Advertisement
E-Paper

কেন কিছু জেলা বারবারই মেধা তালিকার নীচে, প্রশ্ন

২০১৪-র প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় এ বারেও একই জায়গায়। গত বারের তালিকায় শেষ দুই ২০১৫-তেও একই ঠাঁইয়ে অনড়। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারের নিরিখে গত বছর এবং এ বারের জেলাওয়াড়ি ফলের তুলনায় মিলেছে এ ছবি। পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা তালিকার শীর্ষে। উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়ি একেবারে নীচের দুই ধাপে। শেষের দিক থেকে তৃতীয় নতুন জেলা আলিপুরদুয়ার। তার ঠিক উপরে রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর, পুরুলিয়া এবং বীরভূম। ওই তিন জেলা গতবারের তালিকাতে প্রায় একই জায়গায় ছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:০৭
মাধ্যমিকে ৬৮২ পেয়ে সম্ভাব্য তৃতীয় হল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট হাইস্কুলের ছাত্র শুভায়ন তালুকদার। ছবিতে বন্ধুদের সঙ্গে শুভায়ন (ডান দিকে)। খবর কুড়ির পাতায়। শুক্রবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

মাধ্যমিকে ৬৮২ পেয়ে সম্ভাব্য তৃতীয় হল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট হাইস্কুলের ছাত্র শুভায়ন তালুকদার। ছবিতে বন্ধুদের সঙ্গে শুভায়ন (ডান দিকে)। খবর কুড়ির পাতায়। শুক্রবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

২০১৪-র প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় এ বারেও একই জায়গায়। গত বারের তালিকায় শেষ দুই ২০১৫-তেও একই ঠাঁইয়ে অনড়। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারের নিরিখে গত বছর এবং এ বারের জেলাওয়াড়ি ফলের তুলনায় মিলেছে এ ছবি। পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা তালিকার শীর্ষে। উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়ি একেবারে নীচের দুই ধাপে। শেষের দিক থেকে তৃতীয় নতুন জেলা আলিপুরদুয়ার। তার ঠিক উপরে রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর, পুরুলিয়া এবং বীরভূম। ওই তিন জেলা গতবারের তালিকাতে প্রায় একই জায়গায় ছিল।

শুক্রবার বিধানসভায় বাজেট-ভাষণে জেলার পরীক্ষার্থীদের ভাল ফলের কথা উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনের শেষে জনতার চোখেও মাধ্যমিকের ফল ‘ধারাবাহিক’ই ঠেকছে। কিন্তু তার পরেও কিছু জেলার ফল ধারাবাহিক ভাবে নীচের সারিতে থাকছে কেন তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি।

মধ্যশিক্ষা পর্যদ গত দু’বারে পাশের হারে নিজের রেকর্ড ভেঙেছে। এ বারেও সেই ধারাবাহিকতা অক্ষত। গত বার ছিল ৮২.২৪ শতাংশ। এ বার ৮২.৬৬ শতাংশ। পাশের হারের নিরিখে গত বারের ‘টপার’ পূর্ব মেদিনীপুর পেয়েছিল ৯৫.০৪ শতাংশে। এ বার সামান্য কমে তা দাঁড়িয়েছে ৯৪.৭০ শতাংশে। কলকাতা ৯০.৮৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯১.৪১ শতাংশে। এ বার ৯০.৩১ শতাংশ পাশ করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে। গত বার তা ছিল ৯০.০৬ শতাংশ।

মাধ্যমিকের ফলে একাধিকবার শীর্ষস্থান (এ বারও) ও মেধাতালিকায় বহু কৃতীর সম্মান পাওয়া জেলা বাঁকুড়া পাশের হারের নিরিখে গত বার ছিল একাদশ (৭৬.৪৮) স্থানে। এ বারের তালিকাতেও তারা সেখানেই। যদিও রাজ্যে সার্বিক পাশের হারের চেয়ে বাঁকুড়ার পাশের হার (৭৬.৫৮) কমে যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ জেলার শিক্ষামহলে।

তালিকার শেষ দিকের জেলাগুলির মধ্যে গতবারের তুলনায় উত্থান কিছুটা হয়েছে বীরভূমের। গত বার শেষের দিক থেকে তৃতীয় (৬৭.৮২)। এ বার শেষের দিক থেকে ষষ্ঠ (৭১.৭৪)। গত বার শেষের দিক থেকে পঞ্চম (৭১.৮৩) পুরুলিয়া এ বারও তাই (৭১.৫৫)। গত বার শেষ থেকে চতুর্থ (৭০.২৯) দক্ষিণ দিনাজপুরও চতুর্থ (৭০.৬৬) এ বার। তবে সেখানে পাশের হার বেড়েছে।

গত দু’বারই তালিকার শেষ দুই ধাপে থাকা উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়িতে আবার পাশের হারও কমেছে। উত্তর দিনাজপুরে গত বার পাশের হার ছিল ৬৭.৭১ শতাংশ। এ বার তা কমে হয়েছে ৬৬.৪৬ শতাংশ। সেখানে ৩৭,৮০২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে। ছাত্রীদের পাশের হারও কমেছে। গত বছর তা ছিল ৬১.১৭ শতাংশ। এ বছর ৫৯.১১ শতাংশ।

এই ফলের কারণ কী? জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নারায়ণ সরকার বলেন, ‘‘কিছুই বলতে পারব না। কারণ, পর্ষদ আমাদের পাশের হারের বিষয়ে কিছু জানায় না।’’ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক আধিকারিক প্রদীপ বিশ্বাসও বলেন, ‘‘কারণটা এখনই বলা সম্ভব নয়। পর্ষদ বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করবে।’’ তবে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা জানাচ্ছেন, গত বারের তুলনায় এ বার জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে বেশি সংখ্যক ছাত্রী। ১,৩৬৩ জন। শিক্ষক নেতাদের অনুমান, পারিবারিক ঔদাসীন্য বা অসহযোগিতা, সংসারের কাজকর্মের চাপ সামলে প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্রীদের অনেকে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। এই ছাত্রীদের একটা বড় অংশ অসফল হওয়াতেই জেলায় এ বছর সার্বিক ও ছাত্রীদের পাশের হার কমেছে। তবে মেয়েরা যে বেশি পরিমাণে পড়াশোনায় আগ্রহী হচ্ছে— সে তথ্য তুলে ধরে আশাবাদী হচ্ছেন তাঁরা।

গত বার অবিভক্ত জলপাইগুড়িতে পাশের হার ছিল ৬৭.১০ শতাংশ। এ বার তা দাঁড়িয়েছে ৬৫.২৭-এ। লাগোয়া আলিপুরদুয়ার জেলায় পাশের হার ৭০.৩৮ শতাংশ। পর্ষদের উত্তরবঙ্গের কর্তা প্রদীপ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘জলপাইগুড়ি জেলা ভাগের ফলে প্রায় দুই শতাংশ কম ছাত্রছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে মনে হচ্ছে। কিন্তু আলিপুরদুয়ারের সঙ্গে ফলাফল জুড়ে দিলে স্পষ্ট হবে, গত বছরের তুলনায় ভাল ফল হয়েছে।’’ চা বলয়ের স্কুলগুলির ধারাবাহিক খারাপ ফলও সার্বিক পাশের হারকে প্রভাবিত করেছে বলে ধারণা পর্ষদের কর্তাদের। তবে জেলার শিক্ষকদের একটা বড় অংশ তা মানছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আলিপুরদুয়ারেও তো চা বলয় রয়েছে। সেখানে তা হলে পাশের হার ৭০ শতাংশের বেশি হল কী করে?’’

জেলাগুলির ধারাবাহিক খারাপ ফল ভাবাচ্ছে শিক্ষাবিদদেরও। ‘ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতা’র অধিকর্তা অচিন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন কিছু জেলা কেবলই নীচের দিকে আসছে, সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। গ্রামীণ এলাকাগুলিতে শিক্ষকের ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এ রাজ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ পড়ুয়া প্রাইভেট টিউশন নেয়। দরিদ্র জেলাগুলিতে টিউশনের মানও কি তাহলে খারাপ হচ্ছে?’’ অচিনবাবুর মতে, স্কুলের মানের প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হলেও, একমাত্র বিষয় নয়। কারণ, স্কুলের বাইরেও পড়াশোনার জন্য কিছু কিছু জোগান দিতে হয়, যার খরচ জোটাতে হয় পরিবারকেই। দরিদ্র এলাকাগুলিতে ফল খারাপ হওয়ার এটাও কারণ হতে পারে।

জেলায় প্রাইভেট টিউশনের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি শিক্ষাবিদ মর্মর মুখোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যে জায়গার স্কুলে সরকারের নজরদারি কম, সেখানে পরীক্ষার ফল আশানুরূপ না হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর কথায়, ‘‘মানতেই হবে, আমাদের দেশে প্রশাসন মূলত শহরের জন্য। আর প্রশাসনের প্রধান দফতর থেকে যত দূরে যাওয়া যায়, প্রশাসনের সুফলও তত কম মেলে। উত্তরের জেলাগুলির সমস্যা সেটাই।’’ কোন জেলার কোন ব্লক বেশি পিছিয়ে পড়ছে, তা চিহ্নিত করে সেখানকার সমস্যা বুঝে ব্যবস্থা করা ছাড়া উপায় নেই বলে মত তাঁর।

madhyamik result school mamata bandopadhyay bankura north bengal jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy