Advertisement
E-Paper

হারের দায় এক জনের কেন, প্রশ্ন তৃণমূলের বৈঠকে

বিপুল সাফল্যের বাজারেও নদিয়া জেলায় তুলনামূলক ভাবে খারাপ ফল হয়েছে শাসক দলের। ফল খারাপ নিয়ে দলীয় পর্যালোচনা বৈঠকে এ বার তৃণমূলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৯:১০

বিপুল সাফল্যের বাজারেও নদিয়া জেলায় তুলনামূলক ভাবে খারাপ ফল হয়েছে শাসক দলের। ফল খারাপ নিয়ে দলীয় পর্যালোচনা বৈঠকে এ বার তৃণমূলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল।

এ বার ভোটে নদিয়ায় তৃণমূলের চার বিধায়ক হেরে গিয়েছেন। তার পরেই দলের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। ভেসে উঠেছে অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব। জেলায় দলের খারাপ ফলের জন্য মূলত দায়ী করা হয়েছে নদিয়ার জেলা সভাধিপতি বাণীকুমার রায়কে। স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে, ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই বাণীবাবুকে জেলা সভাধিপতির পদ থেকে অপসারিত করার নির্দেশ জারি করেছেন। কিন্তু নদিয়ার ফল নিয়ে শুক্রবার দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় কয়েক জন বিধায়ক এবং নেতাদের একাংশ স্পষ্ট মত দিয়েছেন যে, খারাপ ফলের জন্য একা বাণীবাবুকে দায়ী করা ঠিক নয়। প্রার্থী এবং সংগঠনের স্থানীয় নেতৃত্বেও ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না।

বিধানসভায় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কক্ষেই এ দিন নদিয়া নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন। পার্থবাবু ছাড়া দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী বা সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ও ছিলেন। বৈঠকের পরে পার্থ ও মুকুল দু’জনেই দাবি করেন, ১৮ জুন নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় কর্মশালার প্রস্তুতি নিয়েই বৈঠকে কথা হয়েছে। অন্য কোনও বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তবে দলীয় সূত্রের খবর, প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে ভোটের ফল নিয়েই জেলার নেতারা মতামত দিয়েছেন। আবার বৈঠকের পরে ঘরোয়া আলোচনায় নেতাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, দলনেত্রী যখন বাণীবাবুকে সরিয়ে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ দীপক বসুকে নতুন সভাধিপতি করার নির্দেশ দিয়েছেন, তখন ফের পর্যালোচনা বৈঠক হল কেন? তা হলে কি বাণীবাবুকে পুনর্নিয়োগ করা হবে? নাকি বাণীবাবুকে বিশেষ কোনও পদে পুনর্বাসন দেওয়া হবে?

তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী ১৪ জুন নদিয়ায় জেলা পরিষদের নতুন সভাধিপতি নির্বাচন হবে। দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যেই বাণীবাবু সভাধিপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন প্রেসিডেন্সি কমিশনারের কাছে। তাঁর জায়গায় নতুন কাউকে নিয়োগ করলে তাঁকে জেলা পরিষদের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। ফলে, দীপকবাবুকে জেলা সভাধিপতি হতে গেলে ভোটে জয়ী হতে হবে। কিন্তু দলীয় সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্ব নদিয়ায় দলের নেতাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন, কে জেলা পরিষদ সভাধিপতির পদপ্রার্থী হচ্ছেন, তাঁর নাম ১৪ জুনের আগে জানানো হবে। ভোটের আগে মুখবন্ধ খামে তাঁর নাম রাজ্য নেতৃত্ব জেলায় পাঠাবেন। এই সিদ্ধান্তের জেরেই জেলা নেতৃত্বের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘দীপকবাবুই যে সভাধিপতি হচ্ছেন, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।’’

ভোটের ফল প্রকাশের পরেই বাণীবাবুর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছিলেন জেলার পরাজিত তিন প্রার্থী। ফল প্রকাশের পর দিনই কালীঘাটে জয়ী বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে মমতাও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, অন্তর্ঘাতের কারণে বাণীবাবুকে সরতে হবে। এর পরে তিনি পদত্যাগ করেন। বাণীবাবু অবশ্য এ দিনের বৈঠকে জানিয়েছেন, ভোটে দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে তিনি তাঁর সাধ্যমতোই চেষ্টা করেছিলেন। ফল আশানুরুপ না হওয়ার পিছনে তাঁর কোন ভূমিকা আছে বলে তিনি মনে করেন না।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে পরাজিত বিধায়কদের কেউ কেউ বাণীবাবুর নাম না করে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছেন। তবে জেলা নেতা ও বিধায়কদের কয়েক জন বাণীবাবুর নেতৃত্বে জেলা পরিষদের সাফল্যের কথাও বলেছেন। পাশপাশি অজয় দে, সমীর পোদ্দারের মতো নেতারা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, দলীয় প্রার্থীর হারের জন্য একক ভাবে কাউকে দায়ী করা ঠিক নয়। নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ থেকে শুরু করে নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বৈঠকে সব কিছু ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। এমনকী, জেলা সভাপতি তথা তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্তও বৈঠকে দাবি করেন, চারটি আসনে পরাজয়ের একমাত্র কারণ অন্তর্ঘাত নয়। অন্যান্য কারণও আছে। বিজেপির ভোট কমে গিয়ে তার একটা অংশ জোটের বাক্সে পড়াকে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

TMC meeting responsibility
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy