দুই কিশোরী এবং দুই বালক। ফ্যালফ্যাল করে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে তারা। জানে না, ঠিক কোথায় নিরাপদ আশ্রয় অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। বুধবার বিকেলে পাভলভ মানসিক হাসপাতাল চত্বরে ওই চারজনকে নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। জেলা লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির নির্দেশে মুর্শিদাবাদ থেকে ব্যাহতবুদ্ধি (মেন্টালি রিটার্ডেড) ওই চারজনকে ভর্তি করতে এসেছিলেন সংশ্লিষ্ট দফতরের এক প্রতিনিধি। চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য তাদের মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়ে কর্তৃপক্ষের চিঠিও ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু হাসপাতাল সুপার জানিয়ে দেন, কোনও ভাবেই মানসিক রোগীদের সঙ্গে ব্যাহতবুদ্ধির কাউকে রাখা সম্ভব নয়। নয়া মানসিক স্বাস্থ্য আইনেও সে কথা স্পষ্ট লেখা রয়েছে।
রাতে ওই চার জন আবার ফিরে যায় মুর্শিদাবাদে। কিন্তু এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে ফের তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, মানসিক হাসপাতাল তো মানসিক রোগীদের জন্য। সেখানে কেন বার বার ব্যাহতবুদ্ধির মানুষকে পাঠানো হবে? এতে এক দিকে যেমন মনোরোগীদের জন্য বরাদ্দ শয্যা কমছে, তেমনই অন্য দিকে থাকছে ‘মেন্টালি রিটার্ডেড’দের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার প্রসঙ্গটিও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে রাজ্যের মানসিক হাসপাতালগুলিতে যত রোগী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ব্যাহতবুদ্ধি। চিকিৎসকেরা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীনদের সঙ্গে একই ছাদের তলায় ব্যাহতবুদ্ধিদের রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। দুটি সমস্যা যেহেতু চরিত্রগত দিক থেকে আলাদা, তাই তাঁদের এক সঙ্গে রাখা ব্যাহতবুদ্ধিদের মানবাধিকার অস্বীকার করা। যদিও রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, ব্যাহতবুদ্ধিদের জন্য সরকারি হোম এই মুহূর্তে মাত্র দুটি। বস্তুত, ব্যাহতবুদ্ধিদের পুনর্বাসনের জন্য আলাদা করে ভাবনাই নেই।
আর সেই সুযোগেই অহরহ মানসিক হাসপাতালগুলিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ব্যাহতবুদ্ধিদের। পাভলভের সুপারের প্রতিবাদ এ ক্ষেত্রে অন্য হাসপাতালগুলিকেও উৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ এ দিন জানান, তাঁদের হাসপাতালে ৬২০ জন রোগীর মধ্যে অন্তত ৫০ জন এখন ব্যাহতবুদ্ধি। তিনি বলেন, ‘‘বহু সময়ে মানসিক রোগীরা উত্তেজিত হয়ে ব্যাহতবুদ্ধিদের মারধর শুরু করেন। ব্যাহতবুদ্ধির মানুষ বাধাও দিতে পারেন না। এতে বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেতে পারে।’’ গণেশবাবুর কথায়, ‘‘ব্যাহতবুদ্ধিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু এখানে
ওঁদের চিকিৎসা হয় না। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার আর মাঝেমধ্যে অন্য মানসিক রোগীদের মারধর, এই নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়।’’
মনোরোগ চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সমাজদার জানান, ব্যাহতবুদ্ধিদের জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের গঠনের সমস্যা থাকে। যার জেরে তাঁদের বুদ্ধি এবং আবেগের বিকাশ ঘটে না। আর মানসিক রোগীদের মস্তিষ্কের জন্মগত সমস্যা থাকে না। মস্তিষ্ক সাময়িকভাবে বেতালে কাজ করতে থাকে। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাহতবুদ্ধিদের দেখভালের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার, যা মানসিক হাসপাতালের কর্মীদের নেই। উল্টে মানসিক রোগীদের হাতে ব্যাহতবুদ্ধিদের নিগৃহীত হওয়ার ঝুঁকি প্রতি মুহূর্তে।’’
তবে কেন বার বার এই রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে মানসিক হাসপাতালে? আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্য দফতরের অধীন। দফতরের তরফে নির্দিষ্টভাবে এই ধরনের ঘটনা লিখিতভাবে জানানো হলে লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সঙ্গে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy