Advertisement
১৮ মে ২০২৪

শীতের ব্যাটে ছক্কারই আশ্বাস

ভোরে বিছানা ছাড়তেই হি-হি করে কেঁপে উঠলেন বছর তিরিশের শমীক মুখোপাধ্যায়। আর সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদনি চকে মেট্রো থেকে নেমে বেসরকারি সংস্থার কর্মী মাঝবয়সি রৌনক ঘোষ অনুজপ্রতিম সহকর্মীকে বললেন, ‘‘বুঝলে ভাই, ঠান্ডার যা মেজাজ, মোটা সোয়েটারটা গায়ে চাপিয়েই নিলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

ভোরে বিছানা ছাড়তেই হি-হি করে কেঁপে উঠলেন বছর তিরিশের শমীক মুখোপাধ্যায়। আর সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদনি চকে মেট্রো থেকে নেমে বেসরকারি সংস্থার কর্মী মাঝবয়সি রৌনক ঘোষ অনুজপ্রতিম সহকর্মীকে বললেন, ‘‘বুঝলে ভাই, ঠান্ডার যা মেজাজ, মোটা সোয়েটারটা গায়ে চাপিয়েই নিলাম।’’ সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরোনোর মুখে কান-মাথা মাফলারে মুড়ে নিলেন শীতকাতুরে রৌনকবাবু।

সাত দিনেই ভোল পাল্টে এবং কার্যত ভেল্কি দেখিয়ে দক্ষিণবঙ্গে জাঁকিয়ে বসছে শীত। ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি বেশি। উত্তুরে হাওয়া তেমন ছিলই না। শুক্রবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৭ ডিগ্রি, যা কিনা এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি কম। জোরালো উত্তুরে হাওয়ার দাপটে জেলাগুলিতে ঠান্ডার প্রকোপ আরও বেশি। শ্রীনিকেতনে কার্যত শৈত্যপ্রবাহ চলছে। পুরুলিয়া, আসানসোলেও রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে।

আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রির আশপাশে হামেশাই থাকে। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছিল! গত এক দশকে সেটাই সর্বনিম্ন। ‘‘নানান বাধা কাটিয়ে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এসে শীত জাঁকিয়ে বসছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে,’’ বলেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা।

উত্তুরে হাওয়ার জেরে নভেম্বর থেকেই পারদ নামছিল। শীতের নির্দিষ্ট নির্ঘণ্ট নেই। নভেম্বরে পারদ-পতন দেখে আবহবিদদের কেউ কেউ মনে করেছিলেন, ডিসেম্বরের গোড়াতেই শীত থিতু হবে। কিন্তু নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে নিম্নচাপ এবং জোড়া ঘূর্ণিঝড়ে আটকে গিয়েছিল উত্তুরে হাওয়ার পথ। রবিবার ঘূর্ণিঝড় ভারদা চেন্নাইয়ের দিকে বাঁক নেওয়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে উত্তুরে হাওয়ার পথ খুলে গিয়েছিল। ‘‘এ বার যে পারদ তরতরিয়ে নামবে, তা স্পষ্ট হয়ে যায় তখনই,’’ বলেন এক আবহবিদ।

গত এক দশকে অন্তত ছ’বার ডিসেম্বরের তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি বা তার নীচে নেমেছে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। রাতের তাপমাত্রা সব থেকে বেশি নেমেছিল ১৯৬৬-তে। সে-বার ২২ ডিসেম্বর মহানগরের পারদ নেমে গিয়েছিল ৭.২ ডিগ্রিতে। অনেকেরই প্রশ্ন, ততটা যদি না-ও হয়, এ বারের ডিসেম্বর কি অন্তত ১১ ডিগ্রির কোঠা কি ছুঁতে পারবে?

সদুত্তর নেই আবহবিদদের কাছে। বরং আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, কয়েক দিনের মধ্যে উত্তুরে হাওয়ার জোর কিছুটা কমতে পারে। সামান্য বাড়তে পারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ‘‘গোটা শীতকাল জুড়েই পারদের এমন ওঠানামা চলে। তবে শীত একেবারে উধাও হওয়ার আশঙ্কা নেই,’’ আশ্বাস আবহ-অধিকর্তার।

যেখানে পারদ

কোথায় কত*

• শ্রীনিকেতন ৮.৪ (-৫)

•আসানসোল ৯.৫ (-৪)

•পুরুলিয়া ১০.১ (-৩)

•বহরমপুর ১০.২ (-৪)

•কৃষ্ণনগর ১০.৬ (-২)

•দমদম ১১.০ (-৩)

•কলকাতা ১২.৭ (-২)

*সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বন্ধনীতে স্বাভাবিকের কত কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Winter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE