ। দেওয়ালগুলো কোনওক্রমে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠিকই। কিন্তু শ্রীহীন, ক্ষয়িষ্ণু চেহারা। এমন দশার মধ্যে অন্দরমহলের আব্রু যেটুকু রয়েছে, সেটাও খসিয়ে দিয়ে অভ্যন্তরীণ কেচ্ছাটা হাটের মাঝে এনে ফেলার কী দরকার ছিল?

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে আচমকা মানস ভুঁইয়ার নাম ঘোষণা থেকে শুরু করে দিল্লিতে রাহুল গাঁধীর বাসভবনে রাহুল-মানস বৈঠক পর্যন্ত যা যা ঘটল, তার কোনটা ঘটা প্রয়োজনীয় ছিল? কোন ঘটনাটা এমন, যা না ঘটলেই চলছিল না?

যে কোনও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলেই নীতি এবং কর্মপন্থা নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকে। কংগ্রেসের মতো একটি দলেও নিঃসন্দেহে তা রয়েছে। কিন্তু দলের দায়িত্বশীল নেতৃবর্গ সম্ভবত আর সে সব মানছেন না। দুঃসময়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়, প্রতিটি পদক্ষেপ পরিমিত হতে হয়। এই শিক্ষা বোধ হয় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা ভুলে গিয়েছেন। শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফল করে লোকসভায় মাত্র ৪৪ জন সদস্য দলটার। রাজ্যে রাজ্যে সংগঠনের হতশ্রী দশা। পশ্চিমবঙ্গে দেড় দশক পর কোনওক্রমে প্রধান বিরোধী দলের তকমাটা ফিরে পাওয়া গিয়েছে। সময়টা সংহত হওয়ার, সমর্থন যেখানে যেটুকু রয়েছে, তাকে সংহত করবার। কিন্তু অধীররঞ্জন চৌধুরী, মানসরঞ্জন ভুঁইয়া, আবদুল মান্নানদের দেখে মনে হয়, ফাঁকা সিন্দুক আবার ভরে নেওয়ার কথা ভাবছেনই না। বরং কুলুঙ্গিতে যেটুকু যা অবশিষ্ট, সে সবও ছুড়ে ছুড়ে ফেলছেন, যে যে-দিকে পারছেন। আর সেই সুযোগে, যেখানে কংগ্রেসের যেটুকু গড় এখনও বহাল, সেখানে একে একে থাবা বসাচ্ছে শাসক দল।

দল চাইছে না। তবু মানস ভুঁইয়া অনড়। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান তাঁকে হতেই হবে। নেতৃত্বের নির্দেশ কি ইচ্ছাকৃতই মানতে চাইছেন না তিনি? শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায় যেচে ঘাড়ে নিতে চান? বহিষ্কৃত হয়ে তৃণমূলে যোগদানের পথ পরিষ্কার করে নিতে চান? এমন নানা প্রশ্ন উঠে গেল স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কঠোর বার্তা আসতেই তড়িঘড়ি ছুটলেন রাজধানীতে। নেতাকে সম্ভবত বুঝিয়ে এলেন, বিদ্রোহী তিনি নন।

তা হলে কী প্রমাণ করতে চাইছিলেন? প্রদেশ নেতৃত্বকে তিনি নিজের ঊর্ধ্বতন বলে মানেন না? প্রমাণ করতে চাইছিলেন, অধীর-মান্নানদের চেয়ে তিনি অনেক বড় নেতা? এই সময়টা এবং এই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির মঞ্চটা কি সেই ‘সত্য’ প্রমাণ করার এক মাত্র জুৎসই মঞ্চ ছিল?

অধীর চৌধুরী, আবদুল মান্নানরাই বা কেন পারলেন না পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে? এক জন সংগঠনের দায়িত্বে। অন্য জন পরিষদীয় দলের দায়িত্বে। অর্থাৎ তাঁরা নেতৃত্বে, অভিভাবকের অবস্থানে। দলকে আগলে রাখার দায় তাঁদের। অবাধ্যতা, শৃঙ্খলাহীনতা, দ্রোহভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায় তাঁদের। কেউ কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করলে মার মার রবে পাল্টা ধেয়ে যাওয়া মানায় না তাঁদের। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে মোকাবিলার কৌশলও যে ভিন্ন হওয়া দরকার, সেই বোধটা জরুরি।

অধীর-মান্নান দীর্ঘ দিনের রাজনীতিক। এটুকু রাজনৈতিক বোধ তাঁদের নেই, মানতে পারছি না। আসলে সদিচ্ছাটা নেই। মানস ভুঁইয়ার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা সত্য। জাতীয় স্তরের নির্দেশ আসতেই মেরামতি বৈঠকে বসতে সকলে প্রস্তুত। এই বৈঠকটা আগেই যদি নিজেরা সেরে ফেলতেন, তা হলে বঙ্গ রাজনীতির রঙ্গ মঞ্চে আপনাদের কুৎসিত ঘরোয়া কোন্দলটার এমন ফলাও প্রদর্শনী হত না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের দলকে সাইনবোর্ড নামে ডাকতেই ভালবাসেন। অধীর-মান্নান-মানসরা এখনই সম্বিৎ ফিরে না পেলে, সে নামকরণ সার্থকতা পাবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pradesh Congress Anjan Bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE